নতুন ছবি মুক্তি পেয়েছে মাত্র তিন দিন আগে। দর্শক ও সমালোচক সকলেই এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন, ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’য় তুখড় অভিনয় করেছেন কঙ্গনা রানাউত। তবে এই ছবির প্রচারেই এক সাংবাদিকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের বিরাগভাজন হয়েছিলেন অভিনেত্রী। পরে আরও আপত্তিজনক কথা বলে সেই বিতর্ক উস্কে দেন তিনি।
বিতর্ক থামানোর চেয়ে জিইয়ে রাখাতেই বেশি উৎসাহ কঙ্গনার। বলিউডের তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উদ্দেশে কিছু না কিছু বলে প্রায় দিনই তিনি শিরোনামে। তাই বলিউডের একাংশের মতে, ছবি যতই ভাল চলুক, কঙ্গনার পক্ষে এখন বড় ছবি পাওয়া মুশকিল। কারণ বেশির ভাগ সহকর্মীর সঙ্গেই ঝামেলা বাধিয়ে রেখেছেন তিনি। হৃতিক রোশন ও কর্ণ জোহরের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের কারণ সুবিদিত। বাকি তারকাদের সঙ্গেও তাঁর সমীকরণ গোলমেলে।
শাহরুখ-সলমন-আমির
একা কাঁধে বক্স অফিসে ছবি চালানোর ক্ষমতা রাখেন কুইন। তাই আজ অবধি কোনও খানের বিপরীতে কাজ করতে দেখা যায়নি তাঁকে। তিনিও দাবি করেন, খানেদের বিপরীতে কাজের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। যেমন, সলমন খানের ‘সুলতান’-এ চরিত্রের ওজন না থাকায় সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেন কঙ্গনা। আবার কখনও বলেছেন, শাহরুখ ও তাঁকে নিয়ে ছবি বানাতে চান সঞ্জয় লীলা ভন্সালী। কিন্তু তিনি মত দেননি। আমির খানকে তিনি পছন্দ করেন বলেই এত দিন জানত ইন্ডাস্ট্রি। তবে ‘মণিকর্ণিকা’ বিতর্কের সময়ে কঙ্গনাকে সমর্থন করেননি আমির। তাই তাঁর নামও কাটা পড়েছে কুইনের তালিকা থেকে।
অজয় দেবগণ ও সঞ্জয় দত্ত
শোনা যায়, অজয় দেবগণের সঙ্গে এক সময়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কঙ্গনার। সেই সুবাদে কয়েকটি ছবিতে কঙ্গনার নাম সুপারিশও করেন অজয়। ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই’, ‘তেজ়’ ছবিগুলি সে সময়ের উদাহরণ। তবে এর কয়েক দিন পরেই এক সাক্ষাৎকারে অজয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন নায়িকা। অজয়ের সংসারে তা নিয়ে ঝামেলা হয়। কাজল ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন। পত্নীনিষ্ঠ স্বামী তার পরে সিদ্ধান্ত নেন, কঙ্গনার সঙ্গে আর কাজ করবেন না। অন্য দিকে অজয়ের ভাল বন্ধু সঞ্জয় দত্ত-ও পরিস্থিতি বিগড়ানোর ভয়ে কঙ্গনার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেন।
দীপিকা পাড়ুকোন, আলিয়া ভট্ট, তাপসী পান্নু
দীপিকার বিরুদ্ধে কঙ্গনার অভিযোগ, তাঁর ছবি ‘তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস’-এর প্রিমিয়ারে আসার প্রস্তাব খারিজ করেন তিনি। যদিও দীপিকার ছবি ‘পিকু’র প্রিমিয়ারে গিয়েছিলেন কঙ্গনা। আলিয়া ভট্টকে নিয়ে তাঁর রাগের কারণ জানা যায় না। তবে কর্ণ জোহরের নয়নের মণি হওয়ার জন্যই হয়তো মহেশ-কন্যা কঙ্গনার চক্ষুশূল। কখনও আলিয়ার রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা, কখনও তাঁর বয়স নিয়ে তির্যক মন্তব্য করতে শোনা যায় কঙ্গনাকে। সম্প্রতি তাঁর নিশানায় তাপসী। শোনা যায়, তাপসীর ‘বদলা’ ছবিটি বক্স অফিসে সফল হওয়ার পরেই তাঁকে ‘কঙ্গনার সস্তা কপি’ বলে কটাক্ষ করেন অভিনেত্রীর দিদি রঙ্গোলি। হৃতিকের সঙ্গে একটি মিউজ়িক ভিডিয়ো করায় সোনমের উপরেও ক্ষুব্ধ তিনি।
বরুণ ধওয়ন
ধর্মা প্রোডাকশনের ‘পোস্টার বয়’ বলে বরুণকে নিয়েও সমস্যা রয়েছে কঙ্গনা-রঙ্গোলির। সম্প্রতি কঙ্গনার নতুন ছবির ট্রেলার টুইট করার সময়ে কেন কঙ্গনার নাম লেখেননি বরুণ, তা নিয়েও ঝামেলা পাকান দু’জনে। তবে আসল লড়াই এখনও বাকি। ‘পঙ্গা’ ও ‘স্ট্রিট ডান্সার থ্রি ডি’ একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে। তার পরে বোঝা যাবে, বরুণের চেয়ে কঙ্গনার দম বেশি কি না।
প্রযোজকের দল
অজয়, সলমন, অক্ষয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার তালিকা থেকেও বাদ পড়েছেন কঙ্গনা। অন্য দিকে ‘সুলতান’-এর প্রস্তাব নাকচ করা প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বার বার জানান যে, যশ রাজ ফিল্মসের কর্ণধার আদিত্য চোপড়া অনেক বার তাঁকে ছবিটি করতে বলেন। এই কথা আদিত্যের কানে যেতেই যশ রাজের তালিকায়ও ব্ল্যাকলিস্টেড হন নায়িকা।
মুদ্রার এ-পিঠ, ও-পিঠ
বড় তারকার ছবিতে নায়িকার অংশে কাঁচি চালানো হয় বলে বরাবর অভিযোগ করেন কঙ্গনা। অথচ, ‘কুইন’-এর সাফল্যের পর থেকেই কঙ্গনা তাঁর বেশির ভাগ ছবিতে পুরুষ সহকর্মীর অংশ কমানোর চেষ্টা করেছেন বলে শোনা যায়। পুরুষ চরিত্রটি গুরুত্ব পেলে তিনি শুটিংয়ে ঠিক মতো আসেন না। আরও নানা রকম ভাবে অসহযোগিতা করার চেষ্টা করেন।
অভিনেত্রী কঙ্গনার অনুরাগীর সংখ্যা কম নয়। তাঁর অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথাও নয়। কিন্তু আনুষঙ্গিক কারণে গত কয়েক বছরে তিনি যে ইমেজ তৈরি করেছেন, তাতে ভবিষ্যতে তাঁরই বিপদ বাড়বে বলে আশঙ্কা ইন্ডাস্ট্রির।