ভাবছেন, রোজ জগিং করতে যাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেলেই আর কেউ আটকাতে পারবে না আপনাকে। ছবি : সংগৃহীত।
রোগা হতে চান। কিন্তু জিমে যেতে চান না। ঠিক করেছেন, নিজের চেষ্টাতেই কমিয়ে ফেলবেন ওজন। রোজ ভোরে ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছেন বাড়ির কাছের মাঠে, পার্ক কিংবা রাস্তায়। কেউ জগিং করছেন। কেউ বা আরও এক ধাপ উপরে উঠে দৌড়চ্ছেন। নিজের স্থির করা লক্ষ্য ছুঁতে চেষ্টার কসুর রাখছেন না। কিন্তু, নাছোড় মেদ তাতেও ঝরছে কি? ফিটনেস বিশেষজ্ঞ বলছেন, ঝরছে না। অন্তত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিশ্রমের তুলনায় ফল মিলছে কম। আর তার কারণ, জগিং বা দৌড়নোর সময় কিছু ভুল থেকে যাচ্ছে।
প্রথম ভুল: লক্ষ্য আকাশ ছোঁয়া
প্রথম দিনই ঠিক করে নিলেন, পাঁচ কিলোমিটার দৌড়ে তবেই থামবেন। সেইখানেই মুশকিল। গুণীজনেরা বলে গিয়েছেন ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করতে। সে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হোক বা দৌড়ের পথ। ছোট লক্ষ্যে অভীষ্ট পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা যেমন বেশি, তেমনই আকাশছোঁয়া লক্ষ্যের পিছনে দৌড়তে গিয়ে নিজের জখম হওয়ার সম্ভাবনাও কম। পেশির উপরে প্রথম দিনেই অতিরিক্ত চাপ আপনাকে আহত করতে পারে।
দ্বিতীয় ভুল: বেদনায় না
বহু দিনের ‘মরচে ধরা’ পেশিকে সচল করার চেষ্টা করলে শুরুতে শরীর বিদ্রোহ করবেই। জানান দেবে ব্যথার উপসর্গে। কিন্তু জেদ করে যদি সেই ব্যথাবেদনার উপশম না করেই দৌড় চালিয়ে যান, তবে আরও বাড়বে সমস্যা। প্রশিক্ষকেরা বলছেন, জগিং বা দৌড়নো কোনও যন্ত্রণাদায়ক শারীরিক কসরত নয়। তাই শরীর যদি অস্বাচ্ছন্দ্যের কথা জানায়, তবে সে কথা শোনাই বিধেয়।
তৃতীয় ভুল: গা ঘামানো জরুরি
বাড়ি থেকে বেরিয়েই জগিং শুরু করছেন। আবার ভুল। জগিংয়ের আগে গা-ঘামানো জরুরি। তাই ‘ওয়ার্ম আপ’ দরকার। ‘ওয়ার্ম আপ’ অর্থাৎ ছোট ছোট শারীরিক কসরতের মাধ্যমে পেশিকে সচল করে নেওয়া। স্ট্রেচিং এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। তাতে পেশিতে যেমন নমনীয়তা আসবে, কমবে আঘাত লাগার সম্ভাবনাও।
চতুর্থ ভুল: বিশ্রাম না নেওয়া
সবে জগিং শুরু করেছেন। তাই চাইছেন অভ্যাস তৈরি করতে। ভাবছেন, রোজ জগিং করতে যাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেলেই আর কেউ আটকাতে পারবে না আপনাকে। কে বলতে পারে, ১৫ দিনেই ৫ কেজি কমিয়ে ফেলবেন হয়তো! এই ধারণাও ভুল। নতুন জগিং শুরু করছেন যাঁরা, তাঁরা অভ্যাসে নয়, জোর দিন শরীরের বিশ্রামে। প্রতি দিন দৌড়লেই যে পারফরম্যান্স ভাল হবে, তা নয়। শরীরকে বিশ্রামের সময় দিন। হঠাৎ পেশি সঞ্চালন শুরু করার ফলে যে ব্যথাবেদনা হচ্ছে, তা থেকে সেরে ওঠার জন্য সময় নিন।
পঞ্চম ভুল: শুধুই জগিং
শুধুমাত্র জগিংয়ে মন দিলে মুশকিল। শারীরিক কসরতের আরও নানা মাধ্যম আছে। অ্যারোবিক্স, স্ট্রেন্থ ট্রেনিং ইত্যাদি। জগিংয়ের পাশাপাশি সেই সব করলে, একঘেয়েমি কাটবে। আবার পেশিরও বিশ্রাম হবে।
ষষ্ঠ ভুল: ভঙ্গিমা বা পদ্ধতি
জগিংয়ের সময় শরীরের ভঙ্গিমা ঠিকঠাক থাকছে কি? পদ্ধতিতে কোনও ভুল হচ্ছে না তো! যে কোনও শারীরিক কসরত ভাল ফল দেবে সঠিক পদ্ধতি মেনে করলে। তার উল্টোটা হলেই ‘ফেল’। তাই জগিং করার সময় পদ্ধতিতে নজর দেওয়া জরুরি।
সপ্তম ভুল: পোশাক
শর্টস বা পাজামার সঙ্গে টিশার্ট আর স্নিকার পরে ছুটতে চলে যাচ্ছেন। এখানেও ভুল। জগিং বা যে কোনও ধরনের শারীরিক কসরতের জন্য যথাযথ পোশাক প্রয়োজন। মেয়েরা ভাল স্পোর্টস ব্রা পরুন। এমন পোশাক পরুন, যা আপনার জগিং করা বা দৌড়নোর সময় বাধা তৈরি করবে না। সাধারণত ফিটেড পোশাক না পরলে দৌড়নো বা জগিংয়ের সময় উড়তে পারে। তাতে অস্বস্তি হতে পারে। এ ছাড়া জগিংয়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি জুতো। এমন জুতো বেছে নিন, যা দৌড়নোর উপযোগী। তাতে জগিং যেমন ভাল হবে, তেমনই পেশিতে চাপও পড়বে কম।