ইন্টারভিউতে হিল পরবেন না, স্নিকারও না

পরামর্শ দিলেন ঋতা ভিমানীযে ইন্টারভিউই আপনি দিন, প্রথম কথা হল আপনার প্রথম ইম্প্রেশনটা কেমন হল। বিষয়ে দখল তো থাকতেই হবে। আরও যেটা দেখার, তা হল আপনি কী ভাবে নিজেকে ক্যারি করছেন। কী পোশাক পরছেন, বা কেমন ভাবে কথা বলছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০০:০০
Share:

যে ইন্টারভিউই আপনি দিন, প্রথম কথা হল আপনার প্রথম ইম্প্রেশনটা কেমন হল। বিষয়ে দখল তো থাকতেই হবে। আরও যেটা দেখার, তা হল আপনি কী ভাবে নিজেকে ক্যারি করছেন। কী পোশাক পরছেন, বা কেমন ভাবে কথা বলছেন।

Advertisement

দু’টো ইন্টারভিউয়ের কথা মনে পড়ছে এ প্রসঙ্গে। এক পেশাদার কলেজে এক মহিলা একবার এলেন ইন্টারভিউ দিতে। আমিও সেই কলেজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সেই মহিলার যথেষ্ট যোগ্যতা। লেকচারার পদের জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভুল করে ফেললেন।

সময়ে হাজির হওয়া দূরে থাক, পরের পর অজুহাত দিয়ে যাচ্ছিলেন দেরি করে আসার ব্যাপারে। যে সালোয়ার কামিজটা পরেছিলেন, সেটা মোটেই ফিট করেনি। কাজেই অনেকগুলো প্রশ্ন উঠছিল পরের পর। প্রথমত সময়ে না আসার অজুহাত। দ্বিতীয়ত ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁর এই পোশাক দেখেই বা কী ভাববেন! আমার সঙ্গেও যে কথাবার্তা তাঁর হয়েছিল, তা খুব একটা সদর্থক ছিল না। আমাকে তিনি বলেছিলেন কতটা সুন্দরী আমি ছিলাম এক সময়। ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলাটা এ সব ক্ষেত্রে কোনও মতেই উচিত নয়। তার পর তা যদি ঠিক প্রশংসাব্যঞ্জক না হয়, তা হলে তো আরও বিপদ! এর পর আর ওই মহিলার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। আমি জানিও না এখন তিনি কী করছেন।

Advertisement

আর একটা মনে রাখার মতো ইন্টারভিউ নেওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছিল। আমার পিআর কনসালটেন্সি ফার্মের জন্য ইনটার্ন নিয়োগ করছিলাম। একটি মেয়ের বায়োডেটায় বিশদে লিখেছিল কোন কোন লেখকের বই ও পড়েছে। নিজেকে নিয়ে এমন কিছু গালভরা কথাও লেখেনি। যখন ওর সঙ্গে আমার দেখা হল, খুব সুন্দর একটা আলোচনা হল ওর সঙ্গে। আলোচনার বিষয়ই ছিল আমার সময়ের বইপত্র, লেখালিখি নিয়ে। নিজের কভারলেটারটাও ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়েছিল ও। কী কাজ ওকে করতে হবে সেটাও ওর জানা। একটা স্মার্ট জ্যাকেট আর ট্রাউজারে সেজে এসেছিল সেই মেয়ে। ওর মুখের উষ্ণ হাসি আর ম্যানারিজমটাও ছিল প্রশংসা করার মতো। ওকে প্রার্থী নির্বাচন করতে এতটুকুও ভাবতে হয়নি আমাকে।

প্রথম দেখাই পাকা দেখা

ঠিকঠাক অ্যাটিটিউড আর সঙ্গে প্রথম দেখার মুহূর্ত এই দু’টো বিষয়ের ওপর তাই ইন্টারভিউয়ের অনেকটাই নির্ভর করে।

আপনি কী পরছেন, সেটার দিকেই কিন্তু আপনার নিয়োগকর্তার নজরটা প্রাথমিক ভাবে থাকে। তবে একটা কথা, বিভিন্ন কোম্পানির পোশাকের ধরন কিন্তু বিভিন্ন রকম। ধরুন একজন মহিলা কোনও এক প্রাইভেট ফার্মে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, ফিন্যান্স বা লিগ্যাল এক্সিকিউটিভ পদে যোগ দিতে চান। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগেই একটু হোমওয়ার্ক করে নিন কোন কোম্পানিতে আপনি কাজ করতে চলেছেন। সেই অনুযায়ী পোশাক বেছে নেবেন। এ সব ক্ষেত্রে খুব সুন্দর করে শাড়ি পরে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর যে ব্লাউজটা সঙ্গে পরবেন, সেটা যেন বেশ ছিমছাম আর শালীন হয়। শরীর দেখা যায়, এমন ব্লাউজ ইন্টারভিউতে পরে যাবেন না। আর গয়নাও যতটা পরা উচিত, ঠিক ততটাই পরুন। বাড়াবাড়ি রকম সেজে যাবেন না। বিবাহিত হলে সিঁদুর পরুন। কিন্তু তা যেন জ্বলজ্বল না করে। সালোয়ার স্যুট বা ইন্দো-ওয়েস্টার্ন পোশাকে যদি আপনি কমফর্টেবল হন, পরতেই পারেন। তবে খুব উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরে ইন্টারভিউ দিতে চলে যাবেন না। আপনাকে যেন স্মার্ট দেখতে লাগে। সেটাই আসল। দেখে যেন মনে না হয়, আপনি পার্টিতে যাচ্ছেন।

ছেলেরা অবশ্যই ক্লিন শেভ করে ইন্টারভিউ দিতে যাবেন। চুলে জেল লাগিয়ে গেলেই ভাল। আর অবশ্যই ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করুন। হেভি কোলন ব্যবহার করবেন না তা বলে। যে পদের জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, তা যদি খুব সিনিয়র না হয়, আর যদি সেই কোম্পানিও খুব বেশি আদবকায়দার ধার না ধারে, তা হলে স্রেফ একটা পরিষ্কার সাদা শার্ট আর ট্রাউজার গলিয়ে চলে যান। স্যুট পরার প্রয়োজন আছে কি না দেখে নিন আগেভাগে। কুর্তা-পাজামা কিন্তু ভুলেও পরতে যাবেন না।

টিপস

• যে কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, হোমওয়ার্ক করে রাখুন সেই কোম্পানির ব্যাপারে।

• ইন্টারভিউয়ের সময় মোবাইলটা সায়লেন্ট রাখুন।

• ভেবেচিন্তে উত্তর দিন। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হবেন না।

• নিজের বিষয়ের বাইরেও বিশ্বের খবরাখবর রাখার চেষ্টা করুন। আপনার যে বিষয়ে যথেষ্ট প্যাশন রয়েছে, সে বিষয়েও কথা বলতে পারেন।

• জুতোর ব্যাপারে ক্যাজুয়াল হবেন না কখনও।

আত্মবিশ্বাসে রাশ টানুন

প্রাইভেট ফার্মেই ইন্টারভিউ দিতে যান বা সরকারি সংস্থায়, তফাত বড় একটা খুঁজে পাবেন না। যেখানেই যান, একটা ঝকঝকে উপস্থিতি সব চেয়ে প্রয়োজন। স্কুল বা কলেজ ইন্টারভিউ হলে কাঁধে ঝোলাটা দয়া করে নেবেন না। ওগুলো পরে ব্যবহার করার অনেক সুযোগ পাবেন।

অনেক মহিলাই পাশ্চাত্য পোশাকে বেশ স্বচ্ছন্দ। এ রকম ক্ষেত্রে একটা ভাল স্কার্ট, জ্যাকেট বা বেশ ফিটফাট কোনও ট্রাউজার্স (জিনস চলবে না) পরেও ইন্টারভিউ দিতে যেতে পারেন। সুন্দর কাটের শার্টও পরা যেতে পারে। এমন হ্যান্ডব্যাগ নেবেন যেটা ক্যারি করা বেশ সুবিধেজনক। ছেলেরা ব্যাকপ্যাক না নিলেই ভাল।

