বেশি দিন নয়। সপ্তাহখানেক আগে পরমব্রত ফোন করেছিল। তখনই বলে যে, ওর নতুন ছবির বিষয়টা ফুটবল। আর সেখানে কোচ আমাদের বিশুর (বিশ্বজিৎ) ছেলে প্রসেনজিৎ। পরম তখনই প্রস্তাব দেয়, ছবিতে প্রসেনজিৎকে একজন বিশ্বাস্য কোচ হিসেবে তুলে ধরতে আমার টিপস লাগবে। ছাত্রের নাম যখন প্রসেনজিৎ তখন রাজি না হয়ে উপায় আছে? বুম্বা আমার প্রিয় ফিল্মি ব্যক্তিত্ব। ওকে সেই আট বছর বয়স থেকে চিনি। ‘লড়াই’ ছবির জন্য ওকে এই টিপসগুলো কিন্তু মাথায় রাখতেই হবে:
আমি ফুটবলার নই, অভিনেতা
আমি যেমন অভিনয় করব না। তেমনই বুম্বাও ফুটবল কোচ হবে না বাস্তবজীবনে। কিন্তু ছবিতে ওকে ফুটবল কোচের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। স্রেফ এই কথাটাই বুম্বাকে আত্মস্থ করতে হবে। কারণ একবার যদি ও ভেবে বসে যে আমাকে ফুটবল কোচ হতে হবে, তা হলে কিন্তু অবচেতন মনে চাপ বাড়তেই পারে। ও অভিনেতা। জোর দিক, অভিনয় ঠিক করার ব্যাপারে।
ফিটনেস বাড়াতে হবে
চিত্রনাট্য বলছে বুম্বা ছবিতে এমন একজন ফুটবল কোচ, যে দুর্ঘটনার কারণে খেলা ছেড়ে কোচিং-এর লড়াইটা বেছে নেয়। সুতরাং এই কোচ কম বয়সী। বয়স অনুপাতে ফিটনেস, ক্ষিপ্রতাটা তো থাকবেই। সঙ্গে দরকার হবে আরও দুটো জিনিস। বলের ওপর দখল এবং খেলার ওপর জ্ঞান। দ্বিতীয়টা না হয়, পরমব্রতর পরিচালনা আর সংলাপে উতরে যাবে। কিন্তু বলের ওপর দখলটা ওকে অর্জন করতেই হবে। তার জন্য রিসিভিং, পাসিং, শুটিংটা প্র্যাকটিস করুক। আর ফিটনেস বাড়াতে স্ট্রেচিং, অ্যাবডোমিনাল এক্সাসাইজ, ডন বৈঠক, বাইসেপস, ট্রাইসেপস-এর ব্যায়ামও নিয়ম করে করতে হবে। ফিটনেস এলে তবেই না স্কিল আসবে।
হাফ প্যান্ট পরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িও না
জানি প্রসেনজিৎ নিয়ম করে জিমে যায়। ওয়ার্কআউটে ফাঁকিবাজি করে না। কিন্তু ওর কাফ মাসলটা অত জোরদার নয়। এই জায়গাটা শুধরে নেওয়ার জন্য আমার টিপস, হাফ প্যান্ট পরে ক্যামেরার সামনে নয়। ট্র্যাক প্যান্ট পরেই যেন শুটিং করে ও।
সারাদিনে প্রচুর জল আর ফল
গরম কালে শুটিং চলবে। আবার নিজেকে ফিটও রাখতে হবে। তাই প্রচুর ফল আর জল ডায়েট চার্টে রাখ। প্রসেনজিতের শরীরে ওয়াটার ব্যালেন্স নষ্ট হলে শুটিং-এর সময় সমস্যা হতেই পারে। সেটাকে এড়িয়ে চলতে হবে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বল রোজ
জানি, এ কথাটা শুনে অনেকের কপালেই ভাঁজ পড়বে এটা ভেবে যে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে আবার প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিপস শুনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলা প্র্যাকটিস করতে হবে! আসলে ব্যাপারটা হল ফুটবলারদের পেপ টক দেওয়া। সেটা যে আবেগপূর্ণ সংলাপ হলেই হয়ে গেল তা কিন্তু নয়। এর সঙ্গে লাগে যুক্তি। যিনি বক্তব্য রাখছেন তাঁকে বিষয়টার মধ্যে ওতপ্রোত ভাবে মিশে যেতে হয়। হাসি-ঠাট্টা, গল্প, বকাঝকা, এমনকি গালাগালও করতে হতে পারে। কী ভাবে ফুটবলারদের সঙ্গে এই কথাবার্তা চলবে সেটা ওকে মোহনবাগান মাঠে হাতে কলমে দেখিয়েছি। এই বার বই বা ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন বিষয় বেছে নিয়ে তা ভাবে আয়নাকে ফুটবলার হিসেবে ভেবে নিয়ে অনর্গল কথা বলে যেতে হবে আবেগ আর অঙ্ক মিশিয়ে। ওর রিঅ্যাকশনটাও হবে দ্রুত। তার জন্য ওর সঙ্গে আর একদিন আমি বসব। সুধীর কর্মকার, জার্নেল সিংহদের কীভাবে উদ্দীপ্ত করা হত, সে সব গল্প বলেছি ওকে। বুম্বার মাথাটা খুব পরিস্কার। যা বলেছি, আমার ধারণা এর থেকে ঠিক বুঝে নিতে পারবে। আমার ছাত্র একশোয় লেটার সহ পাস করবে বলে আমি নিশ্চিত।