লোকে বলছে কলকাতায় ফ্যাশন ডিজাইনার প্রণয় বৈদ্য এখন এক নম্বরে। শুনতে কেমন লাগছে?
আমার তো ভালই লাগছে।
তা হলে সব্যসাচীকে কত নম্বরে রাখবেন?
দেখুন ডিসেম্বরে প্রণয় বৈদ্য ব্র্যান্ড তিন বছরে পা দিল। সবে তো শুরু, আর সব্যসাচী আমার সিনিয়র, আমি ওঁকে কী নম্বর দেব? অনেক দিন কাজ করছেন। ওঁকে শ্রদ্ধাও করি। তবে এটাও ঠিক এখন কেউ বিয়ের পোশাক সব্যসাচীর থেকে নিলে মেহেন্দি বা সঙ্গীতের পোশাকটা কিন্তু আমার থেকেই কেনেন বা জ্যাকেটটা ওঁর থেকে নিলে ধুতিটা আমার থেকেই নেন। এটা নিশ্চয়ই এনজয় করি।
আচ্ছা এটা তো মানবেন আজকের প্রজন্ম শাড়ি পরতে চায় না, সেখানে আপনি তো দেখছি শাড়ি, ধুতি নিয়েই কাজ করছেন। বলুন তো আপনার পোশাক লোকে পরবে কেন?
আমি নিজেই আজকের প্রজন্মের লোক। জানি আমার বান্ধবীরা কুঁচি করার ভয়ে, ওজনের জন্য শাড়ি এড়িয়ে চলে। আমি তাদের জন্যই হাল্কা ফ্যাব্রিকের স্টিচ শাড়ি বানিয়ে দিচ্ছি, সেটা জাস্ট র্যাপার স্কার্টের মতো জড়িয়ে নিলেই হবে। কোঁচাটা পর্যন্ত সেলাই করে দিচ্ছি। কন্টেম্পরারি প্রিন্টস্ দিচ্ছি, ইন্ডিয়ান ওয়্যারে পাশ্চাত্যের মোটিফ বসছে। ব্লাউজটাকেও খুব আকর্ষণীয় করে তৈরি করা হচ্ছে। ব্যস! কোনও ঝামেলাই নেই, সক্কলে পরছেন। ছেলেরাও ভাইব্র্যান্ট কালারের রেডিমেড ধুতি, নেহরু জ্যাকেট খুব কিনছেন আমার কাছ থেকে। দেখুন কলকাতায় কিছুই নতুন হয় না, এটা কিন্তু আমার পোশাক পরার পরে লোকেরা আর বলেন না। উল্টে বার্লিন থেকে বালি এখন সকলেই ভারতীয় পোশাক পরতে চাইছেন।
সচিন তেন্ডুলকর নাকি আপনার পোশাক পরেছিলেন?
ওই মুহূর্তটা কখনও ভোলার নয়। সচিন অনলাইনেই আমার পোশাক দেখেছিলেন। তার পরে সেটা কিনেছিলেন। নোটও পাঠিয়েছিলেন আমায়। সেটা আমায় খুব উত্সাহ দিয়েছিল।
দেব-নীল,অভিষেক, শান্তনু এঁরা তো আপনার অনেক আগে থেকে কাজ করছেন। আপনাকে কোনও ঈর্ষার সম্মুখীন হতে হয়নি?
প্রতিযোগিতা তো স্বাস্থ্যকর।
কিন্তু সম্প্রতি একটি পত্রিকার ব্রাইডাল ইস্যুতে তো তরুণ তেহেলানির পোশাকের চার পাতা ডিসপ্লে ছিল, সেখানে আপনার কালেকশন ছিল সাত পাতা জুড়ে। এটাকেও কি খুব হেলদি প্রতিযোগিতা বলবেন?
আপনি যেমন ভাবছেন বিষয়টা তেমন নয়।
মানে? কী ভাবছি আমি?
