Ganglion Cyst

গ্যাংলিয়ন সিস্ট নয় উদ্বেগের

কেন হয় গ্যাংলিয়ন সিস্ট? এই ধরনের সিস্ট চিনবেন কী ভাবে? রইল বিশদে

Advertisement

শ্রেয়া ঠাকুর

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ ০৭:১৫
Share:

কয়েক দিন ধরেই মনটা ভাল নেই বৃন্দার। কবজির উপরে একটা ছোট সিস্ট, হাতটা ভাঁজ করলে ভাল বোঝা যাচ্ছে। ব্যথা নেই, কিন্তু উপবৃদ্ধি বা সিস্ট ঘেঁষা ব্যাপার দেখলেই কেমন যেন উদ্বেগ হতে থাকে। তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে গিয়ে সে জানতে পারল, জিনিসটি গ্যাংলিয়ন সিস্ট। সিস্টের নানা রকমফেরের মধ্যে এই সিস্টটি একেবারেই নির্দোষ, যাকে বলে বিনাইন।

Advertisement

গ্যাংলিয়ন সিস্ট কাকে বলে?

এই প্রসঙ্গে কথা বলা গেল অর্থোপেডিক সার্জন ডা. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বললেন, “হাত-পায়ের জয়েন্ট কিংবা টেন্ডন সংলগ্ন অঞ্চলে গোলাকার, তরল-পূর্ণ উপবৃদ্ধিকে বলা হয় গ্যাংলিয়ন সিস্ট। সচরাচর কবজি, কনুই বা আঙুলের গাঁটে দেখা যায় সিস্টটি। কখনও কখনও গোড়ালি বা হাঁটুতেও হতে পারে। ভিতরের তরলটি সাইনোভিয়াল ফ্লুইডই হয় সাধারণত।”

Advertisement

এই সিস্টটি বিভিন্ন আকারের হতে পারে, ছোট্ট মার্বেলের গুলি থেকে গলফ বলের আকার পর্যন্ত। কোনও কোনও সিস্ট নরম হয়, কোনও কোনও সিস্টের উপরিভাগ শক্ত হয়। তবে এগুলি একেবারেই বিনাইন। কখনও কখনও কোনও চিকিৎসা ছাড়াই নিজে নিজে মিলিয়ে যায়।

ইতিহাসের পাতা উল্টোলে দেখা যাবে, এই সিস্টের আর এক নাম বাইবেল সিস্ট। মধ্যযুগীয় চিকিৎসা পদ্ধতিতে মোটা বাইবেল দিয়ে এই ধরনের সিস্টের উপরে সজোর আঘাত করতেন ধর্মযাজকেরা। তাতে সিস্টটি ফেটে যেত, সেই থেকেই এই নাম। তবে এই চিকিৎসাপদ্ধতি মধ্যযুগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

কেন হয় গ্যাংলিয়ন সিস্ট?

ঠিক কী কারণে গ্যাংলিয়ন সিস্ট হয়, তা এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে বলা যায়, বারবার ছোট ছোট আঘাত বা রিপিটেটিভ মাইক্রো ট্রমার ফলে জয়েন্টের ভিতর থেকে সাইনোভিয়াল ফ্লুইড বেরিয়ে সিস্টের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় এমনও হয়েছে, পুরনো কোনও চোট সম্পূর্ণ সারেনি, জায়গাটি দুর্বল হয়ে রয়েছে। সেখান থেকে ফ্লুইড জমে সিস্ট তৈরি হয়েছে। অনেক সময় হাত প্রয়োজনের বেশি ব্যবহার করলেও হতে পারে। যদি কেউ বেশি পরিমাণ হাত বা পায়ের ব্যায়াম করেন, সে ক্ষেত্রেও অস্থিসন্ধিতে চোট লাগে। সেখান থেকেও হতে পারে এই সিস্ট। ডা. মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এটাকে বলা চলে জয়েন্টের বা টেন্ডন শিটের হার্নিয়া। অনেক সময়ে হাতের শিরার উপরের যে আবরণ তা পাতলা হয়ে গেলে, সেখানে তরল জমে সিস্টতৈরি হয়।”

কোন কোন জায়গায় হতে পারে এই সিস্ট?

