গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
আমার ছোটবেলা কেটেছে ঝাড়খণ্ডে। প্রবাসী বাঙালি বলতে যা বোঝায়। ছোটবেলার স্মৃতি আজ বড় ঝাপসা। তবু ভাসা ভাসা স্মৃতিগুলোকে বুনতে বসে মনে পড়ল, মা সব সময় বলতেন, অক্ষয় তৃতীয়া খুব শুভ দিন। যে কোনও ভাল কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে একেবারে আদর্শ।
ওই দিন মা বাহারি রান্না করতেন। সে অনেক রকমের পদ। এখন যদিও সে সব রান্নার নাম মনে করতে বললে পারব না। আজকের কথা নাকি? তবে বেশ মনে পড়ে, মেঝেতে বসে মা কুটনো কুটতেন, খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করতেন... বেশ বড় করেই পালিত হত এই উৎসব। ওখানে তো আত্মীয়-পরিজন তেমন ছিলেন না আমাদের। সেই অর্থে বিদেশবিভূঁই। তবে প্রতিবেশীরা আসতেন বাড়িতে। তাঁদের সঙ্গে হইহুল্লোড় চলত।
প্রতি বছর সন্ধেবেলায় একটা জমাটি আড্ডা বসত। পাড়ার কাকিমা-জেঠিমারা সব গোল হয়ে গল্প করতে বসতেন। আমরা যদিও সেই গল্পে খুব একটা সামিল হতাম না। পাড়ার বন্ধুরা মিলে তখন আমরা খেলায় ব্যস্ত।
মা সব সময় বলতেন, অক্ষয় তৃতীয়া খুব শুভ দিন
কলকাতায় আসার পর আমি সে ভাবে অক্ষয় তৃতীয়া খুব একটা পালন করিনি। মা বলতেন, ওই দিন ঘরে নতুন কিছু একটা কিনে আনতে হয়। খুব দামী কিছু, মানে সোনাদানাই যে কিনতে হবে এমনটা নয় কিন্তু। মা নিয়ে আসতেন ছোটবেলায়। তবে সত্যি কথা বলতে, আমি এখানে এসে যে সবসময় এই রীতিটা অনুসরণ করতে পেরেছি এমনটা নয়। যে বার পেরেছি নিয়ে এসেছি। যে বার পারিনি, আনিনি। এই যেমন এ বারের কথাই ধরুন, বাড়িতেই তো রয়েছি সেই কবে থেকে!
অক্ষয় তৃতীয়া এসে গেল। কিন্তু চার দিকে যা অবস্থা, সার দিয়ে মৃত্যুমিছিল, অসুস্থতার খবর, তাতে আর নববর্ষ, অক্ষয় তৃতীয়াএবং বাকি দিনগুলোর মধ্যে তেমন কোনও ফারাক নেই।
আসুন না, সবাই মিলে প্রার্থনা করি, পৃথিবী যেন খুব তাড়াতাড়ি এই বিপদ থেকে মুক্তি পায়। যাঁদের আমরা হারিয়েছি এই অসুখে তাঁদের জন্যও প্রার্থনা করি। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী— যাঁরা এই দুঃসময়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তাঁরা যেন সুস্থ থাকেন, নিরাপদে থাকেন, এই বিশেষ শুভ দিনে এই হোক আমাদের একমাত্র চাওয়া।