চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে মধ্যমণি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে (বাঁ দিক থেকে) ঐশ্বর্যা, অভিষেক, অমিতাভ, জয়া, মৌসুমী, পল কক্স, সন্ধ্যা, শাহরুখ, তনুজা, তানিশা এবং ইরফান। সোমবার, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। —নিজস্ব চিত্র
রাজপাটে এসেই কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবকে নন্দনের ঘেরাটোপ থেকে নেতাজি ইন্ডোরের গণমঞ্চে এনে হাততালি কুড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন এখন আমজনতার উৎসবে পরিণত। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ বার উৎসবের উদ্বোধনী ছবিকেও সাধারণ মানুষের ‘বোধগম্য’ করে তুলতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ইচ্ছা, ইন্ডোরের উদ্বোধনী আসরে এমন ছবি দেখানো হোক, যা সাধারণ দর্শকের কাছে আকর্ষণীয় হয়। সে ছবি হতে পারে জনপ্রিয় বাংলা বা হিন্দি।
প্রায় হাজার দশেক দর্শকের উপস্থিতিতে তারকাখচিত ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জাঁকজমক পেরিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় উৎসবের সূচনা হয় ইতালির ছবি ‘ইতালো বারোক্কো’ দিয়ে।
তার পরেই ঘরোয়া আলোচনায় চলচ্চিত্র উৎসবের কর্তাব্যক্তিদের কাছে নিজের এই ভাবনার কথা বলেন মমতা। যার পিছনে তাঁর বাস্তব যুক্তি, গ্ল্যামার মোড়া ঝলমলে অনুষ্ঠানের পরে এমন ছবিই দেখানো হোক, যা উপস্থিত হাজার দশেক সাধারণ মানুষকে ইন্ডোরে টেনে রাখতে পারে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর চোখে পড়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে দর্শকদের একটা বড় অংশই আর ছবি দেখার জন্য বসে থাকেন না। মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন ওই কর্তাব্যক্তি দের অনেকেই।
এ বছর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবেও চালু হয়ে গেল ৫১ লক্ষ টাকার জুরি অ্যাওয়ার্ড। সঙ্গে স্মারক, তাতে সোনার রয়্যাল বেঙ্গল ‘গোল্ডেন টাইগার’। এটুকু বাদ দিলে ২০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনের বাকিটা হেঁটেছে চেনা পথেই।
মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ, তাঁদের বাংলায় কথা বলা, প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে হাততালির ঝড় সবটাই। হয়তো নতুনত্ব থাকতে পারত দীপিকা পাদুকোন এলে। কিন্তু কলকাতায় থাকলেও অসুস্থতার কারণে একেবারে শেষ মূহূর্তে অনুষ্ঠানে আসা বাতিল করতে হয় তাঁকে। অন্য দিকে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে পৌঁছে যাওয়ায় সুযোগ হয়ে যায় অমল পালেকরকে মঞ্চে তোলার। তবে মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও বক্তৃতা করেননি তিনি। উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে বক্তৃতা করেন রঞ্জিত মল্লিক। টলিউডের অন্য কোনও প্রতিনিধির বক্তৃতার কোনও অবকাশ রাখা হয়নি উদ্বোধনীর কর্মসূচিতে। যদিও মঞ্চে সন্দীপ রায়, দীপঙ্কর দে থেকে শুরু করে মাধবী মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা রায়, মুনমুন সেন অনেকেই ছিলেন।
গত বছরই অমিতাভকে সপরিবার আসার অনুরোধ জানিয়ে রেখেছিলেন মমতা। কথা রেখে অমিতাভের সঙ্গে ঐশ্বর্যা-অভিষেক, জয়া অর্থাৎ গোটা বচ্চন পরিবারের উপস্থিতি অনুষ্ঠানের গ্ল্যামার বাড়িয়েছে নিঃসন্দেহে।
কথা রেখেছেন শাহরুখও। গত বছর এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই বলেছিলেন, জয়াজি-র (জয়া বচ্চন) কাছে শিখে পরের বার বাংলায় বলবেন। তাই শুরুতেই উচ্চারণ করেছেন বাংলা শব্দ। যদিও ফের ফিরে গিয়েছেন স্বচ্ছন্দের ইংরেজিতে। অসুস্থতা নিয়েও এসেছেন তনুজা। এসেছেন ইরফান খান। নিজেদের মতো করে প্রত্যেকেই বাংলায় কথা বলার চেষ্টাও করেছেন। হাততালিতে ভেসেছে প্রেক্ষাগৃহ।
সোমবারের অনুষ্ঠান মঞ্চেই যথারীতি সপরিবার অমিতাভ বচ্চনকে আগামী বছরের উৎসবে ফের আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শাহরুখ তো থাকছেনই। ফলে সব ঠিক থাকলে ২১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চও হয়তো মোটামুটি চেনা ছবিই দেখবে।