মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার বাড়াতে প্রত্যেক বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হয়। ছবি: সংগৃহীত
এমন একটা সময় ছিল, যখন যক্ষ্মার নাম শুনলেই আঁতকে উঠতেন মানুষ। যক্ষ্মা রোগীর ধারে কাছে ঘেঁষতেও ভয় পেতেন চার পাশের লোকজন। শুনে অনেকটা দু’বছর আগে কোভিড পরিস্থিতির কথা মনে পড়ে গেল তো? এক সময় যক্ষ্মা নিয়েও ততটাই ভয়াবহ ছিল দেশের পরিস্থিতি। কিন্তু ধীরে ধীরে এই রোগের সঙ্গে লড়তে শিখেছে মানুষ। বর্তমানে চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়েও ফেলা যায় এই রোগ। মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার বাড়াতে প্রত্যেক বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হয়।
যক্ষ্মা একটি ব্যাক্টেরিয়া বাহিত রোগ। মাইক্রোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক ব্যাক্টেরিয়া শ্বাসযন্ত্রকে সংক্রমিত করে ফলে যক্ষ্মা রোগ হয়। করোনাভাইরাসের মতো এই ব্যাক্টেরিয়াও বাতাসে ভেসে বেড়ানো ড্রপলেটের মধ্যে দিয়ে শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে। একজনের হাঁচি-কাশি থেকে দ্রুত এটি অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যক্ষ্মা রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছু ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে, যা অবিলম্বে দূর করা ভীষণ জরুরি।১। যক্ষ্মা কেবল ফুসফুস সংক্রমিত করে: ফুসফুসের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন কিডনি, মস্তিষ্ক, হাড় এবং মেরুদণ্ডেও এই ব্যাক্টেরিয়া প্রভাব ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে লক্ষণ এবং উপসর্গ ভিন্ন হয়। ফুসফুসের বাইরে যে যক্ষ্মা হয় তাকে এক্সট্রাপালমোনারি টিউবারকুলোসিস বলে। ফুসফুস কিংবা শ্বসনালীতে সংক্রমিত হলেই রোগীর শরীর থেকে অন্যের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। শরীরের অন্য অঙ্গে সংক্রমণ হলে সেই রোগী থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই যক্ষ্মা মানেই ছোঁয়াচে রোগ নয়।
প্রতীকী ছবি
২। যক্ষ্মা একটি জিনবাহিত রোগ: যক্ষ্মা কোনও জিনবাহিত রোগ নয়। এই রোগের বিস্তারের ক্ষেত্রেও জিনের কোনও ভূমিকা নেই। এই ব্যাক্টেরিয়া যে কোনও সময় যে কাউকে সংক্রমিত করতে পারে। বাবা-মায়ের যক্ষ্মা হলেই সন্তনের মধ্যে যক্ষ্মা রোগের সম্ভাবনা বাড়ে, এই তথ্যের কোনও রকম সত্যতা খুজে পাওয় যায়নি।
৩। যক্ষ্মার কোনও চিকিৎসা নেই: অনেকেই মনে করেন এই রোগের কোনও চিকিৎসা নেই। এমনটা নয়। প্রাথমিক পর্যায় এই রোগ ধরা পরলে ওষুধের মাধ্যমেই এই রোগের বিরুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি দিন খাশি হলে কিংবা কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোরে অযথা দেরি করবেন না। অবিলম্বে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
৪। বিসিজি-এর টিকা নিলে যক্ষ্মা হবে না: শিশুর জন্মের পরই বিসিজি-এর টিকা দেওয়া হয়। বিসিজি-এর টিকা শিশুদের মধ্যে যক্ষ্মা সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। যদিও, এই টিকা থেকে প্রাপ্তবয়স্করা কতটা সুরক্ষিত তা জানা যায়নি। যে শিশু টিকা নিয়েছে তার বড় বয়সে টিবি হবে না এমন কোনও মানে নেই।
৫। ধূমপান যক্ষ্মা রোগের অন্যতম কারণ: অনেকেই মনে করেন ধূমপান না করলে টিবির ঝুঁকি কম। এমনটা কিন্তু নয়। ধূমপানই যক্ষ্মা হওয়ার একমাত্র কারণ নয়। এইচআইভি, ডায়াবিটিস এবং কিডনি রোগ থাকলেও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।