প্রতীকী ছবি।
জ্বর থাকলেও চিকিৎসকের কাছে যাননি প্রৌঢ়া। বাড়িতেই ওষুধ খাচ্ছিলেন। পেটে ব্যথা, বমি ভাব থাকলেও তা খাওয়াদাওয়ার কারণে হচ্ছে বলেই ভেবেছিলেন। এক দিন আচমকা মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান। হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যায়, প্রৌঢ়া ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। ক্রমশ অবস্থা সঙ্কটজনক হতে শুরু করে। পরে তাঁর মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ হেন ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোমের আঘাত সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও বেশির ভাগ মানুষের দেরিতে চিকিৎসা করানোর প্রবণতা যাচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৮০ জনের। যদিও সরকারি ভাবে কোনও পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি। তবে মশাবাহিত এই রোগে রাজ্যে যত জনের মৃত্যু ঘটছে, তাঁদের সিংহভাগেরই কারণ ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোম। ডেথ অডিট করে স্বাস্থ্যকর্তারাও দেখছেন, সকলেই অনেক দেরি করে হাসপাতালেভর্তি হয়েছিলেন। যখন তাঁরা এসেছিলেন, তত ক্ষণে রোগী শকে চলে গিয়ে তাঁর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে।
স্বাস্থ্যকর্তাদের পর্যবেক্ষণ, মানুষ কোভিডের সময়ে পাঁচ-ছ’দিন অপেক্ষা করে তার পরে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিলেন। পরীক্ষা করাচ্ছিলেন না। সেই অভ্যাস বা প্রবণতা এখনও পুরো মাত্রায় রয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘কোভিডের মতো ডেঙ্গিতেও বেশির ভাগ রোগী অনেক দেরি করে, অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন। শকে চলে গেলে তখন আর কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ডেঙ্গির সতর্কতামূলক লক্ষণ সম্পর্কে যে প্রচার করা হচ্ছে, তাকে মান্যতা দিতে হবে।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এখন জ্বর হলে সেটাকে মামুলি ভেবে অবহেলা করা ঠিক নয়। তাতে আচমকাই বিপদ ঘটতে পারে।
২০১৯ সালে রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতির পর্যবেক্ষক তথাবেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের ডেঙ্গি ওয়ার্ডের চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতে প্লেটলেট কমে যাওয়াই অবস্থা খারাপ হওয়ার একমাত্র লক্ষণ নয়। এই ধারণাথেকে বেরোতে হবে। কারণ, আরও বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে। জ্বরের সঙ্গে সেগুলি থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হতেই হবে। সেগুলিই শক সিন্ড্রোমে চলে যাওয়ার উপসর্গ।’’ তিনি জানাচ্ছেন, এ বার ৪০ বছরের নীচে অর্থাৎ কমবয়সিরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে মহিলা ও পুরুষ রোগীর অনুপাত ৫০ শতাংশ করে। মাঝেমধ্যে মহিলাদের সংখ্যা কিছুটা হলেও বাড়ছে।
চিকিৎসায় দেরি হওয়ার কারণে শক সিন্ড্রোমের প্রবণতা বৃদ্ধিপাচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সৌরেন পাঁজারও। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত,জ্বর হলেও তাকে উপেক্ষা করে অনেকে বাড়িতে চিকিৎসা করছেন। দ্বিতীয়ত, পরীক্ষা দেরিতে করানোয় রোগীর সমস্যা বাড়ছে। দেরিতে ডেঙ্গির চিকিৎসা শুরু করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। তাতে মৃত্যুর আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।’’
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, জ্বরেরপ্রথম চার দিনের মধ্যে অ্যালাইজ়া পদ্ধতিতে এনএস-১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে হবে। তাতে ডেঙ্গি পজ়িটিভ হলে বেশি করে জল খেতে হবে। পূর্ণবয়স্ক মানুষের তিন লিটার জল প্রয়োজন। আবার হার্ট বা কিডনির রোগী যদি খুব বেশি জলপান করেন, তা হলে হার্ট ফেলিয়োর হতে পারে। জল কম খেলে কিন্তু শকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন প্লেটলেট ও পিসিভি (প্যাকড সেল ভলিউম) পরীক্ষা করানো উচিত। যদি সতর্কতামূলক কোনও লক্ষণদেখা যায়, তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।