হোলি হ্যায় পলিটিক্স হ্যায়

এত বর্ণময় নির্বাচন আগে কখনও দেখা যায়নি। তাই কি দোল এ বার দীর্ঘায়িত হবে? লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।‘...খোল দ্বার খোল লাগল যে দোল স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল।’ গানটা এখন টানা দু’মাস ধরে গাওয়া যেতেই পারে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৪:০০
Share:

‘...খোল দ্বার খোল লাগল যে দোল
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল।’

Advertisement

গানটা এখন টানা দু’মাস ধরে গাওয়া যেতেই পারে।

কারণ? এ বছর দোল পূর্ণিমাকে ঘিরে উত্‌সব আর দু’-একদিনের জন্য নয়। দীর্ঘায়িত হয়ে সে উত্‌সব নাকি চলবে টানা দু’মাস। আবির বা পিচকারি, না-ই বা থাকল মানুষের হাতে। তবে টেলিভিশনের শো থেকে র্যালি এই দু’মাস তো রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ একেবারে রঙিন করে রাখবেন তারকারা।

Advertisement

দেশের সংসদীয় ইতিহাসে বছরের পর বছর সাংবাদিকতার সেরা কালার কপিগুলোর একচেটিয়া অধিকার ছিল গো-বলয়ের। কিন্তু এই নির্বাচনে তৃণমূল কিংবা বিজেপির সৌজন্যে এ রাজ্যে প্রচারপর্ব বেশ বর্ণময়। মুম্বইয়ে অনেক বার অমিতাভ বচ্চনের হোলি পার্টিতে গিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। এখন হোলি খেলেন না। তবে বলছেন আগামী দিনগুলোতে তাঁর জীবনে ‘রঙ বরসে’র বদলে হবে রাজনীতি বরসের ‘সিলসিলা’। ইতিমধ্যেই অনুরোধ এসেছে অপোজিশনের বিরুদ্ধে ‘হটা সাওন কী ঘটা’ গানটা মজা করে গান। কিন্তু উনি ও সব কিছুই করবেন না। “খালি গলায় গান গাইতে আমি রাজি আছি। তবে মিউজিশিয়ান থাকবে না আমার প্রচারে,” সাফ জানালেন বাবুল।

তারকারা একা নন। তাঁদের সঙ্গে পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদদের বাক্যুদ্ধও যথেষ্ট রং আনবে প্রচারপর্বে। ইলেকশনের মঞ্চে যদি গায়কদের হাতে চিরকুটে লেখা গানের রিকোয়েস্ট আসে, পি সি সরকারকে কি তা হলে অপোজিশন লিডারদের ছবি ‘ভ্যানিশ’ করে দেওয়ার অনুরোধ আসবে? “ভাগ্যক্রমে উদয়শঙ্কর বা রবিশঙ্কর কখনও নির্বাচনে দাঁড়াননি। তা হলে কি মানুষ তাঁদের ধর্মতলার মোড়ে একটু নেচে বা সেতার বাজাতে বলতেন? আমি মানি যে এ বছর সব থেকে রঙিন নির্বাচনের প্রচার হবে। কিন্তু জাদু দেখানোর জায়গা নির্বাচনের মঞ্চ নয়। রং থাকলে আপত্তি নেই। কিন্তু সেটা যেন ‘wrong’ না হয়ে যায়,” বলছেন বিজেপি প্রার্থী পি সি সরকার (জুনিয়র)।

বেশ কিছু বছর ধরে এপ্রিল-মে মাসে ছবি মুক্তি পাওয়া নিয়ে একটা বিশাল অসুবিধা হত, আইপিএল-এর রমরমা। তবে ইদানীং বিতর্কের জেরে আইপিএল নিয়ে উত্তেজনা খানিকটা কমলেও, নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে তারকাদের নির্বাচনী প্রচার ঘিরে উন্মাদনা। টেলিভিশন ডিবেটে দেব-মুনমুন-বিশ্বজিত্‌-দের দেখতে উত্‌সাহ তুঙ্গে। দু’মাস হলে না গিয়েও যদি ৩২ ইঞ্চি টেলিভিশনে এঁদের দেখা যায়, ক্ষতি কী!

