হার্টের রোগীরা শীতকালে কেন বাড়তি সতর্কতা মেনে চলবেন? ছবি: শাটারস্টক।
ইদানীং বহু ক্ষেত্রে কম বয়সিদের মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়াচ্ছে হৃদ্রোগ। যাঁদের বয়স চল্লিশের ঘরে, তাঁদের তো বটেই, এমনকি ৩০-এর ঘরেও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। রোজ খবরের শিরোনামে উঠে আসছে ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর। কেউ বাস চালাতে চালাতে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন, কেউ আবার জিমে শরীরচর্চা করতে গিয়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গে গুরুত্ব না দেওয়া বা জীবনযাপনে অনিয়ম যেমন কারণ হতে পারে, তেমনই আবহাওয়ার বদলও হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হঠাৎ তাপমাত্রায় হেরফের হলে তার প্রভাব পড়ে হৃদ্যন্ত্রের উপরেও। বহু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শীতের মরসুমে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ছাড়াও হার্টের অন্যান্য সমস্যায় আক্রান্ত হন অনেকে এবং হার্ট ফেল হয়ে যায় অনেকেরই। শীতকালে রক্তনালিগুলির সঙ্কুচিত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে ‘ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন’। এমনটা হলে কোনও কারণ ছাড়াই রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যায়। হৃদ্যন্ত্র দ্বিগুণ জোরে কাজ করা শুরু করে। বাইরের তাপমাত্রা অনেকটা কমলে, শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে অসুবিধা হয়। এর ফলে হৃদ্যন্ত্রের রক্তনালিগুলির ক্ষতি হয়। তা ছাড়া, শীতে শরীরের অক্সিজেনের প্রয়োজন বেড়়ে যায়। ভ্যাসোকনস্ট্রিকশনের জন্য এমনিতেই রক্তনালি সরু হয়ে যায়। তাই হৃদ্যন্ত্রে কম অক্সিজেন পৌঁছয়। এতেও বাড়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি।
শীতকাল পড়লে সকলেই একটু বেশি ঘরকুনো হয়ে যান। হাঁটাচলা বা শরীরচর্চা প্রতি অনীহা আসে। তার উপর শীতের মরসুমে এক দিন পিকনিক, তার পর দিন বিয়েবাড়ি লেগেই থাকে। খাওয়াদাওয়ায় বেশ অনিয়ম হয়। ফলে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় হৃদ্রোগের ঝুঁকিও। যাঁদের হার্টের সমস্যা রয়েছে কিংবা উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের শীতকালে বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
শীতে হৃদ্যন্ত্র সুস্থ রাখতে কী করবেন?
১) কোনও রকম কো-মর্বিডিটি থাকলে এই মরসুমে শরীরের উপর বিশেষ নজর দিন। কোনও রকম অনিয়ম থেকে দূরে থাকুন।
২) খাওয়াদাওয়ার দিকে বিশেষ নজর রাখুন। শীতকাল মানেই খাওয়াদাওয়ায় দেদার ছুট ভাবার কোনও কারণ নেই। বুঝেশুনে খাওয়াদাওয়া করাই ভাল। খুব বেশি ফ্যাট জাতীয় খাবার, ভাজাভুজি, নোনতা খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩) শীতকালে ব্যায়াম করতে আলস্য আসে, কিন্তু তবুও এই সময়ে শরীরচর্চায় বেশি মনোযোগ দিতে হবে। যোগাসনেও উপকার পাবেন। হাঁটাহাঁটি করা, জিমে যাওয়া ছাড়লে চলবে না।
৪) শরীরে কোনও রকম অস্বস্তি হলেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫) খুব বেশি মদ্যপান ও ধূমপান না করাই ভাল।