নির্দিষ্ট নিয়মে ব্যায়াম করতে করতে একঘেয়ে লাগে। অনেক সময় দেখা যায়, এক্সারসাইজ় করে গেলেও একটা মাত্রার পরে ওজন কমছে না বা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছনো যাচ্ছে না। ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও স্টিরিয়োটাইপ ভাঙতে হয়। এখানেও বৈচিত্র প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সার্কিট ওয়ার্কআউটের বিকল্প নেই। এটা নতুন কোনও ব্যায়াম নয়। প্রচলিত ব্যায়ামগুলোই করা হয়, শুধু পদ্ধতি আলাদা।
সার্কিট এক্সারসাইজ়ে কার্ডিয়ো আর স্ট্রেংথ ট্রেনিং মিলিয়েমিশিয়ে করা হয়। আমরা সাধারণত একটি ব্যায়াম তিন-চারটে সেট করি, তার পর অন্য ব্যায়ামে যাই। কিন্তু সার্কিট ওয়ার্কআউটে পাঁচ-ছ’রকমের ব্যায়াম পরপর করলে একটা সেট হয়। ধরা যাক, কেউ ৩০ সেকেন্ড স্পট জগিং করলেন, তার পর স্কোয়াট, চেস্ট প্রেস, স্টেপার, বাইসেপ কার্ল— প্রতিটি ব্যায়াম পরপর করতে হবে ১৬ কাউন্টে। এ ভাবে একটা সেট হল। মনে রাখতে হবে দুটো ব্যায়ামের মধ্যে কোনও বিরতি নেওয়া যাবে না। এই ব্যায়ামগুলো রিপিট করেই তিন-চারটে সেট করতে হবে। একটা সেটের পরে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১মিনিটের বিরতি নেওয়া যায়।
সার্কিট ওয়ার্কআউটের কার্যকারিতা
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস এই পদ্ধতির পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধার কথা বললেন—
* মাসল গ্রোথ এবং স্ট্রেংথ বাড়ানোর কাজে এই ওয়ার্কআউট ভীষণ সাহায্য করে।
* এখানে যেহেতু কার্ডিয়ো এবং স্ট্রেংথ ট্রেনিং মিলিয়ে মিশিয়ে করা হয়, হার্ট খুব ভাল পাম্প হয়।
* এই এক্সারসাইজ় তাড়াতাড়ি শেষ হয়। লোকের হাতে এখন সময় কম। এই পদ্ধতিতে ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে ফুল বডি ওয়ার্কআউট হচ্ছে। সেই কারণেই সার্কিট ওয়ার্কআউট এখন জনপ্রিয়।
* বিরতি না নিয়ে কার্ডিয়ো, স্ট্রেংদেনিং এক্সারসাইজ় করা হয় বলে এতে দ্রুত ওজন কমে।
* শরীরের স্টেবিলিটি পাওয়ার বাড়ে। স্কোয়াট করা হল, তার পরেই পুশ আপ, তার পরেই স্পট জগিং... নানা ধরনের এক্সারসাইজ় পরপর করার ফলে স্টেবিলিটি আসে।
যাঁরা সতর্ক হবেন
সৌমেন দাসের পরামর্শ, ‘‘হার্টের রোগী বা ৪০ বছরের বেশি বয়সি যাঁরা, তাঁরা যেন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই এই এক্সারসাইজ় করেন। কোমরের ব্যথা, বাত কিংবা কোনও আঘাতজনিত সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। এঁরা লো ইনটেনসিটি সার্কিট ট্রেনিং করবেন।’’
বাড়িতেও করা যায়সার্কিট ট্রেনিং
