উৎসবের মরসুমে চিন্তা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গি। প্রতীকী ছবি।
পুজোর মধ্যেই অসুর হতে পারে ডেঙ্গি। মঙ্গলবারই স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল, এক দিনে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়েছে হাজার। কিন্তু ডেঙ্গির চোখরাঙানি সত্ত্বেও পুজো পরিক্রমায় খুব একটা ঘাটতি পড়বে, এমন লক্ষণ নেই। তাই কী ভাবে ডেঙ্গিও এড়ানো যাবে আবার ঠাকুর দেখতেও সমস্যা হবে না, তা জানা খুবই জরুরি।
ভোরবেলায় মশারির তলায় ঢুকলেই হবে কি?
মূলত ভোরের দিকে কামড়ালেও অন্য সময় যে এই মশা একেবারেই কামড়াবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। তা ছাড়া শুধু ডেঙ্গি নয়, এই সময়ে বেড়ে যায় মশাবাহিত অন্যান্য রোগও। কাজেই সব সময়েই সতর্ক থাকতে হবে। আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের চিকিৎসক শুভদীপ রক্ষিত।
ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখতে হবে?
চিকিৎসক শুভদীপ রক্ষিতের পরামর্শ, “ঠাকুর দেখতে গেলে হাত-পা ঢাকা পোশাক পরার চেষ্টা করুন। যদি নিতান্তই হাত-পা ঢাকা পোশাক না পরতে চান, তা হলে মাখতে পারেন মশা তাড়ানোর ক্রিম।” তবে এই ধরনের ক্রিম মাখার আগে পরীক্ষা করে নিতে হবে, যে ক্রিম মাখছেন তা চিকিৎসকদের দ্বারা অনুমোদিত কি না, মত তাঁর। চার দিকে অসংখ্য খাবারদাবারের দোকান, অভাব নেই জমা জলেরও। জমা জল মানেই মশার আঁতুড়ঘর। তাই যে যে জায়গায় আবর্জনা জমে আছে, বা ড্রেন রয়েছে সেই সব রাস্তাঘাট এড়িয়ে চলাই ভাল।
জ্বরের প্রাথমিক লক্ষণগুলিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে অ্যাকিউট ফেব্রাইল ইলনেস। প্রতীকী ছবি।
হঠাৎ গা গরম হচ্ছে?
পুজোর সময়ে মেজাজটাও একটু অন্য রকম থাকে। তাই অনেক সময়ে জ্বর হলে তাতে পাত্তা দেন না মানুষ। বেরিয়ে পড়েন উৎসব উপভোগ করতে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এই প্রবণতা খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। শুভদীপ বলেন, “জ্বর হলেই বিশ্রাম নেওয়া, জল খাওয়া আবশ্যিক। জ্বরের প্রাথমিক লক্ষণগুলিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে অ্যাকিউট ফেব্রাইল ইলনেস। দেহে সংক্রমণ দেখা দিলেই প্রস্রাবের সময়ে জ্বালা হওয়া, ডায়েরিয়া, শ্বাসকষ্ট, কাশি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে।”
আমরা সবাই ডাক্তার!
এখন হাতে মোবাইল থাকলেই বিভিন্ন রোগের সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন যে কোনও মানুষ, তবে তাই বলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করাই ভাল। চিকিৎসক বলেন, “অনেকেই মনে করেন ডেঙ্গির উপসর্গ মানেই জ্বর, অস্থিসন্ধির ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা কিংবা দুর্বলতার মতো উপসর্গ। কিন্তু এই রোগের চরিত্র ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে। ত্বকে লাল ছোপ, মাথা ঘোরা, রক্তচাপের সমস্যাও এর উপসর্গ হতে পারে।” ডেঙ্গি কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই ভাল। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হল অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটের পরীক্ষা ও পিসিভি পরীক্ষা। তা ছাড়া জ্বরের পাঁচ দিনের মধ্যে অনেক সময় এনএস১ অ্যান্টিজেন ও পাঁচ দিনের বেশি জ্বর থাকলে আইজিএম ডেঙ্গি পরীক্ষা করতে বলেন চিকিৎসকরা। তবে জ্বর থাকলে শুধু ডেঙ্গি নয়, ম্যালেরিয়া ও রক্তে সংক্রমণের পরীক্ষাও করে দেখে নেওয়া ভাল বলে মত চিকিৎসকের।
কোন কোন লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হতে হবে?
যে যে উপসর্গ দেখে তৎক্ষণাৎ সতর্ক হতে হবে, সেগুলিকে ‘ওয়ার্নিং সাইন’ বলে। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে রক্তপাত, ত্বকের জ্বালা-চুলকানি-ক্ষত, পেট ও বুকে ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা হওয়াই ‘ওয়ার্নিং সাইন’। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর প্রস্রাব কমে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া কিংবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা যায়।
কী করবেন?
প্রথমেই আতঙ্কিত হবেন না। পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক। বলেন, ‘‘কখন কতটা জ্বর আসছে, তা লিখে রাখুন। পর্যাপ্ত জল খান। প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনও জ্বর কমানোর ওষুধ না খাওয়াই ভাল।”
ভুলের ফল হতে পারে মারাত্মক
উৎসবের সময় অনেকেরই ঘরে মন টেকে না। তাই জ্বর কিছুটা কমলেই ফের বেরিয়ে পড়েন। চিকিৎসকের সতর্কবার্তা, “ডেঙ্গিতে অনেক ক্ষেত্রেই দু’-তিন দিন পর জ্বর কমে যায়। কিন্তু তার পরেই শুরু হয় ‘ক্রিটিক্যাল ফেজ’। এই সময়ে রক্তনালির ভেদ্যতা বেড়ে যায়। ফলে রক্তরস শিরা-উপশিরা থেকে বেরিয়ে যায়। পাশাপাশি, ডেঙ্গিতে অনুচক্রিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেঙেও যায়, অস্থিমজ্জা থেকে কমে যায় উৎপাদন।” সব মিলিয়ে খুব অল্প সময়ে ঘোরালো হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি।” তাই জ্বর কমে গেলেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়লে চলবে না। তাতে বড় বিপদ হতে পারে বলে সতর্ক করেন চিকিৎসক।