ছবির চিত্রনাট্য এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দু’টি বেছে নেওয়ার বিষয়েই কাজল খুব খুঁতখুঁতে। ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর বন্ধুবৃত্ত খুবই ছোট। কাজলের অন্তরঙ্গ বন্ধুদের মধ্যে একজন অবশ্যই শাহরুখ খান। কেরিয়ারের শুরু থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব গাঢ়। শাহরুখের আগেও আরও দু’ জনের সঙ্গে কাজলের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা নাদিম-শ্রাবণ জুটির নাদিম আখতার সইফি এবং শ্রাবণ কুমার রাঠৌর।
কিন্তু একটি ঘটনার জেরে কাজল ও নাদিম-শ্রাবণ জুটির বন্ধুত্ব চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। তার জন্য যথেষ্ট মাসুলও দিতে হয়েছিল দু’ পক্ষকেই।
তাঁদের আলাপ হয়েছিল তখন, যখন কাজলকে ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ চিনত না। অন্যদিকে, ‘সাজন’, ‘আশিকি’, ‘দিল হ্যায় কি মানতা নহি’, ‘সড়ক’-এর মতো ছবিতে সুরকার হিসেবে কাজ করে নাদিম-শ্রাবণ জুটি খ্যাতির শীর্ষে।
সে সময় ‘বেখুদি’ ছবির সুর দিচ্ছিলেন নাদিম-শ্রাবণ। এই ছবিতে প্রথম দিকে নায়ক নায়িকার ভূমিকায় ছিলেন কাজল ও সইফ আলি খান। পরে সইফের জায়গায় নেওয়া হয় কমল সাদানাকে।
এই ছবিতেই প্রথম বার কাজলের লিপে ছিল নাদিম-শ্রাবণের গান। ‘বেখুদি’-র পর থেকে আরও গভীর হয় তাঁদের বন্ধুত্ব। নাদিম শ্রাবণ যে ছবিতে কাজ করতেন। প্রযোজককে অনুরোধ করতেন যাতে নায়িকার ভূমিকায় কাজলকে নেওয়া হয়।
তাঁদের কথাতেই ‘বাজিগর’ ছবিতে কাজলকে সুযোগ দেন আব্বাস মস্তান। এই ছবিতে সুরকারের দায়িত্বে প্রথমে ছিলেন নাদিম-শ্রাবণই। এর পর থেকে এই জুটিকে নিজেদের মেন্টর হিসেবে দেখতেন কাজল।
‘বাজিগর’ ছবির শুটিং চলাকালীনই আরও একটি ছবিতে কাজলকে নেওয়ার জন্য বলেন নাদিম-শ্রাবণ। সেই ছবির বিষয়ে কথা বলতেই তাঁরা কাজলের বাড়িতে যান।
বাড়িতে ঢুকেই কাজলের মা তনুজার সঙ্গে দেখা হয় নাদিম-শ্রাবণের। সে সময় বন্ধুদের সঙ্গে তাস খেলছিলেন তনুজা। অভিযোগ, তনুজাকে ‘হ্যালো’ বললেও সুরকার জুটিকে ইগনোর করেন বিগত দিনের নায়িকা।
সেদিন নাকি ড্রয়িংরুমে কাজলের জন্য দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করেছিলেন নাদিম শ্রাবণ। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি অভিনেত্রী। এমনকি, তনুজাও নাকি কথা বলেননি। এই অসৌজন্যে ক্ষুব্ধ হন সুরকার জুটি।
পরে তাঁরা জানিয়েছিলেন, সে দিনই তাঁরা ঠিক করেছিলেন, এর পর আর কোনওদিন কাজলের সঙ্গে কাজ করবেন না।
এতটাই রেগে গিয়েছিলেন, ‘বাজিগর’ ছবির কাজও ছেড়ে দেন নাদিম-শ্রাবণ। ছবির মাঝপথে সেই দায়িত্ব পান অনু মালিক।
যে ছবি নিয়ে কাজলের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন, সেই ‘রং’ ছবিতেও কাজলের পরিবর্তে দিব্যা ভারতীর নাম সুপারিশ করেন নাদিম শ্রাবণ।
এর পর ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলেন কাজল। যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন সুরকার জুটির সঙ্গে।
কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। কাজলের সব চেষ্টা বিফলেই গিয়েছিল। তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার কোনও ইচ্ছে দেখাননি দুই সুরকার।
এই তিক্ততার ফলে দু’ তরফেই কেরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কাজল যেমন ‘রঙ’-এ অভিনয়ের সুযোগ হারান, নাদিম শ্রাবণেরও হাতছাড়া হয়ে যায় ‘বাজিগর’-এর মতো সুপারহিট ছবি।