স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের মতে, মহিলাদের গড়ে ৫১ বছর বয়সে ঋতুবন্ধ হয়। ছবি: শাটারস্টক
বয়স ৫০ ছুঁইছুঁই হলেই যে বিষয়টি মহিলাদের রাতের ঘুম কাড়ে, তা হল ঋতুবন্ধ বা মেনোপজ়। এর কারণে অনেকে মহিলাই অবসাদে ভোগেন। ঋতুবন্ধ একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যার সম্মুখীন আপনাকে এক দিন না এক দিন হতেই হবে! ঋতুবন্ধ ঠিক কখন হয়? জন্মের সময়ে প্রত্যেক মহিলার ডিম্বাশয় প্রায় ১০ লক্ষ ডিম্বাণু থাকে। ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পর থেকেই শরীর এই ডিম্বাণুগুলিকে এক এক করে ছাড়তে থাকে, বয়স ৩০ পেরোনোর পর সংখ্যাটা কমতে শুরু করে। ৪০-এর পর আরও দ্রুত হারে কমে যেতে থাকে ডিম্বাণুর সংখ্যা। এর সঙ্গে কমে আসে সন্তানধারণের সম্ভাবনাও। ডিম্বাণু নিঃশেষিত হয়ে গেলে ডিম্বাশয়ে আর ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরিত হয় না। তখনই হয় ঋতুবন্ধ। বছর খানেক টানা ঋতুস্রাব না হলে ধরে নিতে হবে যে ঋতুবন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের মতে, মহিলাদের গড়ে ৫১ বছর বয়সে ঋতুবন্ধ হয়। মূলত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যই অধিকাংশ মহিলার ঋতুবন্ধ হয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই ধূমপান, গর্ভনিরোধকের অধিক ব্যবহার, বাড়তি ওজন ঋতুবন্ধ পিছিয়ে যায়।
ঠিক কী কী কারণে পিছিয়ে যেতে পারে ঋতুবন্ধ?
১) জিনগত কারণে ঋতুবন্ধ দেরিতে হয় অনেকের ক্ষেত্রেই। যাঁদের মায়েদের ঋতুবন্ধ দেরিতে হয়েছে, সেই মহিলাদের ক্ষেত্রেও একই সম্ভাবনা থাকে।
২) বাড়তি ওজনের কারণে ঋতুবন্ধ পিছিয়ে যেতে পারে। শরীরে অতিরিক্ত মেদ থাকলে সেই মেদ থেকে ইস্ট্রোজেন তৈরি হয় তাই স্বাভাবিক ভাবেই ঋতুবন্ধ পিছিয়ে যায়।
৩) যাঁদের থাইরয়েডের সমস্যা আছে, তাঁদের ঋতুবন্ধ দেরিতে হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
বেশি বয়সেও যে মহিলারা নিয়মিত সঙ্গম করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও ঋতুবন্ধ দেরিতে হতে পারে। ছবি: শাটারস্টক।
৪) যাঁদের শরীরে ইস্ট্রোজেন উৎপাদনের ক্ষরণ বেশি, তাঁদেরও দেরিতে ঋতুবন্ধ হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে বেশি বার যাঁরা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন, তাঁদের ঋতুবন্ধ দেরিতে হয়েছে।
৫) বেশি বয়সেও যে মহিলারা নিয়মিত সঙ্গম করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও ঋতুবন্ধ দেরিতে হতে পারে।
দেরিতে ঋতুবন্ধ হওয়া কি চিন্তার বিষয়? ঋতুবন্ধ দেরিতে হলে মহিলাদের মূত্রথলি, জরায়ু এবং স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির করা সমীক্ষাও একই কথা বলা হয়েছে। ৫৫ পেরিয়ে গেলেও যদি আপনার ঋতুস্রাব বন্ধ না হয় সে ক্ষেত্রে এক বার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়াই শ্রেয়। শরীরের স্থিতি বুঝে তাঁরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝতে পারবেন আদৌ ক্যানসারের সম্ভাবনা আছে কি না। তবে এ কথাও ঠিক যে দেরিতে ঋতুবন্ধ হলে হৃদ্রোগ ও অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।