ওটিটি-যুদ্ধে দাম কমাল নেটফ্লিক্স
গ্রাহক টানতে দামের লড়াই ওটিটি-র ময়দানে। গ্রাহক হওয়ার খরচ সবচেয়ে বেশি হওয়ায় এত দিন সদস্য সংখ্যায় ডিজনি হটস্টার বা অ্যামাজন প্রাইমের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল নেটফ্লিক্স। ২০১৬-য় ভারতে যাত্রা শুরুর পরে এই প্রথম তাই মাসিক খরচ কমানোর পথে হাঁটল এই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। ১৪ ডিসেম্বর থেকে নেটফ্লিক্সের সাধারণ গ্রাহকমূল্য মাসে ৪৯৯ টাকা থেকে কমে হয়েছে মাসে ১৯৯ টাকা। অর্থাৎ, এক ধাক্কায় মাসে ৩০০ টাকা কম!
যদিও আয়ের নিরিখে ওটিটি-র ময়দানে শীর্ষে এখনও নেটফ্লিক্সই। বাড়তি মাসিক খরচের কল্যাণে ২০২১ সালেও ছ’হাজার কোটি টাকা ঘরে তুলেছে ওই সংস্থা। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মগুলির চেয়ে গ্রাহকসংখ্যায় ঢের পিছিয়ে থাকা দুশ্চিন্তায় ফেলছিল কর্তৃপক্ষকে। গ্রাহকমূল্যে রাশ টেনে তাই সেই স্বস্তির খোঁজে নেমেছে নেটফ্লিক্স।
তবে গ্রাহকদের একাংশ জানাচ্ছে, নেটফ্লিক্সের সস্তার প্যাকেজে ছবির মান তত উঁচু নয়। বেশি দামের প্যাকেজে পুরোপুরি ‘হাই ডেফিনিশন কনটেন্ট’ দেখানো হয়। সেখানে কম দামের গ্রাহকরা পান ‘স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনিশন কনটেন্ট’। যে ছবির ‘রেজোলিউশন’ কম হওয়ায় তা ততটা ধারালো নয়। অর্থাৎ, পছন্দের সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ দেখার সেই আরামটা কম দামের প্যাকেজে ততটা নেই। তবে গ্রাহকদের অনেকে আবার এতেই সন্তুষ্ট। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘জনপ্রিয় ছবি বা সিরিজ অনেক কম দামে দেখা যাচ্ছে। সেটাই আসল। খরচ কম করলে কোথাও তো একটা সমঝোতা করতেই হবে।’’
‘হটস্টার’-এর ওয়েব সিরিজ ‘আরিয়া ২’-এর একটি দৃশ্য।
প্রতিযোগীদের তুলনায় গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতেই নেটফ্লিক্সের দাম কমানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বস্তুত, পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে ডিজনি হটস্টারের সদস্য ৪ কোটি ৬০ লক্ষ, অ্যামাজন প্রাইমের ১ কোটি ৯০ লক্ষ। সেখানে পাঁচ বছরে এ দেশে নেটফ্লিক্সের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়ে মাত্র ৫০ লক্ষে। এই বিপুল ব্যবধান কমিয়ে ফেলার লক্ষ্যেই সাধারণ গ্রাহকমূল্য মাসিক ৩০০ টাকা কমিয়ে দিয়েছে তারা। গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে নতুন দাম। নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট (কনটেন্ট) মণিকা শেরগিলের দাবি, এর ফলে আরও বহু দর্শকের হাতের নাগালে চলে আসবে নেটফ্লিক্স। নতুন দামের বিজ্ঞাপনকে আকর্ষণীয় করতে আলিয়া ভট্টকে নিয়ে আসা হয়েছে।
