অফ শোল্ডার গাউন, বুকের বাঁধনে উন্মুক্ত পিঠ। অথবা হল্টার ব্লাউজ, পেলব খোলা পিঠ, যেন মাধুর্যের শেষ কথা। আর সেই পিঠেই নেশা ছড়াচ্ছে আহ্লাদিনী নেকলেস। খোলা পিঠের সব গোপন কথাই যেন ওই একফালি গয়নায় বন্দি। অফিস-পার্টি, বিয়েবাড়ি থেকে বিশ্বকাপ দেখার বন্ধু পার্টিতে এখন ব্যাক নেকলেস পরার ধুম লেগেছে। স্টেটমেন্ট জুয়েলারির ময়দানে আংটি বা চোকারকে ক্নিন বোল্ড করে এই পিঠের হার ফ্যাশন দুনিয়া তোলপাড় করছে।
বলিউডের বিখ্যাত অ্যাকসেসরি ডিজাইনার সুনয়না খৈতান বলছেন, “এ বছর ভাইব্র্যান্ট, বোল্ড, ফাঙ্কি গয়নার বছর। এমন কোনও গয়না, যা শরীরের একটা অংশকেই কেবল হাইলাইট করবে এবং একটা নিজস্ব স্টেটমেন্ট তৈরি করবে। সেদিক থেকে এখন পিঠে নেকলেস পরার চাহিদা বাড়ছে। আর এটা পরলে আর কিছুই পরার দরকার হয় না।”
ক্যারি করতে জানা চাই
“পকেট মানি থেকে টাকা বাঁচিয়ে আমি গয়না কিনি। কলেজে তো আর রোজ এক গয়না পরা যায় না। সে ক্ষেত্রে ফাঙ্কি, জাঙ্ক জুয়েলারি আমার পছন্দ। আর গরমে পিঠ খোলা কুর্তি, হল্টার, ট্যাঙ্ক টপ যা-ই পরি না কেন পিঠে একটা নেকপিস ঝুলিয়ে নিই। লুকটাই বদলে যায়”, বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তিলোত্তমা সেন। জুয়েলারি ডিজাইনার সুনীতা ভার্মা অবশ্য বলছেন অন্য কথা। তাঁর মতে, “চাইলেই কিন্তু কেউ ব্যাক নেকলেস পরতে পারেন না। একবার ভাবুন তো, পশ্চিমী পোশাকের সঙ্গে ব্যাক নেকলেস পরা খুব সোজা বিষয় নয়। এখানে ক্যারি করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে চাই খোলা পিঠের আত্মবিশ্বাস।”
নীচু কাটে জমবে দেদার
যাঁরা গয়নার ক্ষেত্রে অফ বিট যেতে চান এবং নিজের ব্যক্তিত্বকে গয়নার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করতে চান, তাঁরাই এই এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন বলে পরামর্শ দিচ্ছেন ডিজাইনাররা। তাঁদের মতে, সাজে উপেক্ষিত পিঠকে ভাল ভাবে প্যাম্পার করার সুযোগ দিতেই ফ্যাশনে জায়়গা করে নিয়েছে এই ব্যাক নেকলেস। গাউন-আনারকলি-শাড়ির মতো সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেই চলতে পারে এই ব্যাক নেকলেস। পোশাকের কাট যত নিচু হবে, ততই জমবে নেকলেসের জৌলুস। ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল বলছেন
যে সমস্ত পোশাকের পিছনের কাট কোমর থেকে শুরু, সেই সব ধরনের পোশাকেই ব্যাক নেকলেস একটা ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবে চলতে পারে। পিঠের কাট যত ডিপ হবে ততই স্লিম লাগবে। সেই কারণেই ভারতীয়দের মধ্যে এই কাটের এত চাহিদা। তবে ব্লাউজের ক্ষেত্রে ডিপ কাট বা ব্যাকলেস ব্লাউজই যথেষ্ট। সেটা কোমর অবধি না গেলেও চলবে।
