ফ্যাটি লিভার থাকলে কী খাবেন, কী খাবেন না? ছবি: শাটারস্টক।
জীবনযাত্রায় ব্যাপক অনিয়মের ফলে বিশ্ব জুড়েই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি এমসের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, প্রায় ৩৮ শতাংশ ভারতীয় নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন। যকৃৎ বা লিভার আমাদের শরীরের ভিতরের অঙ্গগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড়। আমরা যা খাই, তা হজম করতে, খাবার থেকে পাওয়া শক্তি সঞ্চয় করতে আর শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বার করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি লিভারই করে। এই লিভারের কোষে নানা কারণে ফ্যাট জমে। খুব অল্পস্বল্প ফ্যাট জমলে তা স্বাভাবিক। কিন্তু চর্বির পরিমাণ বাড়লেই ঝামেলা। ফ্যাটি লিভার দু’ধরনের হয়— অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজ়িজ় (এএফএলডি) এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজ়িজ় (এনএএফএলডি)।
এখন অল্প বয়সেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এক বার এই রোগে আক্রান্ত হলে খাওয়াদাওয়ায় চলে আসে অনেক রকম বিধিনিষেধ। জেনে নিন, এই রোগে আক্রান্ত হলে কী খাওয়া যাবে আর কী একেবারেই খাওয়া যাবে না।
কী কী খাবেন?
সবুজ শাকসব্জি: সবুজ শাকসব্জির মধ্যে যে পলিফেনল ও নাইট্রেট পাওয়া যায়, তা লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তবে রান্না ও সেদ্ধ করে ফেললে এর মধ্যেকার পলিফেনলের পরিমাণ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কার্যকারিতা অনেকটাই কমে যায়। তাই শসা, লেটুসের মতো কাঁচা শাকসব্জি স্যালাড হিসাবে বেশি করে খেতে পারেন।
ডাল ও বীজজাতীয় খাবার: ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি ইত্যাদি খাবারে স্টার্চ ও ফাইবার ভরপুর মাত্রায় থাকে। এ সব খাবার পরিপাকতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর, একই সঙ্গে এগুলি ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতেও সাহায্য করে।
সবুজ শাকসব্জির মধ্যে যে পলিফেনল ও নাইট্রেট পাওয়া যায়, তা লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ছবি: শাটারস্টক।
সামুদ্রিক মাছ: ইলিশ, পমফ্রেট ইত্যাদি মাছে থাকা ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড উপকারি এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে লিভারে চর্বি ও প্রদাহ কমায়।
লেবু, টক দই: শরীর থেকে যতটা টক্সিন বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। দিনে কয়েক বার গরম জলে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই জল খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
মশলাপাতি: কাঁচা হলুদের কারকিউমিন লিভারের জন্য ভাল। রাতে দুধের মধ্যে এই হলুদ গুলে খেতে পারেন। কাঁচা রসুনও যকৃতের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
কী কী খাবেন না?
চিনি: ফ্যাটি লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু কিন্তু চিনি বা শর্করা। সরাসরি চিনি কিংবা চিনি রয়েছে, এমন যে কোনও খাবার, মিষ্টি, নরম পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়তি চিনিই ট্রাইগ্লিসারাইড হিসেবে যকৃতে জমা হয়।
ভাজাভুজি: উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা যে কোনও খাবার থেকে দূরে থাকুন। চিকেন পকোড়া, ফিশ ফ্রাই, ফুচকা— যে কোনও ধরনের বাইরের খাবার খাওয়ার আগে সতর্ক হোন।
নুন: রান্নায় নুনের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। কাঁচা নুন খাওয়া যাবে না। প্রক্রিয়াজাত খাবারে অনেক বেশি মাত্রায় নুন থাকে । সুতরাং, সেই খাবারও এড়িয়ে চলুন।
শর্করা: সাদা ভাত, ময়দার তৈরি রুটি, পাউরুটি ও পরোটা, নান, নুডলস, পাস্তা ইত্যাদি খাবার লিভারে ফ্যাটের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই এগুলি খাওয়ার মাত্রাও কমিয়ে আনুন।
রেড মিট: রেড মিট, যেমন গরু কিংবা খাসির মাংস খাওয়া কমিয়ে ফেলুন। মুরগির মাংস খেতে পারেন।
মদ: মদ্যপান একেবারে বন্ধ করতে হবে। এই অভ্যাস বাদ না লিলে কিন্তু লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।