এই ধরনের সিস্ট সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কবজিতে। এ ছাড়া কনুই, আঙুলের গাঁট, পায়ের গোড়ালি, হাঁটুতে ইত্যাদি অস্থিসন্ধিতে এই সিস্ট দেখা যায়। ডা. মুখোপাধ্যায় জানালেন, এগুলি সম্পূর্ণ ব্যথাহীন এবং ক্যানসারের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। সুতরাং উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।

কখনও কি ব্যথা হতে পারে?

ব্যথা সচরাচর দু’টি ক্ষেত্রে হতে পারে। সিস্টের মধ্যে থাকা তরলটিতে কোনও রকম সংক্রমণ হলে ব্যথা হয়, ফুলে লাল হয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়টি হল, সিস্টের আশপাশে যদি কোনও স্নায়ু থাকে, সিস্টটি যদি তাতে চাপ দেয় তা হলে ব্যথা হতে পারে। পায়ে বা গোড়ালির সিস্টে, তা যদি স্নায়ুতে চাপ দেয় সে ক্ষেত্রে অসুবিধের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি অসাড় হয়ে যাওয়া, ব্যথা তো রয়েছেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সিস্ট আকারে বাড়তে পারে, কমতেও পারে।

চিকিৎসা কী?

এই ধরনের সিস্টে সংক্রমণ না ঘটলে সচরাচর কোনও ওষুধ দেওয়া হয় না। যদি আকারে বাড়তে থাকে বা সংক্রমণ বারবার হতে থাকে তবে অস্ত্রোপচার করার কথা ভাবা হয়। কোনও ক্ষেত্রে একটি শলাকা ও সিরিঞ্জের সাহায্যে ভিতরের তরলটি বারও করে দেওয়া হয়। তবে, এই সিস্ট কিন্তু ফিরে আসে। তার কারণ, অস্থিসন্ধি বা টেন্ডনের ওই এলাকাটি তো দুর্বল হয়েই থাকে।

তবে আগে পরীক্ষা করে দেখতে হবে সিস্টটি গ্যাংলিয়ন কি না। কারণ হাতের নীচের দিকে যদি এই ধরনে সিস্ট দেখা যায় তবে তা অনেক ক্ষেত্রেই রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা বোন টিউবারকুলোসিসের কারণেও হতে পারে।

সচরাচর ট্রান্সলুমিনেশন পদ্ধতি, অর্থাৎ সিস্টের উপর উজ্জ্বল আলো ফেলে পরীক্ষা করা হয় সিস্টটি কী ধরনের। যদি তরলপূর্ণ গ্যাংলিয়ন সিস্ট হয় তবে তা বোঝা যায় আলো পড়লে। সে ভাবেই নির্ণয় হয় সিস্টটি কী ধরনের। কখনও কখনও পরীক্ষার জন্য তরলটির নমুনাও সংগ্রহ করেন চিকিৎসক।

গরম সেঁকে কি কাজ হয়?

ডা. মুখোপাধ্যায়ের কথায়, হতেও পারে, না-ও হতে পারে। গরম সেঁকে অনেক সময়ে নিজে নিজেই সিস্টের ভিতরের তরলটি বেরিয়ে যায়। তাই বলা হয়।

তবে, গ্যাংলিয়ন সিস্ট হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়। হাতে বা কবজিতে হলে হাতে একটি রিস্ট ব্রেস পরতে বলা হয়। এতে কবজির নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণে থাকে। একটানা কাজ করার ফাঁকে দশ মিনিট করে বিশ্রাম নিতে বলা হয়। পায়ের ক্ষেত্রে এমন জুতো পরতে বলা হয় যা আরামদায়ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement