এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিপত্তি কায়েম করেছে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পীদের (অভিনেতা ও পরিচালক) চুক্তির বাঁধনে বেঁধে ফেলে তাদের রাশ শক্ত হয়েছে। কিন্তু কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতা গ্রেফতার হওয়ায় প্রযোজনা সংস্থার অন্দরে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব নাকি অভিনেতাদের সঙ্গে চুক্তিপত্রে পড়েছে।
বছরের গোড়াতেই জোর গুঞ্জন উঠেছিল, যিশু সেনগুপ্ত ও আবীর চট্টোপাধ্যায়কে বিশেষ ভাবে চুক্তিবদ্ধ করবে সংস্থা। বছরে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছবি করার চুক্তি থাকলেও সেই ‘উল্লেখযোগ্য’ চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি বলেই খবর। অনির্বাণ ভট্টাচার্যও নাকি আর চুক্তিতে নেই। অঙ্কুশ ও যশ দাশগুপ্ত অন্য প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। বনি সেনগুপ্ত আর চুক্তির পথে পা বাড়াননি। গত বছর থেকে সংস্থা শুরু করেছে ‘ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট’-এর নতুন চুক্তি। অনেকটা যশ রাজ ফিল্মসের আদলে। রাজ্য-রাজনীতির রং বদলে এসভিএফের অন্দরের স্থিতিশীলতা যে ধাক্কা খেয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। সেখানে কাজের পরিসর কমছে বলেই কি চুক্তির রাশ আলগা হচ্ছে? সাম্প্রতিক ঘটনা পরম্পরায় এই প্রশ্নই বারবার করে উঠে আসছে।
গত বছরেই এসভিএফের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৈনাক ভৌমিক। দু’জনেরই তিন বছরের চুক্তি। মৈনাকের কথায়, ‘‘ওদের সঙ্গে আমার চারটে ছবির চুক্তি।’’ ধ্রুবর প্রথম দু’টি ছবিই হিট। পরিচালকের কথায়, ‘‘এসভিএফের সঙ্গে চুক্তি করে আমি হ্যাপি জ়োনে রয়েছি। আগামী ছবি নিয়ে আলোচনা চলছে। কোনও ক্ষেত্রে অসুবিধে হয়নি।’’ তবে তাঁর মতো বাকিরাও কি এতটাই হ্যাপি?
প্রযোজনা সংস্থার পছন্দের পাত্র অঙ্কুশ ও যশ দাশগুপ্ত। গত কয়েক বছরে এসভিএফের ছবি করার পরে অন্য প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কথা বলছেন দুই অভিনেতা। অঙ্কুশের কথায়, ‘‘ক্যামিলিয়া, সুরিন্দর ফিল্মসের সঙ্গে আমার কথা চলছে।’’ সুরিন্দর ফিল্মসের ছবি করছেন যশও। এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী এসকে মুভিজ়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ অঙ্কুশকে নিজেদের দলে টেনেছিল এসভিএফ। পরিস্থিতি সাপেক্ষে বিকল্প খুঁজতে হচ্ছে তাঁকেও।
সংস্থার ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’-এ ব্যোমকেশের মতো হিট সিরিজ় পরিচালনা করেছিলেন সায়ন্তন ঘোষাল। কিন্তু এই সংস্থায় নতুন কিছু না করে সুরিন্দর ফিল্মস, গ্রিন টাচের মতো প্রযোজনা সংস্থায় টেনিদা ও ব্যোমকেশ পরিচালনা করছেন সায়ন্তন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পরপর ছবি আসছে একমাত্র সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের। শোনা যায়, প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে এক কোটি টাকা চুক্তির বিনিময়ে বছরে তিন-চারটি ছবির দায়িত্ব নিয়েছেন পরিচালক।
ছবির চুক্তি বরাবরই ছিল। তবে সংস্থার নতুন ‘ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ চুক্তিতে শামিল প্রিয়ঙ্কা, অর্জুন চক্রবর্তী, এনা সাহা ও রাজদীপ গুপ্ত। যেখানে নাম লেখালে সেই শিল্পীর এনডোর্সমেন্টের পারিশ্রমিক এক লাফে অনেকটা বেড়ে যায়। শোনা যাচ্ছে, প্রিয়ঙ্কা যে বিজ্ঞাপনের জন্য আগে ৩-৪ লক্ষ টাকা পেতেন, এসভিএফের মারফত হলে তাঁর পারিশ্রমিক হচ্ছে ৭-৮ লক্ষ টাকা। বদলে শিল্পীর পারিশ্রমিকের একটি অংশ পাচ্ছে প্রযোজনা সংস্থা। প্রিয়ঙ্কার কথায়, ‘‘আমি শুটে থাকলে ফোন ধরতে পারি না। সেখানে খারাপ লাগার জায়গা তৈরি হয়। কোন ইভেন্টে কী পরব, কেমন সাজব, সব কো-অর্ডিনেট ওরা করে দিচ্ছে। আর চেনাজানা থাকলে পারিশ্রমিক বলাটাও ক্ষেত্র বিশেষে লজ্জাজনক। সে ক্ষেত্রেও সুবিধে হচ্ছে।’’ শোনা যায়, এই চুক্তির আওতায় আসার জন্য প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে অনেক অভিনেতাকেই আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এক নম্বর প্রযোজনা সংস্থা চাপে বলেই কি অনীহা?
শ্রীকান্ত মোহতার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আগামী দিনেও পরিস্থিতি কোন দিকে ঘুরবে তা হলফ করে কেউ বলতে পারেন না। তবে এসভিএফের সঙ্গে যাঁদের চুক্তির মেয়াদ শেষের দিকে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই বিকল্প খুঁজছেন। চুক্তির নাগপাশের জোরে আধিপত্য কায়েম করেছিল তারা। সেই বাঁধন আলগা হওয়ায় পরিস্থিতির ফায়দা কি তুলবে এই মুহূর্তে সংস্থার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী সুরিন্দর ফিল্মস?