Organ Donation Awareness

অঙ্গদান আসলে জীবন দান! লিখছেন চিকিৎসক সৌরভ দিগম্বর ধুমালে

কেন অঙ্গদান সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ?

Advertisement

সৌরভ দিগম্বর ধুমলে

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:২৩
Share:

অঙ্গদান পবিত্র এবং মহৎ কাজ। অগণিত মানুষের জীবন রক্ষা করে তাঁদের বেঁচে থাকার নতুন আশা জুগিয়েছে অঙ্গদান এবং তাঁদের জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। অন্যান্য দেশগুলির মতো ভারতেও প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গের চাহিদা জোগানের তুলনায় অনেক বেশি। তাই অঙ্গদানের গুরুত্ব, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তা সম্পর্কে যে সব প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা মানুষকে অঙ্গদানের মতো কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, তা নিয়ে কলম ধরেছেন নারায়ণা মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সৌরভ দিগম্বর ধুমালে।

Advertisement

ভারতে কেন অঙ্গদান প্রয়োজন?

১। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কথা উঠলেই বড় সমস্যার মুখে পড়তে হয় ভারতকে। পরিসংখ্যান বলছে, ১৩০ কোটির দেশে দাতার অভাবে বহু মানুষ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য আজও অপেক্ষায়। নোটো-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য দাতার অপেক্ষায় আছেন। তবে সেই সংখ্যার কেবল একটি অংশই প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্গ পেয়েছেন।

Advertisement

২। জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে রোগের প্রকোপ। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এবং ক্রনিক কিডনির রোগগুলি অনেক সময়ে অঙ্গ বিকল করে দেওয়ার দিকে এগিয়ে দেয়। তাই যত দিন যাচ্ছে, বেড়ে চলেছে অঙ্গের চাহিদা, বিশেষত কিডনি এবং লিভারের। যা স্বভাবতই এই অঙ্গগুলির জোগানকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কেবলমাত্র সময় মতো অঙ্গদানই বাঁচাতে পারে এই সব রোগীর জীবন এবং কমাতে পারে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বোঝা।

৩। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা রোগীদের বেশির ভাগ সময়েই অঙ্গের অভাবে দীর্ঘ, বিরক্তিকর অপেক্ষায় থাকতে হয়। বহু রোগী তাঁদের উপযুক্ত দাতা পাওয়ার আগেই মারা যান। সচেতনতা এবং অঙ্গদানের বৃদ্ধিই পারে এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে।

কেন অঙ্গদান সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ?

১। অঙ্গদানের পথে একটি বড় বাধা হল এই নিয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত এবং ভুল ধারণা। ধার্মিক কারণে অনেকেই অঙ্গদানে ভয় পান। আবার অঙ্গদানের পরে শরীরের অবস্থা কী হবে, অঙ্গদান করলে নাকি মৃত্যু না হলেও মানুষকে মৃত বলে ঘোষণা করা দেওয়া হয়— এমন নানা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

২। অঙ্গদান সম্পর্কে এই সব ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে এবং সঠিক তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রয়োজন জনশিক্ষা এবং সচেতনতা। স্কুল, কলেজ, অফিস বা নানা সম্প্রদায়ের সংস্থাগুলির মধ্যে এই নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। যুক্তিযুক্ত ভাবে অঙ্গদানের উপযোগিতা এবং সেই সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।

৩। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরিবারের লোকের সঙ্গে অঙ্গদানের বিষয়ে আলোচনা করা। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের করা একটি সমীক্ষা বলছে, পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার পরে অঙ্গদানের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। খোলাখুলি আলোচনা করলে অনেক কঠিন সময়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হয়ে ওঠে।

৪। অঙ্গদান এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হওয়া রোগী বা দাতাদের গল্পের এক বিশেষ প্রভাব দেখতে পাওয়া যায় মানুষের উপরে। তাই এই ধরনের ঘটনা বা গল্প আরও বেশি করে প্রচার করলে তা সাধারণ মানুষকে অঙ্গদানে উদ্বুদ্ধ করবে বলে মত চিকিৎসকের।

কিছু প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা

১। অঙ্গদান আমার ধর্ম বিরুদ্ধ। আদতে কিন্তু বেশির ভাগ প্রচলিত ধর্ম অঙ্গদানকে একটি পবিত্র মানবিক কাজ বলেই গণ্য করে।

২। আমি যদি অঙ্গদাতা হই, তা হলে আমাকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসক ততটা গুরুত্বের সঙ্গে চিকিৎসা করবেন না। যা কখনওই সত্যি নয়। রোগীকে সুস্থ করে তোলা যে কোনও চিকিৎসকের পবিত্র কর্তব্য।

৩। অঙ্গদান করলে আমার চেহারা বিকৃত হয়ে যাবে। আদতে তেমন কিছু হয় না। এমনকি মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও শরীর থেকে অঙ্গ বার করে নেওয়ার পরে আবার সেই দেহ শেষকৃত্যের জন্য ফিরিয়ে দেওয়া হয় পরিবারকে।

৪। অনেকেই মনে করেন বেশি বয়সে অঙ্গদান করা যায় না। আসলে কিন্তু বয়স কোনও ভাবেই অঙ্গদানে বাধা হয়ে উঠতে পারে না।

অঙ্গদান হল এমন এক কাজ, যা অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম। ভারতে অঙ্গদান আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নানা রোগের কারণে অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনাও বাড়ছে দিন দিন। অঙ্গদান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, ভ্রান্ত ধারণা দূর করা এবং এই সম্পর্কে পরিবারের লোকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা পারে অঙ্গের চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে এই ফাঁক পূরণ করতে।

অন্যকে নতুন জীবন দিন। এগিয়ে আসুন এবং অঙ্গীকার করুন অঙ্গদানের। ক্লিক করুন পাশের লিঙ্কে — bit.ly/47a6kLV

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement