বন্ধ বেশির ভাগ দোকান, ফাঁকা ফুটপাতে বাজার। কালনায়। নিজস্ব চিত্র
পয়লা বৈশাখ কেটেছে অনাড়ম্বর ভাবে। অনেক ব্যবসায়ীই আশা করেছিলেন, রবিবার, ‘অক্ষয় তৃতীয়া’য় সেই ঘাটতি কিছুটা পূরণ হবে। কিন্তু ‘লডকাউন’-এর গেরোয় ফিকে লাগছে সে অনুষ্ঠানের আয়োজনও।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বাণিজ্যে লক্ষ্মীলাভের আশায় ছোট-বড় বহু প্রতিষ্ঠান এই তিথিতে গণেশ পুজো করে। চাহিদা থাকে মাটির মূর্তি, দোকান সাজানোর সামগ্রী থেকে ফল, মিষ্টির। কিন্তু এ বার পুজো না হওয়ায় সঙ্কটে ওই সব ব্যবসায়ীও। এমনকি, পরপর দু’টো অনুষ্ঠানে ডাক না পাওয়ায় মুশকিলে পড়েছেন অনেক পুরোহিতও। কাটোয়ার এক মৃৎশিল্পী তিনকড়ি পালের দাবি, ‘‘প্রতিবার লক্ষ্মী-গণেশের প্রতিমা বানিয়ে কুলোতে পারতাম না। এ বার পয়লা বৈশাখ ও অক্ষয় তৃতীয়া লকডাউনের মধ্যে পড়ে যাওয়ার আমাদের খুবই ক্ষতি হল।’’ মিষ্টি ব্যবসায়ী সুমন নাগ, দশর্কমা ব্যবসায়ী দীপক রায়, ফুল ব্যবসায়ী উৎপল সাহারাও জানান, অন্য বার এই সময়ে নাওয়া-খাওয়ার ফুরসত থাকে না। রোজগারও হয় ভাল। এ বার সবই ফিকে।
কালনা শহরের ব্যবসায়ীদের একাংশও ভেবে রেখেছিলেন, অক্ষয় তৃতীয়ায় মিষ্টিমুখ করাবেন ক্রেতাদের। কিন্তু অনুষ্ঠান করা যাবে না এ বার। মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানান, ‘লকডাউন’-এর শুরুতে দোকান খোলার অনুমতি ছিল না। পরে কম সময়ের জন্য দোকান খোলার অনুমতি মেলে। এখন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও খরিদ্দারের দেখা নেই। নিভুজি মোড় এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ী দেবরাজ বারুই জানান, প্রতিবারই লাড্ডু, গজা, বোঁদে, রসগোল্লার মতো প্রচুর মিষ্টির বরাত থাকে। এ বার একটাও বরাত আসেনি। শহরের গয়না ব্যবসায়ীদেরও দাবি, এ বার পয়লা বৈশাখে হালখাতা করা যায়নি। অক্ষয় তৃতীয়ায় বকেয়া টাকা পেলে সেই লোকসান কিছুটা কমবে আশা ছিল। তা-ও হল না।
বর্ধমান পুরসভার পাশের মিষ্টির দোকানের মালিক প্রসেনজিৎ দত্ত, বিসি রোড রানিগঞ্জ চৌমাথার ব্যবসায়ী দীনবন্ধু নাগরা, বর্ধমান স্টেশনের ব্যবসায়ী প্রমোদ সিংহের দাবি, নববর্ষের সমস্ত অর্ডার বাতিল হয়েছে। তার পরেও প্রতিদিন দোকান খুলেও মাছি তাড়াচ্ছেন তাঁরা। এ বার অক্ষয় তৃতীয়াতেও বিক্রির সম্ভাবনা নেই। বর্ধমানের মিষ্টি ব্যসবায়ী সমিতির এক কর্তা সৌমেন দাস বলেন, ‘‘নববর্ষ, অক্ষয় তৃতীয়া আর ভাইফোঁটায় মিষ্টির চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এ বার দু’টো অনুষ্ঠানই মার গেল।’’ একই দাবি ফুল বিক্রেতাদেরও। নববর্ষের মতো অক্ষয় তৃতীয়ায় মন্দির বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক সঞ্জয় ঘোষ।