ওজন ঝরানোর মূল মন্ত্র কী? ছবি: শাটারস্টক।
অনেকেই মনে করেন, কিছু দিন ভাত, আলু আর বাইরের খাবার খাওয়া বন্ধ করলে, কিংবা ঘুম থেকে উঠে উষ্ণ জলে লেবু, মধু মিশিয়ে খেলেই বোধ হয় দ্রুত মেদ ঝরে। অনেকেই আবার বিজ্ঞাপন দেখে রোগা হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাপ্লিমেন্ট কিনে ফেলেন।
শরীরে শক্তির সঞ্চার হয় খাবার থেকে। খাবারকে ভেঙে শরীর যত তাড়াতাড়ি তাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে, ততই শারীরবৃত্তীয় কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়। কিন্তু শরীর গোটা প্রক্রিয়াটি কত তাড়াতাড়ি করবে, তা নির্ভর করে বিপাকহারের উপর। মেদহীন ছিপছিপে শরীর চাইলে বিপাকহার বাড়িয়ে তোলার দিকে জোর দিতে হবে।
আমরা কখনও জেনেবুঝে, কখনও আবার অজান্তেই এমন কিছু খাবার খেয়ে ফেলি, যাতে ক্যালোরি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। আর যদি সেই পরিমাণ ক্যালোরি খরচ না করা হয়, তবে তা আমাদের শরীরে চর্বি হিসেবে জমতে শুরু করে। শরীরের আনাচকানাচে মেদ জমতে শুরু করে। অনেকে দিনের কোনও এক বেলায় বেশি পরিমাণে খাবার খেয়ে বাকি দিনটা না খেয়েই কাটিয়ে দেন। এতে অনেকের মনে হয় যে কম খাচ্ছেন, ওজন বাড়বে না। অথচ এই ধরনের খাদ্যাভ্যাসের কারণেই শরীরে মেদ জমে।
তবে শুধু মেদ নয়, খাদ্যাভ্যাস ঠিক না রাখলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নানা রোগ। এর মধ্যে ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’ অন্যতম। এতে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ব্লাড সুগার, ইউরিক অ্যাসিড, দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, হাই কোলেস্টেরলের সমস্যা। এর পরেও বাড়তে থাকে হার্ট ও কিডনির সমস্যা। এ ধরনের সমস্যা বাড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ভাজাভুজি বা বেশি ক্যালোরির খাবার ক্রমাগত খেতে থাকলে পরে তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবেই। ছবি:শাটারস্টক।
কোন পথে সমাধান?
অনেকেই সকালের জলখাবারটা খান না, খেলেও সেটা অনেক দেরিতে। কাজের চাপে, বা নিছক হালকা ভাবে এই খাদ্যাভ্যাস তৈরি হলেও, লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি। বিপাকহার কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকবে বদহজমের সমস্যা। কী ভাবে বিপাকহার বাড়ানো যায়?
সময়ে খাওয়া: সারা দিনের তিনটি মূল খাবারের মাঝে যেন খুব বেশি সময়ের ব্যবধান না থাকে। পাশাপাশি, দু’টি মূল খাওয়ার মাঝেও খুব বেশি ক্ষণ পেট ফাঁকা রাখা যাবে না। এতে বাড়তে পারে গ্যাসের সমস্যা। কমে যায় বিপাকহার।
নজরে খাদ্যাভ্যাস: তেল-মশলাদার খাবার কম খেতে হবে। রোজের ডায়েটে কিছুটা প্রোটিনজাতীয় খাবার রাখলে তা পেট ভর্তি রাখতে সাহায্য করবে। চোখের খিদে থেকে ভরা পেটেও খাবেন না। সারা দিনে কাজের মধ্যে থাকলেও মাঝেমাঝে জলে চুমুক দিতে ভুললে চলবে না। এ ছাড়াও চা, জুস, লস্যি দিয়েও জলের ঘাটতি কিছুটা মেটানো যেতে পারে।
লোভে সংযম: ভাজাভুজি বা বেশি ক্যালোরির খাবার ক্রমাগত খেতে থাকলে পরে তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবেই। তবে গড়ে ১৫ দিনে এক বার সে সব চলতেই পারে। ফলে বাইরের খাবার একবারে বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। তবে সেই সব খাবার যেন ঘন ঘন না হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে।
বিকল্প সঙ্গে রাখুন: স্ন্যাক্সের জন্য কিছু পরিমাণে ফল, ওট্সের বিস্কুট, স্যালাড, ড্রাই ফ্রুটস, মাখানা ব্যাগে রাখা যেতে পারে। দইয়ে ভরপুর মাত্রায় প্রোবায়োটিক থাকে, যা বিপাকহার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। নিয়ম করে দইও খেতে হবে।
ব্যায়াম দরকার: শুধু খাদ্যাভাসে নজর রাখলেই হবে না, নিয়মিত শারীরচর্চাও করতে হবে। ব্যায়াম, যোগাসন, সাইক্লিং, হাঁটাহাটি বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধির জন্য সহায়ক।