ছবি : সংগৃহীত।
ফল খাওয়া ভাল। ফল দেখে নাক সিঁটকানো ছোটদের হাতে এক বাটি কুচোনো ফল ধরিয়ে দিয়ে বলতেন বাবা-মা। ভাল বা মন্দ যেমনই লাগুক, সেই ফল খেয়ে শেষ করতে হত। ইদানীং অবশ্য সমাজমাধ্যমে দেখা রিল্সে চিকিৎসক-ডায়েটিশিয়ানদের পরামর্শের দৌলতে আগের থেকে স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছেন মানুষ। এখন আর শুধু ‘ফল খাওয়া ভাল’— আপ্তবাক্যে ভরসা করে তাঁরা ফল খান না। এখন ফল খাওয়া হয় ভিটামিন, ফাইবার, মায় ফলে থাকা ফ্রুকটোজ়, সুক্রোজ়ের মতো লুকনো চিনির নিক্তি মেপে। ডায়াবিটিস বা হার্টের অসুখ থাকলে তাই ফলের তালিকা থেকে বাদ পড়ে সবেদা, আতা, আম জাতীয় অতি মিষ্টি ফল। কিন্তু এত নিয়ম মেনেও ফলের সমস্ত পুষ্টিগুণ শরীরে যায় কি?
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে যখন সব রকম খাবারের জিনিসেরই দাম বাড়ছে, তখন দামের নিরিখে পিছিয়ে নেই ফলও। কিন্তু খরচ করে ভাল থাকার জন্য রোজ যে ফল খাচ্ছেন, তাতে আদৌ কাজ হচ্ছে কি! না কি ভুল সময়ে ভুল ভাবে খাওয়ার জন্য উধাও হচ্ছে পুষ্টি? আয়ুর্বেদিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষক ডিম্পল জাংড়া বলছেন, ‘‘ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কিছু সাধারণ ভুল করে ফেলি। তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয় বেশি।’’
ফল যদি প্রোটিন এবং শর্করার সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ পাকস্থলীতে থেকে যায়, তাতে দু’রকম সমস্যা হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
কখন ক্ষতি হতে পারে?
ডিম্পল বলছেন, ‘‘ফল যদি আপনি প্রোটিন বা শর্করার সঙ্গে থান, তবে হজমের সমস্যা হতে পারে। কারণ, ফল হল প্রাকৃতিক ভাবে হালকা আর সহজপাচ্য খাবার। কিন্তু প্রোটিন এবং শর্করা হল ভারী। ওই ধরনের খাবার হজম হতে বেশি সময় লাগে। এখন যদি ভারী খাবারের সঙ্গে ফল খাওয়া হয় তবে প্রোটিন এবং শর্করার পাশাপাশি ফলও পাকস্থলীতে থেকে যাবে বেশি সময় ধরে।’’ ডিম্পল জানাচ্ছেন, ফল যদি প্রোটিন এবং শর্করার সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ পাকস্থলীতে থেকে যায়, তাতে দু’রকম সমস্যা হতে পারে। এক, পাকস্থলী থেকে যে নানারকম অ্যাসিডের ক্ষরণ হয়, তার সংস্পর্শে এসে ফল অ্যাসিডিটি, গ্যাসের সমস্যা, বদহজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। দুই, ফল যখন হজম হবে, তখন যে প্রোটিন এবং শর্করা হজম হল না, সেগুলোকে সরাসরি পাঠিয়ে দেবে ক্ষুদ্রান্ত্রে। তাতে সমস্যা আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
আঙুর বাইরে ফেলে রাখলে মজে যায়। শরীরের ভিতরেও এমন হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
কী কী ক্ষতি হতে পারে?
১। ফলের জারণ: বিপাকতন্ত্রে যদি বেশি ক্ষণ ফল থেকে যায়, তবে তা শরীরের ভিতরেই জারিত হতে শুরু করে। আঙুর দিয়ে এর একটা সহজ উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আঙুর যদি বাইরে ফেলে রাখা হয়, তবে খেয়াল করে দেখবেন, তা মজে যায়, আঙুরের রস জারিত হয়ে তৈরি হয় ঝাঁঝালো ওয়াইন। শরীরের ভিতরের তাপমাত্রায় এবং আরও নানা কারণে ওই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হয় পরিপাকতন্ত্রের ভিতরে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, তা থেকে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, এমনকি খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
২। পুষ্টিগুণে ঘাটতি: ফলকে যদি প্রোটিন এবং শর্করার সঙ্গে খাওয়া হয়, তবে শরীর খাবারে থাকা আয়রন এবং ক্যালশিয়াম পুরোপুরি নিতে পারে না। ফলে পুষ্টির ঘাটতি হয়। নিয়মিত ফল খেয়েও তৈরি হতে থাকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা সমস্যা।
ফল খাওয়ার সময় তার সঙ্গে খান বাদাম বা বীজশস্য। ছবি: সংগৃহীত।
কী ভাবে ফল খাওয়া উচিত?
ডিম্পলের পরামর্শ, কিছু নিয়ম মেনে চললে ফলের পুষ্টিগুণ পুরোটাই নিতে পারবে শরীর।
১। সঠিক সময়ে খান
‘খালি পেটে জল আর ভরা পেটে ফল’ প্রবাদবাক্য খাটছে না এখন। বরং পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ফলের পুরো পুষ্টি পেতে ফল খান খালি পেটেই। দু’টি খাবারের মাঝের সময়েও ফল খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু কখনওই পেট ভর্তি খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বা খাবারের সঙ্গে ফল খাওয়া উচিত নয়।
২। বাদাম বা বীজশস্যের সঙ্গে খান
ফলে থাকা ফ্রুকটোজ়, সুক্রোজ় জাতীয় চিনি বা গ্লুকোজ় অনেক সময় রক্তে আচমকা শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ফল খাওয়ার সময় তার সঙ্গে, কাঠবাদাম, আখরোট, তিসি বীজ, কুমরোর সবুজ বীজ, সূর্যমুখীর বীজ বা চিয়া বিজের সঙ্গে খেতে পারেন। স্বাদের জন্য উপরে গোলমরিচ বা দারচিনি গুঁড়ো ছড়িয়ে নিতে পারেন।
৩। জলখাবার হিসাবে খান
দু’টি বড় খাবার, যেমন প্রাতরাশ আর দুপুরের খাবার বা মধ্যাহ্নভোজ আর নৈশভোজের মাঝে প্রায় প্রত্যেকেই হালকা জলখাবার খেয়ে থাকেন। জলখাবার হিসাবে সকাল ১১টা নাগাদ বা বিকেল ৪টের সময় ফল খাওয়া যেতে পারে। তবে ডায়াবিটিস থাকলে এমন ফল খাবেন, যার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম।