কম খরচে কোন ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন ছবি: সংগৃহীত
কোভিডকালে সকলেই কমবেশি স্বাস্থ্যসচেতন হয়েছেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা আবশ্যিক, তা মোটামুটি এখন সকলেই জানেন। সেই অনুযায়ী খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চা করারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রত্যেকে। কিন্তু অনেকের বদ্ধ ধারণা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া মানেই বেশি খরচ। আর তা হবে না-ই বা কেন। যে কোনও খাবারের আগে যেই ‘অরগ্যানিক’-এর মতো শব্দ জুড়ে যায়, তখনই তার দাম সাধারণ খাবারের চেয়ে এক লাফে অনেকটা বেড়ে যায়। তা ছাড়াও রয়েছে নেটমাধ্যমে নানা খ্যাতনামীর ডায়েট। যত স্বাস্থ্যকর বিদেশি খাবার, তত তার দাম। ফলের দামও আকাশছোঁয়া। সব্জির দাম যেন রোজই বাড়ছে। ড্রাই ফ্রুট তো অনেকের কাছেই ধরাছোঁয়ার বাইরে। তা হলে চাইলেও কি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া সম্ভব নয়? এই চিন্তাই তাড়া করে বেড়ায় আমবাঙালিকে। তবে পুষ্টিবিদ ভরসা দিচ্ছেন, তেমনটা একেবারেই নয়।
প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি খাদ্যাভ্যাস এবং পুষ্টিগুণ নিয়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘ইন্টারন্যাশন্যাল ক্লিনিকাল নিউট্রিশন আপডেট ২০২২’-এ পুষ্টিবিদ সুদেষ্ণা মৈত্র নাগ এই বিষয়ে বললেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা যে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে অনেক টাকা লাগে। বাস্তবে তা উল্টো। মরসুমি ফল-সব্জি খেলে সব সময়ে শরীর ভাল থাকবে। আর দামও কম পড়বে। খুব দামি ফল বা সব্জি মানেই গুণ বেশি এটা ধরে নেওয়া উচিত নয়। অনেককে দেখেছি সাধ্যের বাইরে গিয়ে বেদানার রস কিংবা স্টিকার দেওয়া বিদেশি আপেল খাচ্ছেন। কিন্তু এগুলোর কোনও প্রয়োজন নেই। সবচেয়ে কম দামে একটি ফল হাতের কাছেই আছে। সেটা যখন ইচ্ছে খাওয়া যায়, কিন্তু লোকে সাধারণত অবহেলা করেন। তা হল কলা। কলায় যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে, তা অনেক ফলেই নেই। শরীরে স্ফূর্তি জোগাতে এর জুড়ি মেলা ভার। তাই কারও কোনও রকম অন্য শারীরিক সমস্যা না থাকলে কলা খাওয়া যেতেই পারে।’’
ফল
কলা ছাড়াও সুদেষ্ণা পেয়ারার কথা উল্লেখ করলেন। দিনে একটি করে পেয়ারা খেলেও অনেকটাই গুণ পাওয়া যায়। শরীরে যতটা ভিটামিন সি-র প্রয়োজন তার জন্য দিনে একটি আমলকি খেলেই তা মেটানো সম্ভব বলে তিনি জানালেন। তাই ফলের পিছনে বেশি খরচ করার প্রয়োজন নেই।
টুকটাক খাবার
খিদে পেলে কী খাওয়া যেতে পারে? ড্রাই ফ্রুট অনেকের কাছেই সাধ্যের বাইরে। তা হলে স্বাস্থ্যকর কী খাওয়া যায়? সুদেষ্ণা বলছেন ডিম খাওয়ার কথা। তিনি বললেন, ‘‘ডিমে ক্যালশিয়াম, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং আরও অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। আমরা মোটামুটি কমপ্লিট ফুড বলতে পারি। খিদে পেলে ডিম সেদ্ধর কোনও বিকল্প নেই।’’
প্রোটিন
অনেকে বা়ড়িতে বাচ্চারা আজকাল চিকেন ছাড়া খেতে চায় না। কিন্তু অভ্যাস বদলাতে হবে বলে মনে করছেন পুষ্টিবিদ। যে কোনও ধরনের মাছেও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। তাই মাছ খাওয়া খুব জরুরি। নিরামিষাসীদের জন্য ডাল, দুগ্ধজাত খাবার মাছ-মাংসের বিকল্প হতে পারে। কিন্তু অনেক বাঙালির দুগ্ধজাত খাবার খেলেই গ্যাস-অম্বল হয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে। সে ক্ষেত্রে সোয়াবিন খাওয়া যেতে পারে।
তাড়াহুড়োর খাবার
সময় কম। কিংবা রান্না করতে তেমন ইচ্ছা করছে না? কোনও প্রোটিন ড্রিঙ্ক বা মিল সাপ্লিমেন্ট না খেয়ে খিচুড়ি তৈরি করা সবচেয়ে ভাল। এটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়, এমন কিছু খরচ সাপেক্ষও নয়। এবং এতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ভিটামিন (সব্জি ব্যবহার করতে হবে) রয়েছে ভরপুর। সঙ্গে অবশ্য একটু দেশি ঘি যোগ করতে হবে। তা হলে একই খাবার থেকে ফ্যাটও পেয়ে যাবেন।