আই টিউনস্, গুগল প্লে-র শরণাপন্ন টলিউড

ছবি চলছে না। স্যাটেলাইট বাজারে ধস। বাঁচার পথ খুঁজছে বাংলা ছবি। কী ভাবে? খোঁজ নিলেন অরিজিৎ চক্রবর্তীছবি চলছে না। স্যাটেলাইট বাজারে ধস। বাঁচার পথ খুঁজছে বাংলা ছবি। কী ভাবে? খোঁজ নিলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০০:২৪
Share:

গত ২ জুলাই আনন্দplus-এ একটা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। নাম ছিল ‘ভেন্টিলেটরে টলিউড’।

Advertisement

নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দুরবস্থা। বেশির ভাগ বাংলা ছবিই চলছে না। স্যাটেলাইট রাইটসের বাজারেও বিরাট ধস।

এ রকম অবস্থায় বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে কী ভাবে? না কি আদৌ বাঁচতে পারবে?

Advertisement

একটা ট্রেন্ড কিন্তু ইতিমধ্যে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। সেটা হল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বাংলা ছবির উপস্থিতি। হ্যাঁ, সিনেমা হল-ডিভিডি রিলিজ-টেলিভিশন প্রিমিয়ারের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ছবি এখন রিলিজ হচ্ছে আই টিউনস্, গুগল প্লে বা অ্যামাজনের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও।

কিন্তু কেন? সেটা কি শুধুই উপস্থিতির জন্য উপস্থিতি? না কি ভেন্টিলেটর থেকে বেরোনোর এটাও একটা রাস্তা?

“আমার তো দৃঢ় বিশ্বাস পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা ফেসবুকে ছবি প্রোমোট করব আর ইউটিউবে রিলিজ করব। সেই দিকেই এগোচ্ছি আমরা। আমার মনে হয়, পুরো ব্যবসাটাই চলে যাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। ভবিষ্যতে যে সেটা করতেই হবে তার মানসিক প্রস্তুতি আমার আছে,” বলছিলেন এসকে মুভিজের হিমাংশু ধানুকা।

আর কী বলছে শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস? তাঁদের প্রযোজিত ‘সত্যান্বেষী’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘মিশর রহস্য’, ‘প্রলয়’ তো ইতিমধ্যেই মুক্তি পেয়েছে আই টিউনস্, গুগল প্লে বা অ্যামাজনে। “ডিজিটাল মিডিয়ামে তো আসতেই হবে। পিসি-ট্যাবই ভবিষ্যতের মার্কেট,” স্পষ্ট বললেন ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধার মহেন্দ্র সোনি। শুধু তাই নয় ‘সত্যান্বেষী’ বা ‘মেঘে ঢাকা তারা’ তো আই টিউনস্ স্টোরে কোনও কোনও সপ্তাহে ভারতীয় সিনেমার মধ্যে ‘বেস সেলার’য়ের তালিকাতেও থাকছে।

তার মানে কি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলা ছবি দেখার দর্শক আস্তে আস্তে তৈরি হচ্ছে? “এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই কিন্তু। এমনিতেই ইয়াং জেনারেশন ট্যাব বা ল্যাপটপে সিনেমা দেখায় স্বচ্ছন্দ। তাদের কাছে বাংলা ছবিও অ্যাডাপ্ট করে নেওয়াটা বেশ সহজ। তবে ডিজিটাল মার্কেটের একটা বড় অংশ হল ভারতের বাইরের দর্শক। দেশের বাইরে সব শহরে তো আর বাংলা ছবি রিলিজ করা যায় না। কিন্তু লোকের মধ্যে আগ্রহটা আছেই,” জানালেন মহেন্দ্র সোনি।

সত্যিই দেশের বাইরে থাকা লোকদের বাংলা ছবি দেখার একমাত্র উপায় ছিল এ দেশে থাকা কোনও আত্মীয়কে দিয়ে ডিভিডি আনিয়ে নেওয়া। কিন্তু ডিভিডিও তো ক্রমশ মৃতপ্রায় মাধ্যমে পরিণত হতে চলেছে, সে কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। তাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বাংলা ছবি, বিশেষ করে ‘নিশ’ ছবিগুলো রিলিজ করলে, সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা কিনে নিচ্ছেন।

