স্বাস্থ্য সচেতনরা ঘি খাবেন, না কি অলিভ তেলের রান্না খাবেন, জেনে নিন। ছবি: ফ্রিপিক।
দেশি ঘিয়ে রান্না করা ভাল, না কি অলিভ তেলে? স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজনেরা এই প্রশ্নই করবেন। এখন ভারতীয় রান্নায় সর্ষের তেল, সাদা তেলের পাশাপাশি অলিভ তেলও দিব্যি জায়গা করে নিয়েছে। যাঁরা বিশেষ কিছু ডায়েট মানছেন, তাঁদের অলিভ তেলে স্যতে করে খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা। আবার এখন ঘি কফি বা ঘি চায়ের পুষ্টিগুণ নিয়েও বেশ চর্চা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, সকালে উঠে এক চামচ ঘি খাওয়া বা ঘি দিয়ে রান্না করলে নাকি উপকার বেশি হবে। তা হলে কোনটি স্বাস্থ্যের জন্য ভাল?
ফিটনেস কোচ প্রিয়ঙ্ক মেহতা তাঁর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে ঘি ভাল না অলিভ তেল ভাল— এই নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন। প্রিয়ঙ্কের মতে, উচ্চ তাপমাত্রায় কিছু ভাজাভুজি বা রান্না করতে হলে তার জন্য দেশি ঘি ভাল। আর কম আঁচে হালকা স্যতে করতে হলে তার জন্য অলিভ তেল স্বাস্থ্যকর। হার্টের রোগীদের জন্য অলিভ তেলই ভাল। আবার বনস্পতির থেকে ঘি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। কারণ বনস্পতিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি, যা হার্টের জন্য ক্ষতিকর।
এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর মত, “ভারতীয় রান্নায় ঘিয়ের ব্যবহারই বেশি হয়। অলিভ তেলে লুচি ভাজতে গেলেই বিপদ। কারণ লুচি ভাজার জন্য যে উচ্চ তাপমাত্রা লাগে, তাতে অলিভ তেলকে ফোটালে তেলের পুষ্টিকর উপাদান ভেঙে গিয়ে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি করবে। আবার ডায়েটের জন্য যাঁরা সব্জি হালকা স্যতে করে খান, তাঁদের জন্য অলিভ তেলই ঠিক আছে।”
শম্পার কথায়, এক চামচ ঘিয়ের মধ্যে থাকা ১৫ গ্রাম ফ্যাটের মধ্যে ৯ গ্রাম স্যাচুরেটেড, তাই অঙ্কের হিসেব অনুযায়ী, দিনে দু’চামচ ঘি খাওয়া যেতেই পারে। তবে তার বেশি নয়। এক চামচ ঘি থেকে যে ৪৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল পাওয়া যায়, তা-ও শরীরের দৈনিক চাহিদার মাত্র ১৫ শতাংশ। ফলে ঘি মানেই যে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক, এমন ভাবার কোনও কারণই নেই। ঘি-তে আছে কনজুগেটেড লিনোলেইক অ্যাসিড। ডায়াবিটিস ঠেকানোর পাশাপাশি ওজন কম রাখতেও সাহায্য করে এই অ্যাসিড। ক্যানসার ও ইস্কিমিক হৃদ্রোগ প্রতিরোধেও ঘি সাহায্য করে। তবে গরুর দুধের ঘি খেতে হবে, মোযের দুধের নয়। মোষের দুধের ঘি-তে বেশিমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।
ঘিয়ের স্মোক পয়েন্ট ৪৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ২৫২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। অর্থাৎ রান্না করার সময় ঘিয়ের রাসায়নিক গঠন চট করে ভেঙে গিয়ে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি হয় না। রান্নার সময়ে ঘিয়ে থাকা ভিটামিনগুলি, যেমন ভিটামিন এ, ডি, ই, কে খাবারে মিশে যায়। ফলে খাবারের পুষ্টিগুণও বাড়ে। তবে ঘি-ও কিন্তু পরিমিত পরিমাণেই খেতে হবে।