ফিটনেস বিশেষজ্ঞের মতে, জিমের যন্ত্রপাতি ছাড়াই খুব ভাল সার্কিট ট্রেনিং করা যায়। পুশ আপ করুন ৩০ সেকেন্ড, তার পরেই স্কোয়াট ৩০ সেকেন্ড, হাই-নি জগিং, সিট আপ, ল্যাঞ্জেস, চিন আপ— প্রত্যেকটাই ৩০ সেকেন্ড করে করতে হবে এবং কোনও বিরতি নেওয়া যাবে না। এতে সারা শরীরের ব্যায়াম হবে। একটা সেট করার পরে এক মিনিট বিশ্রাম নিয়ে পরের সেটে ওই একই ব্যায়াম ক্রমানুযায়ী করতে হবে। যাঁরা প্রথম বার সার্কিট ট্রেনিং করছেন তাঁরা তিনটি সেট দিয়ে শুরু করুন। তার পর সেটের সংখ্যা বাড়িয়ে ৪-৫ নিয়ে যান।
আর একটি সেটের উদাহরণ দেওয়া যাক। জগিং, স্কোয়াট, বার্পিজ়, পুশ আপ, ব্যাক পুশ আপ— প্রত্যেকটাই করতে হবে ৩০ সেকেন্ড করে। জগিংয়ে কার্ডিয়ো হয়ে গেল, স্কোয়াট থাইয়ের জন্য। বার্পিজ় একটু কঠিন ব্যায়াম, কিন্তু এতে থাইয়ের এক্সারসাইজ় এবং কার্ডিয়ো দুটো একসঙ্গে হয়। আপার বডি স্ট্রেংথের জন্য পুশ আপ। ব্যাক পুশ আপে হাতের ব্যায়ামও হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ব্যায়ামই বাড়িতে করা সম্ভব।
অনেকের বাড়িতে ট্রেডমিল বা হালকা ওজনের ডাম্বল রয়েছে। তাঁরা আরও বৈচিত্র আনতে পারবেন সার্কিট ওয়ার্কআউটে। ১মিনিট দৌড়ে নিন ট্রেডমিলে, তার পর ডাম্বল দিয়ে শোল্ডার প্রেস উইথ স্কোয়াট করুন ১৬ কাউন্টে, হাই-নি জাম্প করুন ১মিনিট, বাড়ির সিঁড়ির প্রথম ধাপে স্টেপার করতে পারেন ১মিনিট। তার পর ১৬ কাউন্টে বাইসেপ কার্ল, ১মিনিট প্ল্যাঙ্ক, ১৬ কাউন্টে বার্ড ডগ এক্সারসাইজ়।
জিমে গিয়ে সার্কিট ওয়ার্কআউট
কী ধরনের সার্কিট ট্রেনিং জিমে গিয়ে করা যায় তার উদাহরণ দিলেন সৌমেন দাস। ট্রেডমিল রানিংয়ের পরেই লেগপ্রেস, বেঞ্চপ্রেস, পেক ডেক, তার পর বাইসেপ কার্ল, অ্যাবস ক্রাঞ্চ। প্রতিটাই ১৬ কাউন্ট করে ৪-৫ সেট।
মেশিনের সাহায্যে গোটা শরীরের ব্যায়াম— এক মিনিট লেগ এক্সটেনশন, এক মিনিট জগিং, চেস্ট প্রেস, স্কোয়াট, ল্যাট পুল ডাউন, হাই-নি জগিং, বাইসেপ কার্ল, বার্পিস, ট্রাইসেপ প্রেস, ক্রাঞ্চেস— সব ক’টা এক্সারসাইজ় এক মিনিট করে হবে। তিন সেটে করতে হবে। এতে থাই, হাত, পেট সব অংশের স্ট্রেংথ ট্রেনিং যেমন হচ্ছে, তেমনই কার্ডিয়ো।
কেউ যদি শুধু পায়ের সার্কিট ট্রেনিং করতে চান, সেটাও করা যায়। লেগ প্রেস, হিল রাইজ়েস, হ্যামস্ট্রিং কার্ল, লেগ এক্সটেনশন— প্রতিটা ১৬ কাউন্ট করে তিন সেটে হবে।
সার্কিট ওয়ার্কআউটের আসল কথাই হল ব্যায়ামের মধ্যে বৈচিত্র আনা। বিভিন্ন ব্যায়াম মিলিয়ে মিশিয়ে করা হয় বলে, এই পদ্ধতিতে একঘেয়েমি আসে না। নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে হয় যেহেতু, তাই বাড়তি চ্যালেঞ্জ থাকে। অনেক সময়েই আমরা সেটের ফাঁকে, ব্যায়ামের ফাঁকে বেশি বিরতি নিয়ে ফেলি, এখানে সেই সুযোগটা থাকে না। এই পদ্ধতিতে ব্যায়াম করার সময়ে বেশ ঘাম হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। যাঁরা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন, তাঁরা সার্কিট ট্রেনিংয়ের সঙ্গে ডায়েটেও ভারসাম্য আনুন। দ্রুত ফল পাবেন। প্রথমে লো-ইনটেনসিটি সার্কিট ট্রেনিং দিয়ে শুরু করুন, তার পরহাই-ইনটেনসিটির দিকে ধাপে ধাপে এগোন।