কী ধরনের গ্যাজেট ক্যারি করছেন, সেটাও কিন্তু খেয়াল রাখার মতো। আপনার কেনা লেটেস্ট সেলফোন বা আইপ্যাড মিনি না হয় না-ই বের করলেন। আর খেয়াল রাখবেন মোবাইলটা যেন সব সময় সায়লেন্ট থাকে। সঙ্গে সব সময়ই একটা বায়োডেটা রাখবেন। অনেকে তো এমনকী বিজনেস কার্ডে নিজেদের নাম, ঠিকানা, ছোট ছবিও লাগিয়ে রেখে দেন।

ইন্টারভিউয়ের সময় প্যানেলে হাজির থাকা সবার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে কথা বলুন। খুব বেশি লাজুক বা বিনম্র হবেন না। আবার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হবারও প্রয়োজন নেই। ভেবেচিন্তে উত্তর দিন। আর সুযোগ পেলে ইন্টারভিউয়ারদের কাছ থেকে জেনে নিন কী ধরনের কাজ তাঁরা আপনার থেকে আশা করছেন। এ-ও বলুন আপনি কী ধরনের কাজ করতে পারবেন। আপনার কথাবার্তায় যেন একটা সদর্থক ভাব থাকে। দেখবেন তাঁরাও যথেষ্ট পজিটিভ ভাবেই আপনার সঙ্গে কথা বলছেন। সাম্প্রতিক রাজনীতির জগতে, খেলার ময়দানে বা বিশ্বজুড়ে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে খবরাখবর নিয়ে রাখুন। আপনার যে বিষয়ে প্যাশন আছে, তা সে গানই হোক বা নাটক, বা বই অথবা সিনেমা সে সম্পর্কেও যেন বেশ একটা জোরালো মতামত থাকে আপনার।

হুকোঁমুখ নয়

আর হ্যাঁ, রসবোধ থাকাটাও কিন্তু বেশ জরুরি। মুখভার করে থাকবেন না। আবার বেশি উত্‌সাহ দেখানোরও প্রয়োজন নেই। এমন ভাব করুন যা দেখে অন্তত মনে হয় আপনি প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করতে সত্যিই আগ্রহী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ হলে ছোট ছোট বিষয়ে আপনার জ্ঞান কিন্তু চাকরিটা আপনাকে পাইয়ে দিতে পারে। দয়া করে ইন্টারভিউতে দেরিতে পৌঁছবেন না। হাতে অনেকটা সময় নিয়ে বেরোন। ট্রাফিক জ্যাম হতে পারে, পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে বা এমন অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে। আপনি অন্তত আপনার দিক থেকে প্রস্তুত থাকুন এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করার ব্যাপারে।

মনে রাখবেন ইন্টারভিউয়ের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা কিনা আপনার জীবনটাই বদলে দিতে পারে, তা অ্যাটেন্ড করার সময় কিন্তু আপনাকে কেমন দেখতে লাগছে, সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে সেটাই। আর জুতোর ব্যাপারটাও কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হিল পরে শব্দ করতে করতে ইন্টারভিউয়ারের সামনে যাবেন না। আর ছেলেদেরও বলছি, স্নিকার বা ক্যাজুয়াল শু পরে ইন্টারভিউতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না কখনওই। চকচকে পালিশ করা জুতো পরে যাওয়াটা এই সব ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই বলেন অ্যাড এজেন্সিতে কাজ করতে গেলে না কি ক্যাজুয়াল হলেও চলে। মনে রাখবেন কাজ কিন্তু কাজ-ই হয়। তাই কাজের ক্ষেত্রে সিরিয়াসনেসটা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। প্রথম যখন ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, বাড়াবাড়ি কোনও কিছু করার কোনও প্রয়োজন নেই। পার্টিওয়্যারটাকে তুলে রাখুন চাকরি পাওয়ার পর সেলিব্রেশনের জন্য।

ফার্স্ট লুক

ছবির নাম ‘যোগাযোগ’। পরিচালক শেখর দাশ। ছবির শ্যুটিংয়ে ব্রাত্য বসু ও লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement