Elderly care tips

বাড়ির বয়স্ক মানুষটির মনখারাপ? পুজোর আনন্দে শামিল করুন, প্রবীণদের শরীর-মন ঠিক রাখার উপায় জানুন

পরিবারের প্রবীণতম মানুষজনদের মন ভাল রাখা যেমন জরুরি, তেমন তাঁদের শখ পূরণ করাও খুব একটা কঠিন নয়। নিয়ম মেনে চললেই পুজোর কয়েকটি দিন বয়োজ্যেষ্ঠদের মন খুশি রাখতে পারবেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ ১১:০২
Share:

অনিয়ম করতেই চাইবেন বয়স্কেরা, কী ভাবে সুস্থ রাখবেন তাঁদের? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

হাঁটু-কোমরের ব্যথায় নাস্তানাবুদ, এ দিকে প্যান্ডেলে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখার ইচ্ছা ষোলো আনা। কারও বাতের ব্যামো, তো কারও ডায়াবিটিস, কেউ আবার হার্টের সমস্যায় কাবু। তা-ও পুজোর ক’টা দিন নিয়ম মানতে তাঁরা নারাজ। অসুস্থতা সামলেও ভালমন্দ মুখরোচক খেতে চাইছেন কেউ কেউ, আবার কারও ইচ্ছা রাত জেগে ঠাকুর দেখবেন। পরিবারের সঙ্গে কয়েকটি দিন হই-হুল্লোড়ে মাতবেন। পরিবারের প্রবীণতম মানুষজনদের মন ভাল রাখা যেমন জরুরি, তেমন তাঁদের শখ পূরণ করাও খুব একটা কঠিন নয়। নিয়ম মেনে চললেই পুজোর কয়েকটি দিন বয়োজ্যেষ্ঠদের মন খুশি রাখতে পারবেন।

Advertisement

উচ্চ রক্তচাপ, সুগার, হার্টের অসুখ— সব নিয়েও বৃদ্ধ বাবা-মা অথবা ঠাকুমা-দাদুর পুজোটা কী ভাবে আনন্দে কাটবে, সে নিয়ে পরামর্শ দিলেন বার্ধক্য বিজ্ঞান বিশারদ ধীরেশ চৌধুরী। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, “বয়স্কদের নিয়েই বেরোন। এতে তাঁদের মন ভাল থাকবে। কাছাকাছি ঘুরিয়ে আনুন। তবে রাতভর বা খুব বেশি ক্ষণ বাইরে রাখবেন না। ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে চলতে হবে। বয়স্কেরা বাইরে গেলে যেন মাস্ক অবশ্যই পরেন, তা খেয়াল রাখবেন। হার্টের রোগ, ডায়াবিটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে।”

হাঁটার সময়ে ব্যথায় কাবু হলে নিরাপদ দু’-একটি ব্যথার ওষুধ সঙ্গে রাখুন। নিতান্ত দরকার না হলে ওষুধ মানা। পুজোর অঞ্জলি দিতে গিয়ে পাড়ার পুজো বা আবাসনের পুজোর মণ্ডপে বসে থাকা খুব পছন্দ করেন প্রবীণেরা। সেই সুযোগ করে দিন। ধীরেশ বলছেন, ধূপ-ধুনোর ধোঁয়া বা তারস্বরে মাইক বাজলে বয়স্কদের সমস্যা হতে পারে, সে দিকটি খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে পুজো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন। হাঁপানি, সিওপিডি থাকলে ভুলেও বেশি ধোঁয়ার মধ্যে থাকবেন না।

Advertisement

শরীর আর্দ্র রাখতেই হবে প্রবীণদের। কোনও ভাবেই যাতে জলশূন্যতা না দেখা দেয়, তার চেষ্টা করতে হবে। বয়স্কদের বাইরে নিয়ে গেলে সঙ্গে জলের বোতল অবশ্যই রাখুন। বাইরে থেকে কেনা জল, ফলের রস বা শরবত খাওয়াবেন না। এই সময়ে রাস্তার তেলমশলা দেওয়া খাবার খেতেই চাইবেন বয়স্কেরা। কিন্তু সামলে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাড়িতেই মুখরোচক খাবার তৈরি করে দিন। বাইরে কিছু খেলে পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখুন। রাস্তা থেকে কেনা স্যালাড অথবা জাঙ্ক ফুড ভুলেও দেবেন না।

শরীরের পাশাপাশি বয়স্কদের মনের যত্নও নিতে হবে। এই বিষয়ে মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মত, “অনেক পরিবারেই বয়স্করা নিজেদের অবহেলিত মনে করে গৃহবন্দি করে রাখেন। মনোকষ্টেও ভোগেন। এই মানসিক দশা থেকে বার করে আনার দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারের লোকজনদেরই। পাশে থাকা, গল্প করা, পুজোর আনন্দে তাঁদের শামিল করুন, দেখবেন তাঁদের অবসাদ অনেক কেটে গিয়েছে।”

মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, এমন প্রবীণ রোগীর সংখ্যা কম নয়। অনিন্দিতা জানাচ্ছেন, আসলে ষাট-সত্তর বছরের পর থেকে সমস্যাটা শুরু হয়। প্রথমত চাকরি থেকে অবসর, তার পর সংসারে কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়, দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে, শারীরিক রোগভোগ বাড়ে, আর্থিক জোর কমতে থাকে, ছেলেমেয়ে দূরে চলে যায়, ক্রমশ নিকটজনকে হারাতে শুরু করেন... এর সঙ্গে প্রযুক্তিগত দিকেও পিছিয়ে পড়েন। ফলে সমাজে নিজের গ্রহণযোগ্যতা কমতে থাকছে বলে মনে করেন তাঁরা। তা থেকেই একাকিত্ব ও গভীর অবসাদের সৃষ্টি হয়। কথা বলা বন্ধ করে দেন অনেকে। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজন কারও সঙ্গেই যোগাযোগ রাখেন না। এমন হলে বাড়ির প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে সংসারের সব সিদ্ধান্ত নিন। তাঁদের সঙ্গে রোজ অন্তত এক ঘণ্টা ভাল সময় কাটানোর পরামর্শও দিচ্ছেন মনোবিদ। বয়সের থাবা শরীরে তো বসবেই, কিন্তু মনে যেন তা আঁচড় কাটতে না পারে, সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement