বলিউডের খানদানি কপূর পরিবারে সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্ম। কিন্তু করিশ্মা এবং করিনার শৈশব সুখের হয়নি। তাঁদের ছোটবেলাতেই বিচ্ছেদ হয়ে যায় বাবা রণধীর কপূর এবং মা ববিতার। দুই বোনকে একাই বড় করেন ববিতা। কপূর পরিবারের প্রচলিত ধারা মেনে মেয়েদের নায়িকা তৈরি করেন।
করিশ্মার প্রথম ছবি ‘প্রেম কয়েদি’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯১ সালে। তার ন’বছর পরে করিনা আত্মপ্রকাশ করেন ইন্ডাস্ট্রিতে। ২০০০ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম ছবি ‘রিফিউজি’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিল্মোগ্রাফিতে তিনি টেক্কা দেন করিশ্মাকে। জনপ্রিয়তার নিরিখেও এগিয়ে যান করিনাই। তবে তা নিয়ে সম্পর্কের টানাপড়েন কোনওদিন প্রকাশ্যে আসেনি । বরং, করিনার জীবনে ছোট থেকেই দিদি এবং মায়ের প্রভাব গভীর।
অক্ষয় খন্নার সঙ্গে বিয়ের কথা হলেও শেষ পর্যন্ত সেই সম্পর্ক অধরাই থেকে যায় করিশ্মার। অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে তো বাগদান অবধি হয়েছিল। কিন্তু তারপরে বহু প্রত্যাশিত সেই বিয়েও হয়নি। দু’টি ক্ষেত্রেই নাকি কারণ ছিলেন তাঁর মা ববিতা। তিনি জানতেন জীবনে অর্থের মূল্য। ফলে চাননি তাঁর মেয়ের বিয়ে এমন কারওর সঙ্গে হোক যাঁর কেরিয়ারের নিশ্চয়তা তখনও তৈরি হয়নি।
করিশ্মার সঙ্গে যখন বিয়ের কথা হয়েছিল, তখন অক্ষয় খন্না ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগত। ফলে রণধীরের ইচ্ছে থাকলেও ববিতা তাঁকে জামাই করতে চাননি। এরপর অভিষেকের সঙ্গে বাগদান। কিন্তু তখনও বচ্চনপুত্র ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠিত হননি। ফলে আবারও বেঁকে বসলেন ববিতা। তাছাড়া তাঁর মনে হয়েছিল, বিয়ের পর করিশ্মাকে অভিনয় করতে দেবেন না জয়া বচ্চন।
এরপর মূলত ববিতার ইচ্ছেতেই করিশ্মার বিয়ে হয় দিল্লির ব্যবসায়ী সঞ্জয় কপূরের সঙ্গে। সঞ্জয় ছিলেন ডিভোর্সি। ববিতা ভেবেছিলেন ধনী পরিবারে তাঁর মেয়ে সুখে থাকবে। কিন্তু সেই ইচ্ছে পূর্ণ হয়নি। করিশ্মার ১৩ বছরের দাম্পত্য ভেঙে যায় ২০১৬ সালে। তাঁর অশান্ত দাম্পত্য প্রভাব ফেলেছিল করিনার উপর। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কোনওদিন বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াবেন না।
কিন্তু তাঁর জীবন বয়েছিল অন্যখাতে। ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন, কেরিয়ারের শুরুতেই তিনি অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন হৃতিক রোশনের সঙ্গে। তখন হৃতিক বিবাহিত, সুজান খানের সঙ্গে শুরু করেছেন সংসার। কিন্তু অন্যদিকে করিনার সঙ্গেও নাকি তাঁর একইসময়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ‘ইয়াদেঁ’, ‘কভি খুশি কভি গম’, ‘মুঝসে দোস্তি করোগে’, ‘ম্যায় প্রেম কি দিওয়ানি হুঁ’-র মতো বক্সঅফিস সফল ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা।
হৃতিকের প্রথম ছবি ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’-তেও করিনার কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেই অফার ফিরিয়ে দেন। তবে এই নিয়ে খেদ ছিল না করিনার। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল, এই ছবিতে নায়িকার তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন নায়ক। ক্রমে ইন্ডাস্ট্রিতে গভীর হয় হৃতিক-করিনার সম্পর্কের গুঞ্জন।
তবে তাঁদের সম্পর্কে সম্মতি ছিল না তাঁদের দুই পরিবারের। হৃতিকের বাবা রাকেশ রোশন এবং করিনার মা ববিতা, দু’জনেই বিরোধিতা করেন এই সম্পর্কের। রাকেশের কথায় নাকি হৃতিক করিনার সঙ্গে ছবি করাই বন্ধ করে দেন। যতিচিহ্ন পড়ে যায় তাঁদের সম্পর্কেও।
এর পরে করিনার জীবনে শুরু শাহিদ-অধ্যায়। দু’জনের আলাপ ২০০৪ সালে ‘ফিদা’ ছবির সেটে। সে সময় শাহিদের সদ্য বিচ্ছেদ হয়েছে তাঁর বান্ধবীর থেকে। করিনাকে ভুলতে হয়েছে হৃতিক রোশনকে। ফলে দু’জনের কাছাকাছি আসতে সময় লাগেনি। প্রথমে আপত্তি থাকলেও পরে করিনার মা ববিতাও সায় দিয়েছিলেন মেয়ের পছন্দে। ঘনিষ্ঠ মহলে করিনা এও জানিয়েছিলেন, তিনি শাহিদকে বিয়ে করবেন।
‘৩৬ চায়না টাউন’, ‘চুপ চুপ কে’-এর মতো ছবিতে কাজ করার সময় জমে উঠেছে তাঁদের প্রেম। এতটাই গভীর ছিল তাঁদের সম্পর্ক, শাহিদের জন্য পুরোপুরি নিরামিষাশী হয়ে গিয়েছিলেন বেবো। শাহিদের কথাতেই ‘জব উই মেট’ ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হন তিনি। বক্স অফিসে এই ছবি তুমুল সফল হয়। কিন্তু এই ছবি যখন মুক্তি পেয়েছে, তখন করিনার হৃদয়ে অন্য পুরুষ এসে গিয়েছেন।
‘জব উই মেট’-এ গীত-আদিত্যর বিয়ে হলেও শাহিদ-করিনা আলাদা হয়ে যান হঠাৎই। তখন করিনার জীবনে অন্য পুরুষ। ছোটে নবাব সইফ আলি খান। আবার বিবাহিত কিন্তু ডিভোর্সি পুরুষের প্রেমে পড়লেন করিনা।
চলছে ‘তসান’-এর শুটিং। আর সঙ্গে করিনার জিরো ফিগার। বক্স অফিসে সে ছবি দাগ কাটতে পারেনি। মুষড়ে পড়েছিলেন করিনা। ডুবে গিয়েছিলেন হতাশায়। তখন নাকি তাঁর হতাশা প্রশমিত হয়েছিল সইফের সান্নিধ্যে।
কিন্তু কেন শাহিদের সঙ্গে করিনার সম্পর্ক ভেঙে গেল? সেই কারণ নিয়ে শাহিদ বা করিনা কেউ-ই স্পষ্ট করে মুখ খোলেননি কোনওদিন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে করিনা বলেন, “ভেবেছিলাম ‘তসান’ আমার কেরিয়ার বদলে দেবে। কিন্তু হল ঠিক উল্টো। ‘জব উই মেট’ আমার কেরিয়ার বদলে দিয়েছিল। আর ‘তসান’ আমার জীবন।”
শাহিদ একবার বলেছিলেন তাঁদের দু’জন দুই মেরুর। ঠিক যেন ‘জব উই মেট’-এর গীত এবং আদিত্য। একদিকে প্রাণবন্ত করিনা আর অন্যদিকে শান্ত, ধীর শাহিদ। বিচ্ছেদের পর তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কও ঠেকেছিল তলানিতে।
তবে শোনা যায়, সইফ আলি খানের জন্যই ফাটল ধরে শাহিদ-করিনার রসায়নে। শাহিদকে লুকিয়ে নাকি সইফের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন করিনা। জানতে পারার পরে করিনার সঙ্গে সম্পর্ক আর রাখতে চাননি শাহিদ।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে সমীকরণ। তিক্ততা সরিয়ে রেখে ‘উড়তা পঞ্জাব’ ছবিতে দু’জনে একসঙ্গে কাজও করেছেন। সাংসারিক জীবনেও খুশি তাঁরা। ২০১২-তে ছোটে নবাব সইফ আলি খানের সঙ্গে বিয়ে হয় করিনার। ২০১৫-তে শাহিদ গাঁটছড়া বাঁধেন মীরা রাজপুতের সঙ্গে। (ছবি: ফেসবুক)