গলার হারেই ব্যাক-স্টাইল
যে কোনও গলার হারকেই কি ব্যাক নেকলেস হিসেবে পরা যায়? অগ্নিমিত্রা বলছেন, “সকলের বাড়িতেই এমন কোনও নেকলেস থাকে যেগুলো গলার হার করে আর পরতে মন চায় না। সেই হারগুলোকে পিঠকাটা ব্লাউজ বা আনারকলির সঙ্গে সেলাই করে দিলেও কিন্তু একটা স্টানিং লুক আসে। ব্যাক নেকলেস হিসেবে পরলে অনেক সময় সামনের দিকে গলাতে হারটা আটকে থাকে, ফলে একটা অস্বস্তিও হয়। হারটা পোশাকের সঙ্গে সেলাই করে নিলে কিন্তু এই অস্বস্তিটা কাটিয়ে তোলা যায়”। তবে গাউনের সঙ্গে ব্যাক নেকলেসকে টিম আপ করতে হলে কোমর অবধি গাউনের অংশ খোলা রাখতেই হবে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন সুনয়না খৈতান। আর ওই নগ্ন পিঠে যদি লম্বা লেয়ারিং-এর চিক-হারের ঝালর ঝুলিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে তো কথাই নেই, সোহাগের শরীরে সেক্সি পিঠ-ই হবে সব না বলা কথার শেষ কথা।
কোন পোশাকে কেমন হার
কুন্দন, কালার বিড, চেন সেটিং-এর পাথর বসানো, স্টিল বা লোহার পাত দেওয়া হরেক ডিজাইনের নেকপিস অনলাইনে ঢেলে বিক্রি হচ্ছে। ফ্লিপকার্ট বা অ্যামাজন বলে সার্চ দিলেই তার সন্ধান পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাটের ফুটেও বিক্রি হচ্ছে হরেক রকম নকশা করা হার। দাম আড়াইশো থেকে আটশো টাকার মধ্যে। কোনওটায় প্যাঁচার বা হাতির মুখ লম্বা চেনে ঝুলছে। কোনওটা বা ছোট ছোট চাকতির আকারে বিড দিয়ে গাঁথা। কোথাও বা কুন্দনের ছড়া। টি-শার্ট, ম্যাক্সি ড্রেস বা টার্টল নেক শার্টের সঙ্গে এই ধরনের হার মানানসই।
হারের দৈর্ঘ্য ছোট হলে বা চিকের আকারের হলে তার সঙ্গে ডিপ কাটের ব্লাউজ অথবা আনারকলি চলতে পারে। এক্ষেত্রে সোনা বা রুপোর হারও পরা যেতে পারে। মাল্টি চেন ব্যাক নেকলেসেরও খুব চল এখন, বলছেন অগ্নিমিত্রা। সে ক্ষেত্রে কোমর অবধি খোলা পোশাক পরতেই হবে। স্কার্ট বা র্যাপার স্কার্টের সঙ্গে এথনিক পিঠ খোলা টপ পরেও পরতে পারেন ব্যাক নেকলেস।
ব্যাক নেকলেসে
চলবে না
• চুল খোলা রাখবেন না
• ব্যাক নেকলেস পরলে লম্বা দুল বা হাতে ভারী গয়না পরবেন না
• খুব ভারী হার পরবেন না, হাঁটতে অসুবিধা হবে
• ব্যাক নেকলেস আসলে ক্যাজুয়াল অ্যাকসেসরি। তাই অফিসে না পরাই ভাল
যা করতে হবে
• ব্যাক নেকলেস পরলে ব্যাক পলিশ অবশ্যই করাতে হবে
• কোমর অবধি খোলা আনারকলি, ব্লাউজ বা গাউনের ক্ষেত্রে ফিটেড কাপস্ পরতে হবে
• হাই হিল বা স্টিলেটো পরতে হবে
• মেক আপ সিম্পল রাখতে হবে
লাঞ্চের অবসরে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া।
বোর্ডিং পাস নেওয়ার আগে সেলফি সোনাক্ষী সিংহের।