কতটা উপকারি সজনে পাতা, কী বলছেন পুষ্টিবিদেরা? ছবি: সংগৃহীত।
দুধ এমন একটি খাবার, যার পুষ্টিগুণ অন্য বিকল্প থেকে খুব একটা পাওয়া যায় না। কিন্তু দুধ সহ্য হয় না অনেকেরই। দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেলেই অ্যালার্জি বা হজমের সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে ‘ল্যাকটোজ় ইনটলারেন্স’। এমন সমস্যা যাঁদের থাকে, তাঁরা দুধের বিকল্প খাবারের সন্ধানই করেন। সেক্ষেত্রে সজনে পাতা কি দুধের আদর্শ বিকল্প হতে পারে?
বাঙালির পাতে এই সজনে পাতা বা ফুল যেমন বহুকাল থেকেই কদর পেয়ে আসছে, তেমনই শরীর সারাতেও এর ভূমিকার কথাও সুবিদিত। সজনেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আয়রন, ক্যলসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টেও ভরপুর এটি। ঋতু পরিবর্তনের সময়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল, ভিটামিন এ, ই, সি এবং ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনে ভরপুর সজনে পাতা দুধের বিকল্প হতে পারে কি না? অথবা সজনে পাতা খেলে প্রোটিনের চাহিদা পুরোপুরি মিটতে পারে কি না?
দুধে ভরপুর ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকে। পুষ্টিবিদদের মতে, সজনে পাতাতেও ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। তাই দুধ যাঁদের একেবারেই সহ্য হয় না, তাঁরা বিকল্প হিসেবে সজনে পাতা খেতেই পারেন।
অনলাইনে অর্ডার দিয়ে অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষই যে ‘মোরিঙ্গা পাউডার’ কিনে খান, তা আসলে সজনে পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে প্যাকেটজাত করা। সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস থাকে। হাড়ের জোর বাড়ায় সজনে, হার্ট ভাল রাখে, পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তাল্পতা কমাতেও এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। নিরামিশাষীদের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারে সজনে পাতা।
সজনে পাতা খেলে প্রোটিনের চাহিদা পুরোপুরি মিটতে পারে? ছবি: সংগৃহীত।
এমনিতেই ফসলের ফলন বাড়াতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার শরীরে নানা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সজনের বেলায় সে সম্ভাবনা কম। তাই পুষ্টিকর সব্জি হিসেবে এখন স্কুল বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির মিড-ডে মিলেও সজনে ফুল, সজনে পাতা বা সজনে ডাঁটার ঝোল, তরকারির চাহিদা বেড়েছে। শিশুদের অপুষ্টিজনিত রোগ সারাতেও সজনে পাতা খুবই উপকারি।
তবে অন্য মতও আছে। অনেক পুষ্টিবিদের মতেই, শুধু মাত্র সজনে পাতা সম্পূর্ণ ভাবে প্রোটিনের দৈনিক চাহিদা মেটাতে পারে না। সজনের সঙ্গে অন্য শাকসব্জি, ডাল জাতীয় খাবারও রাখতে হবে। যদি কেউ সুষম আহার করতে অভ্যস্ত হন, তা হলে রোজকার খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট নির্দিষ্ট পরিমাণে রাখা দরকার। মাছ-মাংস, ডিম বা দুধ না খেলে তার জায়গায় সজনে পাতা ছাড়াও নানা রকম দানাশস্য (গম, ওটস, বাজরা, মিলেট ইত্যাদি), ফল, সবুজ শাকসব্জি রাখতেই হবে।
সজনে পাতায় এত বেশি ফাইবার থাকে যে, খুব বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেললে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই দুধ বা অন্য প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে বিকল্প হিসেবে সজনে পাতা খাবেন কি না তা পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নেওয়াই ভাল।