বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখন থ্রিলারেই এগোচ্ছে। ব্যোমকেশ, ফেলুদা, শবর, কিরীটীর জমানায় টালিগঞ্জে এ বার মহিলা গোয়েন্দা, তা-ও আবার পুরস্কার পাওয়া লেখিকা। গল্পের টানেই সেই লেখিকা একদিন এক পার্টিতে যায়। সেখান থেকেই পেয়ে যায় থ্রিলার লেখার মশলা। খুলতে থাকে মুখোশে ঢাকা মানুষের মুখ। বেরিয়ে আসে আজকের সমাজের ক্রুদ্ধ, জটিল চেহারা। সেই লেখিকা আর কেউই নন। তনুশ্রী চক্রবর্তী। ‘লাবণ্য’ আর ‘তিলোত্তমা’ এই দুই চরিত্রে শুভ্রজিৎ মিত্রর ‘চোরাবালি’তে এক অন্য তনুশ্রী চক্রবর্তীকে পেল টলি ইন্ডাস্ট্রি।
শোনা গিয়েছিল আগাথা ক্রিস্টির ‘কার্ডস অন দ্য টেবিল’-এর আদলে এই ছবি তৈরি হয়েছে। পরিচালক ছুঁয়ে গিয়েছেন শার্লক হোমসের নানা সংলাপ। রহস্যের মেজাজ ইউরোপীয় হলেও অবশেষে চোরাবালি কিন্তু একটি মৌলিক গল্প হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করে।
পুরুষ গোয়েন্দাদের ভরা বাজারে মেয়ে গোয়েন্দা তনুশ্রী মাঠে নেমে ভালই ব্যাট চালালেন। বলছিলেন, “অনেকেই বলত এ বার বাংলা ছবিতে মেয়ে গোয়েন্দা নিয়ে একটা ছবি হোক। ‘‘চোরাবালি’র চিত্রনাট্যটা পড়েও খুব এক্সাইটেড ছিলাম। শুভ্রজিতের সঙ্গে বহু বার স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসেছি। আমার লুকটাও যথাসম্ভব ন্যাচারাল করার চেষ্টা করেছি। আসলে খুব ইনভলভড্ হয়ে গিয়েছিলাম কাজটা করতে করতে,’’ বলছিলেন তনুশ্রী।
বরুণ চন্দের মতো অসাধারণ এক অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আজও ভুলতে পারছেন না ‘চোরাবালি’র লাবণ্য। কিন্তু বেশ হতাশ হয়ে পড়েছেন বরুণ নিজে। কথায় কথায় জানালেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো পরিচালকদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকলেও বাংলায় তো আর ‘চিনি কম’ হবে না। তাই তাঁর অভিনয় করার সুযোগটাও কম। সে দিক থেকে দেখতে গেলে ‘চোরাবালি’ তাঁকে অভিনয়ের যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছে। বললেন, ‘‘আমার তো রোহিত শর্মার মতো অবস্থা। যথেষ্ট স্কোর করেও অ্যাম লুজিং দ্য ম্যাচ। ছবিটা নিয়ে মিডিয়া কেন যে এত নীরব, বুঝতে পারছি না। একজন ক্রাইম স্টোরির লেখক হয়ে দায়িত্ব নিয়ে বলছি ‘চোরাবালি’ যথেষ্ট থ্রিলিং একটা ছবি। এর খেলার স্কোরশিটেই লুকিয়ে আছে এর রহস্য।’’
রহস্য গল্পের লেখিকা নিজেই লিখতে বসেছেন এক খুনের গল্প। আশ্চর্যরকম ভাবে তিনিও সেই গল্পে একটা চরিত্র হয়ে ফিরছেন। খুনের রহস্যকে ঘিরে ঘটনাক্রমে ছবিতে এসেছে প্রেম, দ্বন্দ্ব, হিংসা আর কলকাতার নাইট ক্লাবের আলো-আঁধারির নানা দিক। ছবির চলতি সংলাপে নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারা, সামাজিক প্রেক্ষাপট, অস্বাভাবিক খুনের রহস্য।
গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন জুন মাল্য আর লকেট চট্টোপাধ্যায়। ‘‘চোরাবালি’র পরিচালক শুভ্রজিৎ আর লেখক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এমন একটা পরিবেশ ছবিতে তৈরি করেছিলেন যাতে ছবির সব চরিত্রকেই কোথাও না কোথাও গিয়ে দর্শক সন্দেহ করতে শুরু করেন। এই ছবির মজা সেখানেই,’’ বলছিলেন মিস ম্যাপল আর আগাথা ক্রিস্টির ভক্ত তনুশ্রী।
ক্রিমিনোলজিস্ট অর্ধেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রে পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র বরুণ চন্দ ছাড়া কাউকে ভাবতে পারেননি। ‘‘যতই সিরিয়াস একটা চরিত্রে অভিনয় করুন না কেন, সেট-এ কিন্তু খুব মজা করতেন বরুণ চন্দ,’’ বলছিলেন তনুশ্রী। আর তনুশ্রীকে যথেষ্ট ‘সেনসেটিভ’ অভিনেত্রী বলে মনে হয়েছে বরুণ চন্দর।
কিন্তু এত জন নায়িকার সঙ্গে ফ্লোর শেয়ার করা?
“আমার বেশির ভাগ দৃশ্য ছিল বরুণ চন্দ আর শতাফ ফিগরের সঙ্গে। সুতরাং নায়িকাদের সঙ্গে ঝগড়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আর একসঙ্গে অভিনয় করলে নায়িকারা যে ঝগড়াই করবেন, এই চিন্তার এ বার বদল হোক,’’ হাসলেন তনুশ্রী। জুন মাল্য আর লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম সরাসরি ফ্লোর শেয়ার করেও ভাল লেগেছে তাঁর। তবে কার চোরাবালিতে কে কাকে ডোবাচ্ছেন, সেটা দেখার জন্য হলে গিয়ে ছবিটা দেখতে হবে।
তবে সতেরো দিন শ্যুট করা ‘চোরাবালি’র স্রোত টলি ইন্ডাস্ট্রিতে কী ভাবে আছড়ে পড়ে, এখন সেটাই দেখার!