আগামী সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে ‘ভূতের ভবিষ্যত্‌’য়ের হিন্দি রিমেক ‘গ্যাং অব ঘোস্ট’। সে ছবির পরিচালক সতীশ কৌশিক বলছেন, “নির্বাচনের প্রচার এখন এন্টারটেইনিং। মিডিয়া তা কভার করবে। লোকে তা দেখবে, পড়বে। নির্বাচন এগিয়ে এলে সিনেমার প্রচারের জায়গাটা কমে আসবে।”

এই তো সে দিন এক নেতা বলেই বসলেন যে, আগামী দিনে পার্লামেন্টে নাকি ‘পাগলু ডান্স’ হবে! আর এক জনের পাল্টা প্রশ্ন, দেব কি এ বার ঘাটালে গিয়ে সব বক্তৃতার শেষে বলবেন ‘চ্যালেঞ্জ নিবি না’?

শব্দ বোমা ফাটতে শুরু করেছে চারিদিকে। আর সেখানেই এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট। আশ্চর্য হবেন না, যদি টালিগঞ্জের চিত্রনাট্যকাররা লেখেন প্রচারের পাঞ্চলাইন। অনেকটা ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’য়ের ধাঁচে। যেখানে সিরিয়াস কথা বলা হবে বিনোদনের মোড়কে। আর সে কথাই বলছেন এবিপি আনন্দের এক্সিকিউটিভ এডিটর সুমন দে। স্বীকার করছেন এত বর্ণময় নির্বাচন কখনও দেখেননি। বলছেন, “এবিপি আনন্দ-র ‘ফিল্মস্টার’ অনুষ্ঠান দেখলে রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বলে ভুল হচ্ছে। আবার রাত ন’টার বুলেটিনটাকে ফিল্মের প্রোগ্রাম বলে এখন চালিয়ে দেওয়া যায় অনায়াসে। স্টুডিয়োতে সিপিএম-তৃণমূলের রাজনৈতিক কাজিয়ার প্রশ্নর পাশাপাশি এ বার তাই আমাকে ঠাঁই দিতে হচ্ছে দেব-এর কুর্তার ডিজাইন আর মুনমুন তনয়াদের হট প্যান্টসকেও।”

সব মিলিয়ে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচন যেন এক দীর্ঘায়িত রঙিন উত্‌সব। হয়তো বা বলা যেতেই পারে, খোল দ্বার খোল লাগল যে দোল/ নির্বাচনের প্রচারে লাগল যে দোল।

মুনমুন সেন

লোকসভা কেন্দ্র: বাঁকুড়া।

এপ্রিল-মে মাসের তাপমাত্রা: ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পছন্দের রং: ক্রিম।

সানগ্লাস: জীবনে মাত্র পাঁচবার সানগ্লাস ব্যবহার করেছি। এ বারও করব না।

সানব্লক: না। ডাক্তার বলেছে সেটা আমার জন্য ভাল না।

পোশাক-আশাক: দিনের বেলায় ঠিক করেছি সাদা ধনেখালি শাড়ি পরব। রাতে শিফন। সঙ্গে সাদা স্নিকার্স।

কী গান শুনবেন: মনে হয় না গান শোনার সময় থাকবে। লোকের সঙ্গে কথা বলতে হবে তো!

