সাব-মিউকাস ফাইব্রয়েডের ঋতুস্রাবের সময়ে পেটে তীব্র যন্ত্রণা হয়, অত্যধিক রক্তক্ষরণ হয় এবং অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যাও শুরু হয়। ছবি: শাটারস্টক।
দেরি করে বিয়ে করার পর বহু নারীর ক্ষেত্রে একটা সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। তা হল সন্তানধারণে অসুবিধা। আর এই সমস্যার অন্যতম একটি কারণ হল, জরায়ুতে টিউমার। বিনাইন টিউমারের পোশাকি নাম ফাইব্রয়েডস। সাধারণত ২১ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলাদের জরায়ুতেই এই ধরনের টিউমারের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
মূলত তিনটি জায়গায় ফাইব্রয়েডস তৈরি হতে পারে। প্রথমত, জরায়ুর দেওয়ালের বাইরের দিকে, যাকে সাবসেরাস বলে। দ্বিতীয়ত, জরায়ুর দেওয়ালের মধ্যে, যাকে ইন্ট্রামিউরাল বলে এবং তৃতীয়ত জরায়ুর যে অংশ থেকে ঋতুস্রাব হয়, তাকে বলা হয় সাব-মিউকাস। সাব-মিউকাস ফাইব্রয়েডসেই বেশি মহিলা আক্রান্ত হন। এর ফলে ঋতুস্রাবের সময়ে পেটে তীব্র যন্ত্রণা হয়, অত্যধিক রক্তক্ষরণ হয় এবং অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যাও শুরু হয়। এই টিউমার শরীরে বাসা বাঁধলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
অনিয়মিত ঋতুস্রাব, অত্যধিক রক্তপাত এবং গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দিলেই ফাইব্রয়েডস আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। ছবি: শাটারস্টক।
কী কী উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন?
সাধারণত অনিয়মিত ঋতুস্রাব, অত্যধিক রক্তপাত এবং গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দিলেই ফাইব্রয়েডস আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। এই রোগের আলাদা কোনও লক্ষণ নেই। তবে অনেক সময়ে হঠাৎ পেট ফুলে যাওয়াও ফাইব্রয়েডসের লক্ষণ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৭-৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বার জরায়ুর আকার যেমন হয়, এ ক্ষেত্রেও পেটের আকার তেমনই হয়ে যায়। এ ছাড়া, প্রস্রাবের হার বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাবের সময়ে তীব্র যন্ত্রণা, তলপেটে ব্যথাও এই রোগের উপসর্গ।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
জরায়ুর ফাইব্রয়েডের সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে কয়েকটি ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ থাকলে অসুখের ঝুঁকি বেশি। বাড়িতে মা, মাসি, দিদি-সহ অন্যদের এই সমস্যা থাকলে রোগের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে বেশি। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন মাসিক ঋতুচক্রের সময়ে জরায়ুর লাইনিং অর্থাৎ, আবরণকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে ফাইব্রয়েড তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এই সব স্ত্রী হরমোনই ছোট ফাইব্রয়েড বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। এই কারণেই সন্তানধারণের ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বাড়ায়।
এই রোগ আর কী কী অসুখ ডেকে আনে?
এই রোগে অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে শরীরে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ারও ঝুঁকি বেড়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মহিলাদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকেরও ঝুঁকি বাড়ে। ফাইব্রয়েড হলে কিডনির কার্যকারিতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।