বাংলা মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবির বাজার মন্দা কেন?

কনটেন্টের রমরমাতেও মেনস্ট্রিম ছবি জায়গা ধরে রেখেছে বলিউডে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে ভরাডুবি কেন?সলমনের ছবির মিশ্র প্রতিক্রিয়া। খবর, প্রথম সপ্তাহের পরেই বেশ কয়েকটি হল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে দেব ও জিতের ছবি দু’টি। কলকাতার প্রথম সারির দু’টি সিঙ্গল স্ক্রিনে ছবি দু’টি মুক্তিও পায়নি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share:

এ বার ইদে মুক্তি পেয়েছিল দেবের ‘কিডন্যাপ’ আর জিতের ‘শেষ থেকে শুরু’। দেব-রুক্মিণীর প্রথম মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি। অন্য দিকে জিতের সঙ্গে অনেক বছর পরে বড় পর্দায় কোয়েল মল্লিক। ফলে বাংলা ছবি দু’টি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। সেই সঙ্গে ছিল সলমন খানের ‘ভারত’। তারা কি প্রত্যাশা পূর্ণ করতে পারল?

Advertisement

সলমনের ছবির মিশ্র প্রতিক্রিয়া। খবর, প্রথম সপ্তাহের পরেই বেশ কয়েকটি হল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে দেব ও জিতের ছবি দু’টি। কলকাতার প্রথম সারির দু’টি সিঙ্গল স্ক্রিনে ছবি দু’টি মুক্তিও পায়নি। দুই সুপারস্টারের ছবির বাজেট তিন-চার কোটি টাকার কাছে। শোনা যাচ্ছে, সেই অঙ্কের অর্ধেকে পৌঁছতেও লড়াই করতে হচ্ছে ছবি দু’টিকে।

বাংলার প্রথম সারির তারকাদের ছবির ব্যবসার যদি এই হাল, তবে অঙ্কুশ, সোহম বা যশের ছবির উপরে ইন্ডাস্ট্রির যে অগাধ ভরসা, সেটা ভাবার কারণ নেই। কনটেন্টভিত্তিক ছবির বাজারে মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি কোণঠাসা। সেটা যেমন বলিউডে, তেমনি টলিউডেও। তবু ‘সিম্বা’, ‘জুড়ুয়া টু’, ‘টোটাল ধামাল’, ‘লুকা ছুপি’র মতো ছবির বক্স অফিস রোজগার হিন্দি ছবির নির্মাতাদের উৎসাহ জোগাচ্ছে। এ দিকে ধারাবাহিক ভাবে মার খাচ্ছে বাংলা পটবয়েলার। হিন্দি ছবির বাজেট, মার্কেট, পরিকাঠামোর সঙ্গে বাংলা ছবির কোনও তুলনা চলে না। সব সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়ার পরেও বাংলার পরিচালকেরা কি জোর গলায় বলতে পারেন, তাঁরা উৎকৃষ্ট মানের কমার্শিয়াল ছবি বানালেও, দর্শক তা হলে গিয়ে দেখছেন না?

Advertisement

আসলে প্রশ্ন উঠছে ছবির মান নিয়ে। প্রিয়া হলের কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত বললেন, ‘‘এই ধরনের ছবির মূল কথা বিনোদন। কিন্তু যা খুশি একটা বানিয়ে দিলেই চলবে না। ছবির পরিবেশন, অভিনয়, প্লট সবের মধ্যেই একটা কার্যকারণ থাকতে হবে। ‘জুড়ুয়া টু’ বা ‘সিম্বা’র কথা যদি বলেন, সেখানে পরিবেশনে কিছু ব্যাপার আছে যা দর্শককে আকৃষ্ট করেছিল।’’

নবীনা হলের মালিক নবীন চৌখানির মতে, তাঁর হলে ‘ভারত’-এর এখনও অবধি ব্যবসা মন্দ নয়। ‘‘গত দু’বছরের ইদে সলমনের ছবি চলেনি। ‘ভারত’ সেই তুলনায় এগিয়ে। দর্শকের কাছে সলমন, দেব বা জিৎ এখন বড় নয়। কনটেন্টই শেষ কথা বলবে।’’

তা হলে কি তারকাদের স্টারডমে ভাটা এসেছে? ‘শেষ থেকে শুরু’র পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘স্টারকে ভেবে গল্প লিখলে হবে না। গল্পে স্টারকে খাপ খাওয়াতে হবে।’’ দেব-জিতের উত্থান এই ধরনের ছবির হাত ধরেই। তা হলে কি দেব-জিতের স্টারডম নিম্নমুখী? মানতে চাইছেন না রাজ। ‘‘আগে দেব আর জিৎ বছরে দু’-একটা ছবি করত। এখন তিন-চারটে ছবি করছে। চাহিদা আছে বলেই করছে।’’ ‘কিডন্যাপ’-এর পরিচালক রাজা চন্দ মেনে নিচ্ছেন সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে। ‘‘এর আগে প্রথম সপ্তাহে ছবি যে অঙ্কের ব্যবসা করেছে, এখন সেই অঙ্কে যাচ্ছে না।’’

এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন হরনাথ চক্রবর্তী, যাঁর ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ টানা ২৫ সপ্তাহ হলে চলেছিল। ‘‘২৮-৩০টা হলে তিনটে শো টাইমে আমার সুপারহিট কয়েকটা ছবি ২৫ সপ্তাহ চলেছে। আজ হলে তিনটে শো টাইমে তিনটি আলাদা ছবি। এক মাস, বড় জোর দু’মাস চললেই আমরা বলছি হিট, সুপারহিট।’’ হরনাথ জানালেন, মূল ধারার বাংলা বাণিজ্যিক ছবির আসল দর্শক ছিলেন গ্রামগঞ্জ ও মফস্সলের মানুষ, যাঁদের কাছে যাত্রা ছাড়া বিনোদনের বড় মাধ্যম ছিল সিনেমা। ফ্রি ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যাপ্তির কারণে তাঁরা এখন ফোনে সিনেমা দেখছেন। আর এখন হলে মুক্তি পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই টিভিতে চলে আসছে নতুন সিনেমা।

যে বাঙালি দর্শক হলে গিয়ে এই ছবিগুলি দেখছেন না, তাঁরা বরুণ ধওয়নের ‘জুড়ুয়া টু’ দেখছেন কেন? এই প্রশ্নে রাজ এবং হরনাথের মত, বাঙালি দর্শকের মধ্যেও দ্বিচারিতা রয়েছে। হরনাথ বলছেন, ‘‘হিন্দি ছবির আদলে বাংলা ছবি বানালে দর্শক ভাবেন শাহরুখ খান যেটা পারেন, জিৎকে সেটা মানায়?’’ রাজ বলছেন, ‘‘বাংলা ছবিকে নিচু নজরে দেখার প্রবণতা বরাবরের।’’

সময়ের সঙ্গে বিনোদনের মোড়ক না পাল্টালে টিকে থাকা মুশকিল। হিন্দি মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি যে টিকে আছে, তার জন্য সময়োপযোগী কনটেন্ট বাছা ও পরিবেশন বড় ফ্যাক্টর।

হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিও যা পারেনি, তা করে দেখিয়েছে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি। ‘বাহুবলী’ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি কমার্শিয়াল ছবিরই নতুন মোড়কে পরিবেশন ছাড়া কিচ্ছু নয়। বাংলা মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবির দর্শককে কী ভাবে হলমুখী করা যাবে, তা ভাবতে হবে নির্মাতাদেরই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement