সাম্প্রতিক কালে যে যে ধরনের চিকিৎসার কথা খুব বেশি শোনা যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম ‘স্টেম সেল থেরাপি’। ছবি: প্রতীকী
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বহু কঠিন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস পাচ্ছেন রোগীরা। সাম্প্রতিক কালে যে যে ধরনের চিকিৎসার কথা খুব বেশি শোনা যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম ‘স্টেম সেল থেরাপি’। সহজ ভাষায় বললে সন্তান জন্মানোর পর মায়ের শরীর থেকে যে প্ল্যাসেন্টা বা অমরা বেরিয়ে আসে, তার মধ্যে থাকে ‘স্টেম সেল’। বিজ্ঞানীরা এই স্টেম সেলগুলি ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের কোষ তৈরি করেন। সেই কোষ রোগীর প্রয়োজন অনুসারে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। শরীরের প্রয়োজন বুঝে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন নিঃসরণ করে কোষগুলি। একেই স্টেম সেল থেরাপি বলে। আর এই থেরাপি ব্যবহার করেই বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসা হতে পারে।
১। হাড়ের অসুখ: অস্ত্রোপচারের পরে নিরাময় প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করতে এবং পেশি, টেন্ডন এবং অস্থিসন্ধির সমস্যা কমাতে এই থেরাপি ব্যবহৃত হয়। ফ্যাসিটাইটিস, ফ্রোজেন শোল্ডার, টেনিস এলবো, কারপাল টানেল সিনড্রোম, স্পন্ডিলাইটিস, অস্টিয়োআর্থারাইটিস, অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস, মেরুদণ্ডের সমস্যা এবং স্পন্ডাইলোলিস্থেসিসের মতো বেশ কিছু রোগ নিরাময়ে এখন এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।
২. বিপাক সংক্রান্ত বিভিন্ন অসুখ: ডায়াবিটিস, ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং রক্তে ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার মতো একাধিক সমস্যায় শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এই ধরনের সমস্যা কমাতেও কাজে আসতে পারে স্টেম সেল। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, নিউরাল হেয়ারিং লস, এমটি নোজ সিনড্রোম, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, ব্রঙ্কো ফ্যারঞ্জাইটিস, সাবমিউকাস ফাইব্রোসিস, পোস্ট কোভিড সিনড্রোম, সিকেডি, ফুসফুসের ফাইব্রোসিস, এড, ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স, যক্ষ্মা, গ্যাংগ্রিনের মতো সমস্যাতেও কাজে আসে এই থেরাপি।
৩. স্নায়ুর সমস্যা: স্ট্রোক এবং স্নায়ুরোগের সমস্যার চিকিৎসা বেশ কঠিন। গোটা বিশ্ব জুড়েই বহু মানুষ এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হন। আধুনিক গবেষণা বলছে, স্টেম সেল ঠিকমতো ব্যবহার করা গেলে বহু ক্ষেত্রেই স্নায়ুর সমস্যা কমিয়ে আনা যায়। যে কোনও ধরনের স্নায়ুরোগই ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় করা কঠিন। কাজেই, স্টেম সেল থেরাপির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা একটি দিগন্ত দেখা যেতে পারে।
স্টেম সেলে সারবে অসুখ। ছবি: সংগৃহীত
৪. পেশির রোগ: পেশির সমস্যা ও ‘মাসকুলার ডিস্ট্রোফি’-র চিকিৎসার জন্য স্টেম সেল-ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি একটি বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
৫. ক্যানসার: স্টেম সেল কাজে লাগিয়ে এখন বিশেষ ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি করছেন চিকিৎসকেরা। এই কোষগুলি ক্যানসার কোষকে আক্রমণ করে। বিশেষ করে স্তন ক্যানসার এবং মূত্রাশয়ের ক্যানসারের চিকিৎসায় স্টেম সেল থেরাপি কার্যকর বলে ইঙ্গিত মিলেছে একাধিক গবেষণায়।