টলিপাড়ার প্রায় সকলেই সন্তু মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকাহত।—ফাইল চিত্র।
মন ভাল নেই টলিপাড়ার। চলে গেলেন কিংবদন্তী অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায়। কিছু দিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন অভিনেতা এবং প্রাক্তন সাংসদ তাপস পাল। বিষাদের সুর বেজে চলেছে টলিউডের অন্দরে।
অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘হেমন্তের পাখি’-র কথা। ওই ছবিতে তাঁর বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সন্তু মুখোপাধ্যায়। আনন্দবাজার ডিজিটালকে পরম বলছিলেন, ‘‘খুব কাছ থেকে চিনতাম ওঁকে। আমার মায়ের ইউনিভার্সিটির সিনিয়র ছিলেন সন্তু কাকু। এক সঙ্গে কত আড্ডা দিয়েছি। খেতে খুব ভালবাসতেন। আমুদে, বৈঠকি, মেজাজি মানুষ ছিলেন। খুব খারাপ লাগছে।’’
মাসখানেক আগেই শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাঁকে। চলছিল চিকিৎসাও। এই চলে যাওয়া মানতে পারছেন না অপরাজিতা আঢ্যও। একসঙ্গে জলনূপুর ধারাবাহিকে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর কাজ করেছেন ওঁরা। স্মৃতিকাতর আজ তিনিও। বলছিলেন, ‘‘কাছের মানুষ ছিলেন। প্রচুর শিখেছি ওঁর কাছ থেকে। আমাকে খুব ভালবাসতেন। অসুস্থ ছিলেন অনেক দিন থেকেই সেটা শুনেছিলাম। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে এমনটা ঘটবে সেটা কিছুতেই ভাবিনি।’’
আরও পড়ুন: প্রয়াত অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায়
তপন সিংহের ‘রাজা’ ছবি দিয়ে তাঁর বড়পর্দায় আসা। এর পর একে একে তরুণ মজুমদার, হরনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ পরিচালকের ছবিতে চুটিয়ে কাজ করেছেন সন্তু মুখোপাধ্যায়। বড় পর্দার পাশাপাশি মঞ্চ, যাত্রা সব ক্ষেত্রেই নিজের ছাপ রেখে গেছেন তিনি। ছোট পর্দাতেও কাজ করেছেন শেষ জীবন অবধি। সম্প্রতি ‘নক্সি কাঁথা’ ধারাবাহিকে অভিনয় করছিলেন তিনি। সেই ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্র মানালি দে’র ভাষায়, ‘‘নকসি কাঁথার সেটে অনেকটা কাছ থেকে পেয়েছি সন্তু কাকুকে। খুব ভাল মানুষ ছিলেন। অত বড় এক জন অভিনেতা অথচ কিছু ভুল করলে কী সুন্দর করে শুধরে দিতেন। খুব মজা করতেন। শিবুদা –নন্দিতাদির ‘গোত্র’তেও একসঙ্গে কাজ করেছি আমরা। কী বলব জানি না। খুব খুব খারাপ খবর।’’
আরও পড়ুন: আউটডোর শুটে সন্তুদাকে আইবুড়ো ভাত খাইয়েছিলাম: সাবিত্রী
‘নক্সিকাঁথা’, ‘জলনূপুর’ , ‘কুসুম দোলা’, ‘ফাগুন বউ’ ধারাবাহিকে সন্তু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন স্নেহা চট্টোপাধ্যায়। স্নেহার কথায়, ‘‘একটা বাদশাহী ব্যাপার ছিল সন্তুদার মধ্যে। গাড়ি থেকে নামা কণ্ঠস্বর, অভিনয় সবটাই রাজকীয়। সেই সন্তুদা শুয়ে পড়েছেন দেখে খুব বড় ধাক্কা লেগেছিল। খুব ইয়ার্কিও করতেন। বলতেন, আর কথা বলার লোক কই? এই তো তোরা কয়েক জন।’’
অভিনেত্রী পায়েল সরকার কেরিয়ারের শুরুতেই অভিনয় করেছিলেন অভিনেতার সন্তু মুখপাধায়ের সঙ্গে। সেই স্মৃতির রেশ টেনে তিনি বললেন, ‘‘সেই ভাবে কাজের সুযোগ না হলেও, কেরিয়ারের শুরুতে ওঁকে পেয়েছিলাম। খুব খারাপ লাগছে। অপূরণীয় ক্ষতি আমাদের সবার জন্য।’’
অভিনেতা শুভাশিষ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘৪০ বছরের সম্পর্ক আমাদের। একবার এক নাটকের মঞ্চে আলোকের এই ঝর্ণা ধারা গেয়েছিলেন—আজ সেই গান খুব মনে পড়ছে। এক সময় আমার গলার স্বর থেমে গিয়েছিল, সন্তুদা নিজে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে দিয়েছিলেন, এমন কি নিজেও গিয়েছিলেন সঙ্গে। যাত্রায় যাওয়ার পর যাত্রার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। অসুস্থতা নিয়েও সিরিয়ালে কাজ করতেন।’’
পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর সঙ্গে কাটান মুহূর্তগুলোর কথা। নিজের বাবার সঙ্গেও মিল খুঁজে পাচ্ছেন তিনি। বলছেন, ‘‘বাবা মনে করতেন উত্তম কুমারের পর তিনি বাংলা সিনেমা জগতের সবচেয়ে প্রমিসিং অভিনেতা’’ মন ভাল নেই তাঁর, একেবারেই।
পরিচালক অর্জুন দত্ত থেকে সুদীপ্তা চক্রবর্তী সবার গলাই আজ বিষাদ মাখা। টলিউডের আনাচে কানাচে আর শোনা যাবে না সেই মায়াময় কণ্ঠস্বর।