রোজ কাঠবাদাম খাওয়ার অভ্যাস কাদের জন্য ক্ষতিকর? ছবি: সংগৃহীত।
বুড়ো বয়সে যাতে অস্টিয়োপোরোসিসে ভুগতে না হয়, তাই রোজ সকালে ৫-৬টা ভেজানো কাঠবাদাম খান। কেউ আবার জিমে কিংবা মর্নিং ওয়াকে যাওয়ার আগে ৮-১০ টা ভেজানো কাঠবাদাম মুখে পুরে দেন। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজ ক’টা করে বাদাম খাবেন তা নির্ভর করে ব্যক্তির ওজন, উচ্চতা, কর্মদক্ষতা এবং সারা দিনে তিনি কতটা পরিশ্রম করছেন তার উপর। উপকারের আশায় বেশি করে এই বাদাম খেয়ে ফেলা কিন্তু মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। তাতে বরং হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর কাঠবাদাম। মিনারেলস, ভিটামিন, ফাইবার রয়েছে এই বাদামে। জেনে নিন, রোজের ডায়েটে এই বাদাম রাখা কেন উপকারী।
হার্ট ভাল রাখতে
যন্ত্রনির্ভরতা, বাইরের খাবার খাওয়ার প্রতি ঝোঁক, কম ঘুম— বিভিন্ন কারণে হৃদ্রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ঝুঁকি এড়াতে ভরসা হতে পারে কাঠবাদাম। এই বাদামে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। কাঠবাদাম খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। কোলেস্টেরল কম থাকলে হার্টও ভাল থাকে।
ত্বকের যত্নে
ঘরে-বাইরে সব সামলাতে গিয়ে ত্বকের খেয়াল রাখার সময় পাওয়া যায় না। পার্লারের চৌকাঠ পেরোনোর জন্য যতটা সময় হাতে থাকা দরকার, অত সময় বার করা মুশকিল। কাঠবাদামে রয়েছে ভিটামিন ই। এই ভিটামিন ত্বক ভিতর থেকে ঝলমলে রাখে। বলিরেখা দূর করতেও সাহায্য করে। ত্বক মসৃণ রাখতেও কাঠবাদাম উপকারী।
হাড় মজবুত করতে
কাঠবাদামে রয়েছে ফসফরাস, ক্যালশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বেশ কিছু উপাদান। হাড়ের ঘনত্ব ভাল রাখতে ক্যালশিয়ামের পাশাপাশি এই সমস্ত উপাদান প্রয়োজনীয়। অস্টিয়োপোরোসিসের ঝুঁকিও কমে কাঠবাদাম খাওয়ার অভ্যাসে।
চনমনে থাকতে
চনমনে থাকতে প্রোটিন শেক এবং নানা পানীয়ের উপর ভরসা রাখেন। তবে কৃত্রিম উপায়ে চনমনে থাকার চেয়ে চাঙ্গা থাকতে পারেন কাঠবাদাম খেয়ে। কাঠবাদামে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। দিনের শুরুতে যদি রোজ ভেজানো কাঠবাদাম খেতে পারেন, চাঙ্গা থাকা সহজ হবে।
স্মৃতিশক্তি ভাল রাখতে
বাদাম ভিটামিন ই-র ভাল উৎস। সঠিক মাত্রার ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখে। স্মৃতিশক্তি ভাল রাখতে নিয়ম করে খেতে পারেন ভেজানো কাঠবাদাম।
রোজ সকালে কাঠবাদাম খাওয়ার অভ্যাস কি আদৌ ভাল?
সুস্থ শরীরে নিয়ম করে রোজ কাঠবাদাম খাওয়া যেতেই পারে, এমনটাই মত পুষ্টিবিদ পম্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাঠবাদাম খেলে শরীরের ক্ষতিও হতে পারে। পম্পিতা বলেন, ‘‘যাঁরা সারা বছর ধরে হজমের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের ডায়েটে রোজ কাঠবাদাম রাখা উচিত নয়। নইলে গ্যাস-অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। কিডনির কোনও সমস্যা রয়েছে এমন রোগীর ডায়েটেও কাঠবাদাম একেবারেই রাখা যাবে না। অনেকেই মনে করেন রোজ ভেজানো কাঠবাদাম খেলে ওজন ঝরবে, এমন কোনও আশা মনে রেখে কাঠবাদাম না খাওয়াই ভাল। কাঠবাদামের সঙ্গে ওজন ঝরানোর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে যাঁরা নিয়ম করে ডায়েটে কাঠবাদাম রাখছেন তাঁদের বলব, মুঠো মুঠো কাঠবাদাম খেয়ে ফেলবেন না যেন। আপনার শরীরের জন্য রোজ ঠিক ক’টা বাদাম খেলে উপকার পাবেন সেই হদিস কিন্তু একজন পুষ্টিবিদের থেকে নেওয়াই ভাল। নিজে নিজে বাদামের সংখ্যা ঠিক করবেন না যেন।’’
পম্পিতার মতে, কাঠবদামের খোসা অনেকের হজম হয় না, সে ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখা কাঠবাদাম পরের দিন সকালে খোসা ছাড়িয়ে খেয়ে দেখতে পারেন, হজম করতে সুবিধা হবে, শরীর বাদামের পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণও পাবে।