কী খাবেন: গরম ভাত, ঘি দিয়ে। তার সঙ্গে আলুভাজা। আর পোস্ত বাটা।
আমিষের প্রতি আমার কোনও আকর্ষণ নেই।
ধাবার খাবারও চলতে পারে। শুধু খাবারটা গরম আর পরিষ্কার হওয়া চাই।


ভাইচুং ভুটিয়া

লোকসভা কেন্দ্র: দার্জিলিং।

এপ্রিল-মে মাসের তাপমাত্রা: ২০-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পছন্দের রং: লাল।

সানগ্লাস: আর্মানির সানগ্লাস পরি।

সানব্লক: ক্যাম্পেনের সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করছি ।

কী পরবেন: জিন্স-টি শার্ট। অথবা জিন্স-কুর্তা। হাল্কা রঙের টি শার্ট বা কুর্তাই আমার পছন্দ।
সঙ্গে নাইকির জুতো। স্যুটকেসে অবশ্যই থাকে দু’-তিন জোড়া ট্র্যাকস্যুট।
সঙ্গে একটা লেদার ব্যাগ ও মোবাইল।

কী গান শুনবেন: গান-টান শোনার সময় থাকবে না। ক্যাম্পেনের সময় জনসংযোগটাই মুখ্য উদ্দেশ্য।

কী খাবেন: খুব অনিয়ম হয়ে গিয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল, হেল্থ ড্রিঙ্কস আর জুস খাচ্ছি।


সন্ধ্যা রায়

লোকসভা কেন্দ্র: মেদিনীপুর।

এপ্রিল-মে মাসের তাপমাত্রা: ৩৫-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পছন্দের রং: স্থলপদ্মের গোলাপি রং।

সানগ্লাস: আজকাল পরি।

সানব্লক: না। ছোটবেলা থেকেই। আমি মুখে সর্ষের তেল মাখি। তার ওপর পন্ডস ক্রিম।
গরম জলে তুলো ডুবিয়ে তার পর মুখ মুছে নিই।

পোশাক-আশাক: অফ হোয়াইট বা হাল্কা গোলাপি রঙের তাঁতের শাড়ি পরব।
চটি নয়, ডক্টরস শ্যু-ই পরি।

কী গান শুনবেন: প্রচারে বেরোলে প্রথম বার মোবাইল নেব। তবে গান ডাউনলোড করব না। সিডিতে শুনব। রবীন্দ্রসঙ্গীত, লতা- রফিজির হিন্দি গান শুনব।

কী খাবেন: হাতরুটি, সেদ্ধ সব্জি, ছানা খাব। রাস্তার খাবার খাব না।

সৌমিত্র রায়

লোকসভা কেন্দ্র: উত্তর মালদা।

এপ্রিল-মে মাসের তাপমাত্রা: ৩৯-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পছন্দের রং: আকাশি।

সানগ্লাস: হ্যাঁ, পরি। তবে কোনও নামী-দামি ব্র্যান্ডের শখ নেই।
‘যাদবপুর ৮বি ব্র্যান্ড’য়েই আমার বেশ চলে যায়।

সানব্লক: বৌ এ বার গিফ্ট করেছে। সেটাই ব্যবহার করব বলে ঠিক করেছি।

পোশাক-আশাক: হাল্কা রংয়ের সুতির কুর্তা বৌ কিনে দিয়েছে। সেগুলো পরব।
তার সঙ্গে জিন্স। আর পায়ে স্নিকার্স।

কী গান শুনবেন: ঘুমোতে যাওয়ার আগে আইপডে শুনব ওয়ার্ল্ড মিউজিক। তবে ‘ভূমি’র গান নয়।

কী খাবেন: বিস্কুট, ছাতু, শশা, মুড়ি।

তাপস পাল

লোকসভা কেন্দ্র: কৃষ্ণনগর।

এপ্রিল-মে মাসের তাপমাত্রা: ৩৫-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পছন্দের রং: গোলাপি।

সানগ্লাস: ব্র্যান্ডেড সানগ্লাস পরি। ট্র্যান্সপারেন্ট সানগ্লাস আমার পছন্দ।

সানব্লক: না। রোদে-জলে শ্যুটিং করেছি। কোনও দিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করিনি।

পোশাক-আশাক: সুতির পাঞ্জাবি-পাজামা। হাল্কা নীল বা সবুজ পাঞ্জাবি। সঙ্গে স্নিকার্স।

কী গান শুনবেন: ও সব শুনি না। এটা একটা বিরাট কাজ। সেখানে গান শোনার সময় থাকে না।

কী খাবেন: খুব সাধারণ খাবারদাবার। ডাল-ভাত খাওয়া মানুষ। সকালে হয়তো মুড়ি বা রুটি
খেয়ে বেরিয়ে যাই। রাস্তায় গরম শিঙাড়া আর চা খেতে ভালবাসি।

শতাব্দী রায়

লোকসভা কেন্দ্র: বীরভূম।

এপ্রিল-মে মাসের তাপমাত্রা: ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পছন্দের রং: আপাতত হলুদ।

সানগ্লাস: ব্র্যান্ডেড সানগ্লাস আছে। তবে আমার যেটা দেখতে ভাল লাগে সেটাই পরি।

সানব্লক: না করিনি। তবে এখন ডাক্তার বলেছেন যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করাটা জরুরি।

পোশাক-আশাক: বীরভূমে ঢোকার পরই শাড়ি আর ফুলস্লিভ ব্লাউজ পরতে হয়। হিল পরতে আপত্তি নেই।

কী গান শুনবেন: না, না। প্রচারের সময় প্রতি দু’মিনিট অন্তর অন্তর মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়।

কী খাবেন: মঙ্গলবার নিরামিষ। হয়তো একটু বিস্কুট থাকে সঙ্গে।
এ ছাড়া রাস্তায় যেতে যেতে যা পাওয়া যায় তাই খাই।

বাবুল সুপ্রিয়

লোকসভা কেন্দ্র: আসানসোল।

এপ্রিল-মে মাসের তাপমাত্রা: ৩৯-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পছন্দের রং: সাদা।

সানগ্লাস: বেশ কয়েকটা রোদচশমা রয়েছে। এখন পরি পোলিস ব্র্যান্ডের একটা ট্রান্সপারেন্ট রোদচশমা।

সানব্লক: ছেলেদের ফেয়ারনেস দিয়েছে মা। কিন্তু প্রচারে গিয়ে ‘গ্রিক ট্যান’ হলে আপত্তি নেই।

পোশাক-আশাক: জিন্স আর সাদা শার্ট। পায়ে গলিয়ে নেব স্টাইলিস্ট চটি।

কী গান শুনবেন: আমার দুটো ৬৪ জিবির আইফোন ভর্তি নানা রকমের গান আর ভিডিও আছে।
সেখানে এলভিস প্রেসলি থেকে ন্যাট কিং কোল থেকে ট্রান্স সব কিছুই রয়েছে।
তবে কোনও হার্ড রক বা মেটাল শুনি না।

কী খাবেন: লিক্যুইড ডায়েটে থাকব। মাকে বলেছি শরবতের নানা রকম রেসিপি জোগাড় করতে।

অর্পিতা ঘোষ

লোকসভা কেন্দ্র: বালুরঘাট।

এপ্রিল-মে মাসের তাপমাত্রা: ২৮-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পছন্দের রং: নীল।

সানগ্লাস: ফাস্ট ট্রাকের কালো রোদচশমাই ব্যবহার করি।

সানব্লক: ল্যাকমের সানস্ক্রিন।

পোশাক-আশাক: জিন্স নয়। শাড়ি আর চুড়িদার পরব। হাল্কা ছাপা শাড়ি। প্রিন্টেড।
কণিষ্ক বা লে পক্ষী-র শাড়ি কিনে নেব ঠিক করেছি। আর চুড়িদারগুলো হয়তো
প্যান্টালুনস্‌ বা ওয়েস্টসাইড থেকে। ফুল স্লিভ চুড়িদারই আমার পছন্দের। সঙ্গে পা ঢাকা জুতো।

কী গান শুনবেন: ফোনে মৌসুমী ভৌমিক, বিক্রম সিংহের রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে শুরু করে
হিন্দি গান সবই আছে। রাহাত ফতে আলি খানের সুফি গান আমার পছন্দের।

কী খাবেন: সেদ্ধ খাবার খাব। মুড়ি নিয়ে বেরোব। তার সঙ্গে চা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement