সুস্থ থাকতে হলে হাঁটতে হবে, তবে কী ভাবে হাঁটলে উপকার মিলবে বেশি? ছবি: সংগৃহীত।
সুস্থ থাকতে হাঁটাহাটি, শরীরচর্চা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। কিন্তু হাঁটবেন কখন, সকালে না বিকেলে? কত ক্ষণই বা হাঁটবেন? এ নিয়ে নানা জনের নানা মত। তবে সুস্থ থাকতে অনুসরণ করতে পারেন ৬-৬-৬ পদ্ধতি বা নিয়ম।
কী এই পদ্ধতি?
এর আসল কথা হল সকাল ছ’টা এবং সন্ধ্যা ছ’টায় হাঁটতে হবে মোট ৬০ মিনিট। ৬ মিনিট বরাদ্দ থাকে গা গরম (ওয়ার্ম আপ) এবং বিশ্রাম করার জন্য।
শরুটা হোক সকালেই
এই নিয়মের সুফল পেতে সকাল ছ’টায় হাঁটতে বেরোতে হবে। কিন্তু কেন এই সময়ে? এই সময়ে রোদের তাপ যেমন বেশি থাকে না, তেমনই পরিবেশ শান্ত থাকে। বাইরের আলো-হাওয়া মন এবং শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। অস্ট্রেলিয়ার হার্ট ফাউন্ডেশন (ওয়াকিং)-এর সমীক্ষা বলছে, দিনে ৩০ মিনিট হাঁটলে হৃদ্রোগের সমস্যা ৩৫ শতাংশ কমে যায়। দ্য ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিয়োলজির সমীক্ষা বলছে, সকালে হাঁটলে স্ট্রোকের আশঙ্কা কমে। পাশাপাশি, মানসিক ভাবেও ফুরফুরে থাকা যায়। তা ছাড়া, সকালে ওঠার অভ্যাসও স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
সন্ধ্যাও যেন বাদ না যায়
সকালে ৩০ মিনিট হাঁটার পর সন্ধ্যায় হাঁটতে হবে আরও ৩০ মিনিট। ৬-৬-৬ পদ্ধতির এটি দ্বিতীয় শর্ত। সূর্যাস্তের পরের এই সময়টিতেও মন শান্ত থাকে। পরিবেশও থাকে সুন্দর। সারা দিন কাজের পর সন্ধ্যায় হাঁটহাঁটি করলে মন এবং শরীরের ক্লান্তি দূর হয়। তবে এই সময়ে যদি ৩০ মিনিট হাঁটা সম্ভব না হয়, তা হলে ২ মিনিটের দ্রুত হাঁটাও কার্যকর হতে পারে। অফিস চত্বরেই অন্তত মিনিট দুয়েক হেঁটে নিতে পারেন।
৬০ মিনিট হাঁটা
শুধু সু্স্থ থাকা নয়, হেঁটে ওজনও কমানো যায়। হাঁটলে শক্তিক্ষয় হয়। শরীরের অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি বেরিয়ে যায়। সপ্তাহে ৫ দিন ৬০ মিনিট করে হাঁটলেই ওজন কমানো সম্ভব হবে। তবে ধীরেসুস্থে নয়, হাঁটতে হবে দ্রুত। সঙ্গে খেতেও হবে মেপে।
৬ মিনিটে আর কোন কাজ?
৬-৬-৬ পদ্ধতিতে ৬ মিনিট গা গরম করার জন্যও বরাদ্দ। আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, ওয়ার্ম আপের ফলে শরীরে যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তা হিমোগ্লোবিন এবং মায়োগ্লোবিন থেকে অক্সিজেনকে আলাদা করতে সাহায্য করে। এতে মাংসপেশি এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বাড়তি অক্সিজেন পৌঁছয়। পেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়, স্নায়ুগুলিও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। পাশাপাশি, আচমকা পেশিতে আঘাত লাগার ঝুঁকিও কমে। সে কারণেই ৬ মিনিট ওয়ার্ম আপ বা গা গরম করে হাঁটাহাটি শুরু করার পরামর্শ থাকছে এই নিয়মে।
৬ মিনিট বিশ্রাম
যে কোনও শরীরচর্চাতেই হৃদ্স্পন্দন বৃদ্ধি পায়। দ্রুত হাঁটলেও তা হয়। তাই মাঝেমধ্যে হার্ট-সহ শরীরকে বিশ্রাম দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু ক্ষণ হাঁটাহাটির পর ৬ মিনিট করে থামতে বলা হচ্ছে।
হাঁটার ৬-৬-৬ নিয়মটি মানলে সুস্থ থাকা, ওজন বশে রাখা, মানসিক ভাবেও চনমনে থাকা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর এই অভ্যাস তৈরি হলে শারীরিক অনেক সমস্যাই কমে যেতে পারে।
(প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে হাঁটার এই নিয়মটি অনুসরণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।)