প্রতীকী চিত্র
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিকতম এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিগুলির মধ্যে একটি অঙ্গদান। অঙ্গদান প্রকৃতপক্ষে বিংশ শতাব্দীর একটি অন্যতম চিকিৎসা বিস্ময় যা সেই সময়ে বেশ কিছু মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচিয়েছিল। তার পর থেকেই অঙ্গদানের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু চাহিদা বাড়লেও এখনও নেই উন্নত পরিকাঠামো। এখনও অঙ্গদানে চিকিৎসাশাস্ত্র বেশ অনেকটাই পিছিয়ে।
অঙ্গদান শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে কোন মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে সুস্থ অঙ্গ নিয়ে কোনও অসুস্থ মানুষের জীবনে তা প্রতিস্থাপন করে তাঁকে নতুন জীবনদান করা। যে ব্যক্তির শরীর থেকে অঙ্গ নেওয়া হয় তিনি‘অঙ্গদাতা’বা ‘ডোনার’। আর যাঁর শরীরে সেই অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হচ্ছে, তাঁকে বলা হয় ‘গ্রহীতা’বা ‘রেসিপিয়েন্ট’৷ কিন্তু এখন প্রশ্ন হল সকলেই কি অঙ্গদান করতে সক্ষম?
হ্যাঁ, যে কেউ অঙ্গদান করতে পারেন৷ কারও বয়স, ধর্ম, জাত, সম্প্রদায় এবং অসুস্থতা অঙ্গদান করার ক্ষেত্রে বাধা হয় না৷ তবে দাতার সেই অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যাবে কিনা তা ঠিক করেন চিকিৎসকেরাই।
শিশুরাও অঙ্গদান করতে পারে৷ এ ক্ষেত্রে শিশুদের অভিভাবকের লিখিত অনুমতির প্রয়োজন হয়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে,অঙ্গদাতা অসুস্থ হলে বিশেষ বিশেষ কয়েকটি রোগের সম্পর্কে উপস্থিতি কড়া নজর দেওয়া প্রয়োজন৷ যেমন, ক্যান্সার, হেপাটাইটিস আক্রান্ত, এইডস (এইচআইভি পজিটিভ) রোগী। এ ছাড়াও কোনও ব্যক্তি নেশাগ্রস্ত হলে অঙ্গদান করাটা ঠিক নয়৷ কিন্ত ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিরা চোখের কর্নিয়া দান করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।
অঙ্গদানের বয়স:
অঙ্গদানের কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই। সদ্যোজাত থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিরাও অঙ্গদান করতে পারেন। তবে অঙ্গদান করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন আপনার দান করা অঙ্গটি সুস্থ কি না।
কারা দিতে পারেন না:
জীবিত অঙ্গদাতাদের ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে তাঁদের শারীরিক সুস্থতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই বিষয়ে চিকিৎসক পার্থ কর্মকার জানাচ্ছেন, “প্রথমত জীবিত ব্যক্তিদের অঙ্গ দানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু আইনি বিষয় রয়েছে। তার বাইরে দেখতে গেলে, আমরা বার বার দেখি ওই ব্যক্তির যেন কোনও ক্ষতি না হয়। প্রয়োজনীয় শারীরিক চিকিৎসা পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে তিনি অঙ্গদান করতে পারবেন কিনা।”
চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, সাধারণত কোনও ব্যক্তির সুগার, প্রেসারের মতো কো-মর্বিডিটি থাকলে তিনি অঙ্গদান করতে পারবেন না। এমনকি ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রেও এই কথাটি প্রযোজ্য। এই বিষয়ে চিকিৎসক পার্থ কর্মকার জানাচ্ছেন, “এইচআইভি বা হেপাটাইটিস সি-এর মতো রোগ কারও শরীরে বাসা বাঁধলে, সেই ব্যক্তি অঙ্গদান করতে পারেন না। যদিও এই সময় দাঁড়িয়ে অঙ্গদানের পরিমাণ কম থাকার কারণে এমন রোগীদের থেকেও আমরা অঙ্গ নি। এবং সেই অঙ্গ ওই একই রোগে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির শরীরেই প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে সাময়িকভাবে সেই গ্রহীতা সুস্থ থাকেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে দাতার লিভার বা কিডনি যদি ১০০ শতাংশ ফিট নাও থাকে, তা হলেও সেই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য বেছে নেওয়া হয়। এতে গ্রহীতা অন্তত খানিকটা সুস্থ থাকতে পারেন।”
অন্যকে নতুন জীবন দিন। এগিয়ে আসুন এবং অঙ্গীকার করুন অঙ্গদানের। ক্লিক করুন পাশের লিঙ্কে — bit.ly/47a6kLV