নতুন প্রজন্মের অনেকেই যে প্রথাগত টিভি-র মুখাপেক্ষী আর হচ্ছে না, সে কথা অনেকেই স্বীকার করছেন। অঞ্জন দত্তর ‘টিভি দেখো না’য় উদ্বুদ্ধ হয়ে নয়, তাঁরা বেশির ভাগ সময় টিভিও দেখে নিচ্ছে মোবাইল, ট্যাব বা কম্পিউটারে। ‘শার্লক’ বা ‘মডার্ন ফ্যামিলি’র এপিসোডের জন্য টিভি চ্যানেলের মুখাপেক্ষী নন তাঁরা। অনেকেই তো টিভির রিমোটটা পর্যন্ত চালাতে জানেন না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এটা নতুন কিছু নয়। প্রত্যেক জেনারেশনের কিছু না কিছু অ্যাডিকশন থাকে। জেন এক্সের যদি সেটা টিভি হয়, জেন ওয়াইয়ের অবশ্যই তা স্মার্টফোন-ট্যাব। বছরখানেক আগে নিয়েলসনের এক রিপোর্টেই ছিল যে, ১৮-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৩ শতাংশ টিভি দেখে অনলাইনে। শহরাঞ্চলে তো সংখ্যাটা আরও বেশি হবেই।

কিন্তু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ছবি রিলিজ করলেই তো হবে না। এক একটা সিনেমা সাইজে প্রায় ৪.৫ জিবি, একটু স্বাভাবিক রেজোলিউশনেও তা দেড় জিবির থেকে বেশি। তবে ভারতীয় বাজারেও যে ভাবে ৪জি নেটওয়ার্ক প্রবেশ করছে, সেখানে প্রোডাকশন হাউজগুলো আশা করতেই পারেন যে, ভবিষ্যতে ডিজিটাল মাধ্যমের দিকে ঝুঁকতেই পারেন বাংলা ছবির দর্শক। ব্যান্ডউইথ কোনও সমস্যা হবে না। সে সঙ্গে ছবির দামটাও দর্শককে টেনে আনতে পারে। তার সঙ্গে ডিভিডি রাখার ঝক্কি নেই, ডিভিডি চালানোর জন্য অপটিকাল ড্রাইভের দরকার নেই। সিনেমা শুধু ডাউনলোড করে নিলেই হল।

কিন্তু নতুন এই মাধ্যমে বাংলা সিনেমা রিলিজকে কী ভাবে দেখছেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়? “এটাকে স্বাগত না জানিয়ে তো উপায় নেই। স্বীকার করতেই হবে এটাই ভবিতব্য। হল কালেকশনের পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও যদি রেভেনিউ আসে, তা হলে তো সেটা ভালই। আর আই টিউনস্ বা গুগল প্লে তে রিলিজ করলে হয়তো পাইরেসি থেকেও বাঁচা যাবে,” জানালেন কমলেশ্বর। আই টিউনস্ বা গুগল প্লে-তে ছবি রিলিজ করালে সত্যিই পাইরেসি-র হাত থেকে বাঁচা সম্ভব। এই সমস্ত প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনা ছবি যেহেতু ‘শেয়ার’ করা যাবে না, তাই দেখতে হলে কিনতে হবে অথবা একবার দেখার জন্য ভাড়া (হ্যাঁ, আই টিউনস্-এ সিনেমা ভাড়াতেও নেওয়া যায়) করতে হবেই।

সত্যি তো সপ্তাহের একটা দিনের ছুটিতে তো একটা কী দু’টো সিনেমা হলে গিয়ে দেখা যেতে পারে। বাকি সিনেমাগুলোর কী হবে? আর বারবার দেখতে চাওয়া সিনেমাগুলো?

তাই হয়তো আই টিউনস্-এ বাংলা ছবি। অবশ্য সেটা টলিউডকে ভেন্টিলেটর থেকে বার করতে পারবে কি না সেটা সময়ই বলতে পারবে।

পিসি-ট্যাবই ভবিষ্যতের মার্কেট।
এমনিতেই ইয়াং জেনারেশন ট্যাব বা
ল্যাপটপে সিনেমা দেখায় স্বচ্ছন্দ

মহেন্দ্র সোনি

কর্ণধার, শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস

আমার তো দৃঢ় বিশ্বাস পাঁচ বছরের
মধ্যে আমরা ফেসবুকে ছবি প্রোমোট করব
আর ইউটিউবে রিলিজ করব

হিমাংশু ধানুকা

প্রযোজক, এসকে মুভিজ

হল কালেকশনের পাশাপাশি
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে
রেভেনিউ এলে তো ভালই

কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়

পরিচালক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement