শ্রাবন্তী, সায়নী, তনুশ্রী, সায়ন্তিকা।
তাঁরা জিতবেনই, এমন কথা হলফ করে কেউ বলতে পারেননি। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল কঠিন আর প্রার্থীরা ছিলেন রাজনীতির ময়দানে নতুন। তবে ফলাফল ঘোষণার আগে অবধি তারকাপ্রার্থীরা আশায় বুক বেঁধে রেখেছিলেন। রাজ্যে ‘প্রত্যাবর্তন’এর ঝড়ে বিজেপি শিবিরের বহুল-চর্চিত ‘আসল পরিবর্তন’ এখন দূর অস্ত। তাই ভোটের আগে বিজেপি শিবিরে যোগ দেওয়া চারজন তারকাপ্রার্থীর (শ্রাবন্তী, পায়েল সরকার, যশ দাশগুপ্ত এবং তনুশ্রী চক্রবর্তী) পরাজয় নিয়ে চর্চা চলছে। এই দলে আছেন পার্নো মিত্রও, তবে তিনি ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পরেই এই শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন। তৃণমূল শিবিরে পরাজিত হয়েছেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌশানী মুখোপাধ্যায় এবং সায়নী ঘোষ। তৃণমূল সমর্থক হলেও (সায়ন্তিকা, কৌশানী) ভোটের আগে দলে নাম লেখানোয়, এঁদের সকলেরই খানিক নেতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে জনমানসে। ভোটে হেরে যাওয়ার পরে কি তাঁরা রাজনীতি ছেড়ে দেবেন? আবার ছবির জগতেই মনোনিবেশ করবেন? না কি রাজনীতিতেও এখন থেকে বেশি সময় দেবেন?
২০১৯ সালে বিজেপিতে নাম লেখালেও, রূপাঞ্জনা মিত্র বা রূপা ভট্টাচার্যের মতো সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম রাখেন না পার্নো। তাই তাঁর রাজনৈতিক কার্যকলাপও থাকে খানিক আড়ালে। বরাহনগর কেন্দ্রে হারের পরে তিনি বলেছেন, ‘‘রাজনীতি ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। ২০১৯ সাল থেকে দলে রয়েছি। আগামী দিনে দল যে কাজ দেবে, তা-ও করব। এলাকার মানুষ যে কোনও বিপদে আমাকে পাশে পাবেন।’’ কোভিড থেকে সদ্য সেরে ওঠা পার্নো করোনা মোকাবিলায় কাজও করছেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি তা বলার পক্ষপাতী নন। পার্নো অভিনীত রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘ধর্মযুদ্ধ’ এবং হরনাথ চক্রবর্তীর একটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায়।
শ্যামপুর কেন্দ্র থেকে পরাজিত বিজেপি প্রার্থী তনুশ্রী চক্রবর্তী। তিনি বললেন, ‘‘লড়াই শেষ নয়, এ বার শুরু হবে। মন খারাপ হয়েছে। কারণ আমি ও আমার কর্মীরা খুব খেটেছিলাম। আর রাজনীতি নিয়ে সিরিয়াস বলেই এসেছি, পিছু হটার প্রশ্ন নেই।’’ রাজ্যে নির্বাচনের ফল বেরোনোর পরে বাড়তে থাকা হিংসা নিয়ে তনুশ্রীর মত, ‘‘এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জিত নয়, বিজেপির হার। যে ভাবে তৃণমূলকর্মীরা রাজ্যজুড়ে হিংসা ছড়াচ্ছে, তা কোনও দলের জয়ের ছবি হতে পারে না।’’
হারের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও কিছু পোস্ট করেননি সায়ন্তিকা। ছবির জগৎ থেকে তিনি অনেক দিনই দূরে। মাচা বা রিয়্যালিটি শোয়ে তাঁকে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া ফিটনেস-সচেতন অভিনেত্রী নিজের জিম খুলেছেন। আগামী দিনে তিনি কী করবেন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
প্রতি বছর কৌশানীর ছবি মুক্তি পেলেও, নজরকাড়া কাজ তাঁর কমই। হারের পরে তিনি কোনও বিবৃতি না দিলেও, ইনস্টা-স্টোরিতে তাঁর অনুরাগীদের পাঠানো একাধিক ‘হাল ছেড়ো না’র বার্তা শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী। তিনিও রাজনীতিতে থাকবেন কি না, তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না।
বিজেপির দুই তারকাপ্রার্থী শ্রাবন্তী (বেহালা পশ্চিম) এবং পায়েল সরকার (বেহালা পূর্ব) গ্ল্যামারের জোরেই হয়তো এমন গুরুত্বপূর্ণ সিট জিতে যাবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পায়েলের দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, ‘‘এটা আমার সবে শুরু। আমি এই জার্নি চালিয়ে নিয়ে যাব।’’ অর্থাৎ রাজনীতি থেকে এখনই সরে যাওয়ার প্রশ্ন নেই তাঁর। যদিও শ্রাবন্তীর বিবৃতি অনুযায়ী তাঁর অবস্থান স্পষ্ট নয়। এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে শিক্ষণীয়। তবে আগামী দিনে কী করবেন, তা নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। গত কয়েক বছরে শ্রাবন্তী ও পায়েলের হিট না থাকলেও, পর্দা থেকে দূরে ছিলেন না তাঁরা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় চুপ করে রয়েছেন যশ দাশগুপ্ত। ভোট-প্রচারে পর্দার ‘হিরো’কে চোখের সামনে পেয়ে উচ্ছ্বাস বাঁধ মানছিল না অনেক অনুরাগীরই। তবে এই পরাজয়ের পরে যশ কী করবেন, তা এখনও তিনি স্পষ্ট করেননি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে যশ জানান, তিনি এতটাই মর্মাহত যে, কথা বলার অবস্থায় নেই।
এই নির্বাচনে কোনও এক তারকাপ্রার্থী যদি আলোচনার কেন্দ্রে থাকেন, তিনি সায়নী ঘোষ। বিজেপি শিবিরের হেনস্থার জবাবেই ‘দিদি’র হাত শক্ত করে ধরেছিলেন তিনি। অগ্নিমিত্রা পালের কাছে আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রটি হারলেও, তাঁর রাজনৈতিক ‘দৌড়’ (আক্ষরিক অর্থেও) প্রশংসা পাচ্ছে নেটিজ়েনের একাংশের কাছে। বাগ্মী সায়নী হয়তো আগামী দিনে লড়াই জারি রাখবেন।
পরাজিত তারকা-প্রার্থীরা কী করেন, তার দিকে নজর ইন্ডাস্ট্রির, সাধারণ মানুষের। তবে প্রথম বার ভোটে হেরেই রাজনীতি ছাড়লে, তাঁদের ভাবমূর্তির পদোন্নতি হবে কি?