দিন যত গড়াচ্ছে, ততই ভারতে লাফিয়ে বাড়ছে ওটিটি-র দর্শক সংখ্যা। ২০২১-এ প্রায় ১০ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের গ্রাহক হয়েছেন। গত বছর সেই সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৬০ লক্ষের মতো। তবে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মাসিক খরচ বেশি হওয়ায় এখনও দর্শকদের একটা বড় অংশ পাসওয়ার্ড ভাগাভাগি করে একই অ্যাকাউন্ট থেকে অনেকে মিলে সিনেমা-সিরিজ দেখায় বিশ্বাসী। এ ভাবে ‘খিড়কির পথে’ কনটেন্ট ভাগাভাগির জেরে ওটিটি-তে সিরিজ, সিনেমা বা তথ্যচিত্র যত মানুষ দেখছেন, তত টাকা ঢুকছে না বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের ভাঁড়ারে। ভারতে নেটফ্লিক্সের আয় কম হওয়ার পিছনে এই বিষয়টাকেও দায়ী করছেন মিডিয়া পার্টনার্স এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মিহির শাহ। তাঁর কথায়, “মাসিক খরচ কমিয়ে দেওয়ায় পাসওয়ার্ড ভাগাভাগি করে দেখার ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধাও কমে যাবে। ফলে আশা করা যায়, একই অ্যাকাউন্ট থেকে একজনেরই দেখার প্রবণতা বাড়বে। কে কতটা কনটেন্ট দেখছেন, তাতে নজরদারি চালানোও সুবিধাজনক হবে সংস্থার পক্ষে।”
মাসিক খরচে রাশ টানা আর এক দিকেও সংস্থার পক্ষে লাভজনক হবে বলে মনে করছেন মিহির। তাঁর মতে, দামের লড়াইয়ে বাকিদের সঙ্গে সমানে সমানে টেক্কা দেওয়ার পরে এ বার প্রতিযোগিতা হবে বিষয়বস্তু নিয়ে। বিদেশি বা হিন্দি সিনেমা-সিরিজের পাশাপাশি ইদানীং ওটিটি জোর দিচ্ছে আঞ্চলিক বিষয়বস্তুতে। ডিজনি হটস্টার ইতিমধ্যেই খেলাধুলোর কনটেন্টে টেক্কা দিয়েছে বাকিদের। অ্যামাজন প্রাইমও সিনেমার ক্ষেত্রে হলিউড-বলিউডের পাশাপাশি যথেষ্ট জোর দিচ্ছে আঞ্চলিক ছবিতে। নেটফ্লিক্সের একাধিক বিদেশি ও হিন্দি সিরিজ ইতিমধ্যেই যথেষ্ট জনপ্রিয়। মিহিরের কথায়, “এ বার ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আরও দর্শক টানতে আরও গভীরে গিয়ে আঞ্চলিক বিষয়বস্তু তুলে আনায় জোর দিতে হবে। আগামী দিনে ভারতে নেটফ্লিক্স কতটা ভাল ব্যবসা করতে পারবে, বিষয়বস্তুর সঠিক নির্বাচন তার একটা দিশা অবশ্যই দেখাবে।”
বাঙালি দর্শকের কাছে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, ডিজনি হটস্টারের মতোই বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’-এর গুরুত্ব আছে। নেটফ্লিক্সের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ নিয়ে তারা কী বলছে? তারাও কি মাসিক খরচ কমানোর কথা ভাবছে?
সংস্থার কর্ণধার বিষ্ণু মোহতার কথায়, “নেটফ্লিক্স কী কারণে তাদের গ্রাহক পরিষেবার মূল্য কমাচ্ছে, সেটা আগে বিশদে জানতে হবে। তার পরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারব। যদি গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে সংস্থা ওই ধরনের কোনও পদক্ষেপ নিয়ে থাকে, তা হলে আমরাও দেখব আমাদের গ্রাহকেরা কী চাইছেন। তাঁরাও যদি আমাদের থেকে এমন কিছু আশা করেন, তা হলে অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। আমরা এখনও এই ধরনের কোনও বার্তা গ্রাহকদের থেকে পাইনি। ফলে এখনই এমন কিছু হইচই প্ল্যাটফর্ম ভাবছে না।”
(তথ্যসূত্র: রিডিফ.কম)