চোখের ক্লান্তি থেকে রেহাই পাবেন কী করে? ছবি: সংগৃহীত।
অফিসে ল্যাপটপের সামনে বসে কাজ করছেন, অথচ আচমকাই চোখ চুলকোতে শুরু করে দিল, এমনটা অনেকের সঙ্গেই ঘটে। এই সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে অফিসের এসি। শুনতে অবাক লাগলেও চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকলে চোখের গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বাতাসের আর্দ্রতা শুষে নেয়। তাই বদ্ধ ঘরে দীর্ঘ সময় এসি চললে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ একেবারে কমে যেতে পারে। আর বাতাসের আর্দ্রতা কমে গেলে তার প্রভাব পড়ে চোখের উপর। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ইভাপোরেটিভ ড্রাই আইজ়’। চোখের পাতায় থাকে এমন সব গ্রন্থি যে গুলি থেকে জলীয় পদার্থ ক্ষরিত হয়। ক্ষরিত হয় স্নেহপদার্থও। দীর্ঘ সময় ধরে এসিতে থাকলে চোখের পাতায় থাকা এই লিপিড উৎপাদক গ্রন্থিগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রভাব পড়তে পারে অশ্রুগ্রন্থির উপরেও। সব মিলিয়ে চুলকাতে থাকে চোখ। তার উপর দীর্ঘ ক্ষণ ‘স্ক্রিন টাইম’ অর্থাৎ মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়।
কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন যে ‘ড্রাই আইজ়’-এর সমস্যা হচ্ছে?
১) মাঝেমধ্যে চোখের সামনের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া ‘ড্রাই আইজ়’-এর একটি লক্ষণ।
২) কোনও কারণ ছাড়াই চোখ থেকে অনবরত জল পড়ে? এটিও কিন্তু ড্রাই আইজ়ের লক্ষণ হতে পারে। চোখ থেকে জল পড়ার অর্থ হল ‘টিয়ার ফিল্ম’ চোখকে আর্দ্র রাখতে পারছে না। তাই শুষ্ক চোখকে আর্দ্র রাখতে জল উৎপাদন করছে।
৩) চোখে ব্যথা ও ক্লান্তিও কিন্তু এর একটি লক্ষণ। চোখে যখন জল কমে যায়, তখন বার বার পলক ফেলে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। ফলে চোখে একটা ক্লান্তি আসে।
‘ড্রাই আইজ়’-এর সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী কী সুরক্ষা নেবেন?
১) চোখের পাতায় কোনও ধুলোবালি জমতে দেবেন না। ধুলো থেকেই সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সেই কারণে চোখ সব সময়ে পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। বাইরে থেকে ফিরে ভাল করে চোখ ধুয়ে নিতে হবে। চোখে-মুখে জল দেওয়ার আগে ভাল করে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। তবে ঘণ্টায় ঘণ্টায় চোখে জলের ঝাপটা দেওয়ার অভ্যাস খারাপ। দিনে দুই থেকে তিন বারের বেশি জলর ঝাপটা না দেওয়াই ভাল, নইলে চোখের জল ধুয়ে গিয়ে আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
২) কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন? সারা দিন পরে থাকলেও কিন্তু এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, দিনে ১০-১২ ঘণ্টার বেশি লেন্স পরে না থাকাই ভাল।
মাঝেমধ্যে চোখের সামনের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া ‘ড্রাই আইজ়’-এর একটি লক্ষণ। ছবি: সংগৃহীত।
৩) দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের পর্দার দিকে তাকিয়ে না থাকাই ভাল। অফিসে থাকলেও মাঝেমাঝে বিরতি নিন। এতে ভাল থাকবে চোখের স্বাস্থ্য।
৪) সারা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া প্রয়োজন। জল খেলে শরীর আর্দ্র থাকে। এ ছাড়াও তরমুজ, শসা, স্ট্রবেরির মতো জলযুক্ত ফল বেশি করে খান। এতে শরীরে জলের ঘাটতি তৈরি হবে না।
৫) মাঝেমাঝে চোখে গরম ভাব দিতে পারেন। চোখ শুষ্ক হয়ে গেলে কিন্তু এই টোটকা বেশ কাজে দেয়। দিনে দুই থেকে তিন বার চোখে কাপড়ের সেঁক দিতে পারলে চোখের ক্লান্তি দূর হবে, ব্যথাও কমবে আর আরামও পাবেন।