মাখানা আর মুড়ির লড়াইয়ে জিতবে কে? ছবি: সংগৃহীত।
তখনও মাখানার আবির্ভাব হয়নি। একটা সময় পর্যন্ত বঙ্গজীবনের অঙ্গে অঙ্গে জড়িয়ে ছিল মুড়ি।
সব স্তরের (বিত্তের) হেঁশেলেই মুড়ির ছিল অবাধ যাতায়াত। পেটখারাপ, মনখারাপ, বমি, অম্বল, মাথাব্যথা— সব রোগের ঘরোয়া পথ্য ছিল ওই খাবারটি। সকালে জলখাবারে দুধ-মুড়ি। আবার সান্ধ্য আড্ডায় চায়ের সঙ্গে ‘টা’ হিসাবেও দারুণ জমে চানাচুর কিংবা চপ-মুড়ি। দুরন্ত শিশুকে শান্ত করতে তাদের হাতেও ধরিয়ে দেওয়া হত মুড়ির বাটি। অল্প খিদে পেলে মুড়ি। আবার, পকেটে বেশি পয়সা না থাকলেও সহায় সেই মুড়ি। দূরপাল্লার ট্রেনে যেতে যেতে মশলা-মুড়ির স্বাদও ভোলার নয়! সে না হয় হল। কিন্তু মুড়ি খেলে কি ওজন ঝরে?
সব সুখ তো চিরস্থায়ী নয়! তাই মুড়িকে টেক্কা দিতে যে দিন থেকে মাখানা মাঠে নামল, সে দিন থেকে মুড়ি পড়ল বিপদে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা মুড়ির পুষ্টিগুণ নিয়ে আগে তেমন কেউই মাথা ঘামাতেন না। কিন্তু প্রায় ভিন্গ্রহ থেকে মধ্যবিত্তের নাগালে মাখানা এসে পড়তেই শুরু হল চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিশেষ করে যদি ওজন ঝরানো বা রোগা হওয়ার প্রশ্ন ওঠে, তা হলে তো মুড়িকেও চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায় না। পুষ্টিবিদ ইন্দ্রাণী ঘোষের মত, “ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে কার্বোহাইড্রেট, ক্যালোরি বেশি খাওয়া চলে না। অথচ, মুড়ি তো চাল থেকে তৈরি। তা হলে প্রথমেই নম্বর কাটা গেল।”
মাখানা হল পদ্মফুলের বীজ থেকে তৈরি খই। এতে প্রোটিন, ফাইবার বেশি। ক্যালোরির পরিমাণ কম। সে দিক থেকে দেখতে গেলে মাখানা কিন্তু মুড়ির তুলনায় ভাল। ইন্দ্রাণী বলেন, “এ ছাড়াও পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং আয়রনের মতো খনিজ রয়েছে মাখানায়। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর মাখানার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও মুড়ির তুলনায় কম। তাই ব্যালান্স ডায়েটের তালিকায় এই খাবার থাকে।”
ওজন ঝরাতে কোনটির উপর ভরসা রাখা যায়?
পুষ্টিবিদ বলছেন, তেল বা ঘিয়ে না ভেজে যদি মাখানা খাওয়া যায়, তা হলে শরীরের জন্য সেটি ভালই। বিপাকহার ভাল রাখতে প্রোটিন এবং ফাইবারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। মাখানায় এই খনিজগুলি যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তাই পুষ্টিগুণ বিচার করলে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে অবশ্যই মাখানাকে এগিয়ে রাখতে হবে।