দোলন রায়। ছবি: সংগৃহীত
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অভিনেত্রী দোলন রায়। ৩ মে নেটমাধ্যমে নিজের অসুস্থতার কথা জানান অভিনেত্রী। ইদানীং কাজ কমিয়ে দিলেও ‘টুম্পা অটোওয়ালি’ নামক ধারাবাহিকে অন্যতম মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন দোলন। এই ধারাবাহিকের আউটডোর শ্যুট চলছিল। অত্যধিক গরমের কারণেই এমন হয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
অভিনেত্রী হন কিংবা অফিসকর্মী, পেশার তাগিদে বহু মানুষকে ভরদুপুরের গনগনে রোদেও বাইরে থাকতে হয়। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, অসহ্য গরম থেকে এখনই নিস্তার নেই। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলেও তীব্র তাপপ্রবাহে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তাই শরীরে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকেই যায়!
অনেক সময়েই দেখা যায়, পথেই অসুস্থ বোধ করায় কেউ কেউ বসে পড়েন বা অনেক সময়ে জ্ঞানও হারান। কেউ আবার পুরোপুরি জ্ঞান না হারালেও, অতিরিক্ত দুর্বলতার জন্যে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পান না। শরীরে অসম্ভব অস্থিরতা শুরু হয়, অনেকের ক্ষেত্রেই শুরু হয় বমি, খিঁচুনি। মাথা ঘোরানো বা তীব্র মাথা ব্যথাও হিট স্ট্রোকের লক্ষণ। পাশাপাশি ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি জ্বর আসতে পারে।
মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে যে থার্মোস্ট্যাট রয়েছে, তার মাধ্যমেই দেহের তাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। গরম এবং ঠান্ডায় শরীরের তাপমাত্রা কতটা কমবে বা বাড়বে, তা নিয়ন্ত্রণ করে হাইপোথ্যালামাস। প্রচণ্ড গরমে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয়ে যায়, তাতে ঘাম বেরিয়ে শরীরের ভিতরের তাপকে বেরোতে সাহায্য করে। কিন্তু হিট স্ট্রোক হলে বাইরের অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে প্রথমেই বিকল হয় হাইপোথ্যালামাস। তাতে দেহতাপ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়ে ঘাম নিঃসরণও বন্ধ হয়ে যায়। আবার কখনও প্রচণ্ড ঘাম বেরিয়ে শরীরের জলের ঘাটতি হয়ে যায়। দুই ক্ষেত্রেই বাড়ে সান স্ট্রোকের ঝুঁকি।
প্রতীকী ছবি
কলকাতার মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক শুভদীপ রক্ষিতের মতে, ‘‘খুব বেশি দেরি হয়ে গেলে হিটস্ট্রোক কিন্তু প্রাণঘাতীও হতে পারে। রোদে বেরোলে যদি হঠাৎ ক্লান্ত অনুভব করেন, চারপাশে কী ঘটছে তা বুঝে ওঠার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, মাথা ঘোরায়, তা হলে দেরি না করে সরাসরি নিকটবর্তী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে।’’
কাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি?
শুভদীপ বললেন, ‘‘শিশু ও বয়স্কদের হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। তা ছাড়া যাঁরা হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিসের মতো রোগে ভুগছেন, গরমের দিনে বাইরে ররোনোর সময় তাঁদের বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।’’
হিট স্ট্রোক এড়াতে ঠিক কী করণীয়?
চিকিৎসকের পরামর্শ, ‘‘বাইরে বেরোলে রোদচশমা, ছাতা অবশ্যই সঙ্গে নেবেন। সূর্যের আলো সরাসরি গায়ে লাগতে দেবেন না। গা ঢাকা পোশাক পরবেন। হালকা সুতির পোশাক পরুন যাতে ঘাম হলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। চড়া রোদে খুব দরকার না পড়লে, বেরোবেন না। খুব বেশি বদ্ধ জায়গায় না থাকাই শ্রেয়। যদি দেখেন অনেক ঘামছেন, তা হলে ওআরএস জলে গুলে অল্প অল্প করে খেতে থাকুন।’’
কারও কারও মতে, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে কেউ অচেতন হয়ে গেলে অনেক সময়েই রোগীকে জল খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। এমনটা করা কখনই উচিত নয়। রোগীর তখন ভাল ভাবে জ্ঞান থাকে না, ফলে শ্বাসনালিতে জল ঢুকে দম বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।