কোভিড স্ফীতিতে অন্যতম বড় খলনায়ক হিসেবে উঠে এসেছে ওমিক্রনের নাম। ছবি: সংগৃহীত
রাজ্য তথা দেশ জুড়েই উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ। আর এই কোভিড স্ফীতিতে অন্যতম বড় খলনায়ক হিসেবে উঠে এসেছে ওমিক্রনের নাম। প্রাথমিক ভাবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা করোনার এই নতুন রূপে ফুসফুস নয়, সংক্রামিত হয় শ্বাসনালীর উপরের অংশ। তবে ওমিক্রন ফুসফুসের কম ক্ষতি করছে বলেই ভাইরাস কম শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে এমন ভাবনা মারাত্মক বড় একটি ভুল হতে পারে। চিকিৎসকদের একাংশ তেমন মনে করছেন। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছেন কেমব্রিজ ইন্সটিটিউট ফর থেরাপিউটিক ইমিউনোথেরাপি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ-এর অধ্যাপক রবীন্দ্র গুপ্ত। ‘আনন্দবাজার অনলাইন’এর ফেসবুক এব ইউটিউব লাইভ ‘ভরসা থাকুক’ অনুষ্ঠানে একই কথা মনে করিয়ে দিলেন শিশু চিকিৎসক ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
প্রতীকী ছবি। ফাইল চিত্র
ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, অতিমারির শুরুর দিকে এমন অনেক ওষুধ বা চিকিৎসার পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছিল, যা অচিরেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি বললেন, ‘‘ভাইরাসটাকে চিনেছি আমরা মোটে দু’বছর। তাই কোনও কিছুই নিশ্চিত করে বলা যায় না।’’ তিনি এ-ও মনে করালেন, প্রথমে অনেকের ধারণা ছিল যে বাচ্চাদের করোনাভাইরাস কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু পরে শিশুরাও যথেষ্ট পরিমাণে আক্রান্ত হয়েছে এই রোগে। এখনও যদি ধরে নেওয়া হয়, ওমিক্রন শিশুদের সে ভাবে স্পর্শ করতে পারবে না, তা হলে সেটাও মারাত্মক ভুল হয়ে যেতে পারে।
ওমিক্রনকে যে হালকা ভাবে নেওয়া অনুচিত, তা নিয়ে সম্প্রতি সতর্ক করেছেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র প্রধানও। কোনও ভাবে এটিকে হেলাফেলা করা যাবে না, সে বিষয়ে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই বিষয় নিয়ে সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন কেমব্রিজের আর এক অধ্যাপক রবীন্দ্র গুপ্তও। তাঁর করা ওমিক্রনের উপর করা ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজির গবেষণা বলছে, একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে বিবর্তনের ফলে ভাইরাসটি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে, কিন্তু এমনটা সম্ভবত সত্যি নয়। কারণ কোভিডের এই নতুন রূপটি অত্যন্ত সহজেই সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম। ভাইরাস যদি দুর্বল হয়ে পড়ত তবে এই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম ছিল। ভাইরাসের বিবর্তনগত কোনও ত্রুটির জন্যই এটির ভয়াবহতা তুলনামূলক ভাবে কম হচ্ছে বলে মত তাঁর।
আক্রান্তের উপসর্গ তুলনামূলক ভাবে মৃদু হলেও ভাইরাসটির ক্ষতিকারক ক্ষমতা কমে গিয়েছে এমন ভাবারও কোন কারণ নেই। অধ্যাপক গুপ্তর মতে, ওমিক্রনের ক্ষতি করার ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম হওয়া একটি সুখবর হলেও এটি একমাত্র এই রূপটির ক্ষেত্রেই সত্যি। এরপর এমন নতুন রূপ আসতে পারে যেখানে ভাইরাসটি ক্ষতির দিক থেকে আগের মতোই মারাত্মক হতে পারে। রবীন্দ্রবাবুর ধারণা, সম্ভবত ভবিষ্যতে আমরা সেই দিকেই যেতে চলেছি।
ফুসফুসের কোষে উপস্থিত এক ধরনের উৎসেচকের উপস্থিতির জন্যই ওমিক্রন ফুসফুসকে খুব একটা কাবু করতে পারছে না বলে জানিয়ে অধ্যাপক রবীন্দ্র গুপ্ত আরও একবার সতর্কতার বার্তা দিয়েছেন। তাঁর সাফ কথা একে প্রাকৃতিক টিকা ভেবে নেওয়া খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। বরং তিনি ভরসা রাখতে বলছেন প্রথাগত টিকাকরণের উপরেই।