আমি কিন্তু পেজ থ্রির ডিজাইনার নই। পার্টি করব, পি আর করে নিজের সাক্ষাত্কার ছাপাব। আজও আমি অনেক বেশি খুশি হব যদি আমার সম্পর্কে ভাল ভাল কথা লেখার বদলে আমার পোশাক কেউ পরেন।
‘বচ্চন’-এর মতো ছবির সঙ্গে আপনার এই ট্র্যাডিশন,এথনিসিটিকে কেমন করে মেলালেন?
জিত্ ছবির গানের ফানি সিকোয়েন্সের জন্য ফোক স্টাইলের পোশাকের কথা বলেছিলেন। তো আমিও কালারড ধোতি, স্টিচড্ লেহেঙ্গা ব্যবহার করেছিলাম ছবিতে। আমার ফর্ম থেকে কিন্তু আমি সরে আসিনি।
কখনও মনে হয় না প্রণয় বৈদ্যর এই ফর্মটাই একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে? সেই ঘাগড়া,শাড়ি...
একেবারেই নাহ। আরে ওটাই আমার ব্র্যান্ড। ধরা যাক শাড়ি, একই শাড়ি তো থাকছে না। বটানিকাল প্রিন্টের জায়গায় মাস্ক প্রিন্ট আসছে। লোকে ওটাই তো চায় আমার কাছে।
প্রসেনজিত্ থেকে কোয়েল, সকলেই তো আপনার পোশাক পরেছেন। কিন্তু এমন কেউ আছেন যাঁকে আপনি সাজাতে চাইবেন?
অমিতাভ বচ্চন আর রেখা। উফফফ!! আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাই ওই জুটির কথা ভাবলে।
আর কলকাতায়?
রাইমা, কোয়েল আর পার্নোকে সাজাতে বেশ লাগে। ‘চতুষ্কোণ’-এ পায়েলের ভিনটেজ লুকটা খুব ভাল লেগেছে। জিত্, প্রসেনজিত্, সাহেব ( ভট্টাচার্য) কেও আমার পোশাকের সঙ্গে দারুণ মানায়।
আপনিই তো শুনেছি বাংলা ছবিতে কাজ করতে চান না, তাহলে?
দেখুন মুম্বইতে সঞ্জয়লীলা বনশালি ছবির পোশাকের ক্ষেত্রে যে ভাবে যত্ন নেন সেটা ভাবাই যায় না। এখানে বাজেটেই তো সব আটকে যায়। কাজ করব কী করে?
তার মানে প্রণয় বৈদ্য বেশ এক্সপেন্সিভ?
এটা একদম ভুল। আমার শাড়ি শুরু হয় জাস্ট সাড়ে আট হাজার টাকা থেকে, পনেরো-আঠারোর রেঞ্জে অ্যাট্রাক্টিভ ব্লাউজও থাকে, যেখানে অন্য ডিজাইনারদের শাড়িই শুরু হয় তিরিশ হাজার থেকে। মোটা,রোগা,বেটে,যে কেউ আমার পোশাক পরতে পারেন। শরীর নয়, কে কী ভাবে পোশাক পরছেন সেটাই আসল।
কিন্তু লোকে তো বলছে আপনি ফ্রিদা কালোকে নকল করে বাজার কাঁপাচ্ছেন, এটা সত্যি?
এটা একদম মিথ্যে। দক্ষিণ আমেরিকার ফ্যাশন ডিজাইনারকে আমি খামোখা নকল করতে যাব কেন? সেটা ভারতীয় প্রেক্ষাপটে মানাবেও না।
কোন নায়িকাকে সবচেয়ে সেক্সি লাগে?
ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনকে সব চেয়ে সেক্সি লাগে। উনি ঘরে ঢুকলেই যেন একটা বিদ্যুত্ খেলে যায়!
আর নিজের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী?
আমি স্পেস অব নাথিংনেস-এ ভাসতে ভালবাসি, সঙ্গে একটু ওয়াইন।