মাত্র ১০ বছর বয়সে শুরু মডেলিং। পরে সুপারহিট ছবি ‘এক দুজে কে লিয়ে’-এর নায়িকা। যে ভাবে ঝড়ের গতিতে উত্থান, সে ভাবেই মিলিয়ে যাওয়া ইন্ডাস্ট্রি থেকে। রক্ষণশীল পঞ্জাবি পরিবারের এই মেয়ে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন বলিউড এবং দক্ষিণী ছবিতে। তিনি অতীতের রোমান্টিক নায়িকা, রতি অগ্নিহোত্রী।
১৯৬০-এর ১০ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে। পরে যখন তাঁর বয়স ১০ বছর, রতির বাবা কর্মসূত্রে চলে যান তৎকালীন মাদ্রাজ শহরে। মাদ্রাজের গুড শেপার্ড কনভেন্ট স্কুলের ছাত্রী ছিলেন তিনি।
স্কুলের একটি নাটকে অভিনয়ের সময়ে তামিল পরিচালক ভারতীরাজার চোখে পড়ে যান। তিনি ছিলেন দর্শকাসনে। রতির বাবার সঙ্গে কথা বলে তিনি অনুমতি চান। তাঁর পরের ছবিতে মেয়েকে অভিনয় করতে দিতে রাজি হন রতির বাবা। কিন্তু শর্ত ছিল, সিনেমার শুটিং শেষ করতে হবে এক মাসের মধ্যে।
১৯৭৯ সালে রতির প্রথম বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ। তামিল ছবি ‘পুথিয়া ভারপুগাল’-এ। অভিনেতা ভাগ্যরাজেরও এটা ছিল প্রথম ছবি। তিনি রতিকে সাহায্য করেছিলেন তামিল উচ্চারণ আয়ত্ত করতে। যদিও ভাগ্যরাজের নিজের কণ্ঠই ডাবিং করা হয়েছিল।
রতির প্রথম ছবি সফল হয়। তিনি পরিচিতি পান নায়িকা হিসেবে। ক্রমশ তামিল ও অন্যান্য দক্ষিণী ভাষার জনপ্রিয় নায়িকা হয়ে ওঠেন তিনি। রতি নিজেও বলতেন, তিনি হৃদয়ের দিক দিয়ে একজন তামিল এবং মাদ্রাজ (আজকের চেন্নাই) তাঁর দ্বিতীয় ঘরবাড়ি। দক্ষিণী ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে তিন বছরে মোট ৩২ টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রিতে কামাল হাসান এবং রতি অগ্নিহোত্রী ছিলেন জনপ্রিয় জুটি। তাঁদের সেই রসায়ন হিন্দিতে ধরা পড়ল ‘এক দুজে কে লিয়ে’ ছবিতে। ১৯৭৯ সালে তেলুগু ছবি ‘মারো চরিত্র’-এর হিন্দি সংস্করণ ছিল, ১৯৮১-র ‘এক দুজে কে লিয়ে’। দুটোই ব্লকবাস্টার।
বলিউডেও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন রতি। অভিনয় করেছেন ৪৩ টির বেশি হিন্দি ছবিতে। আটের দশকে প্রথম সারির নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম রতির সফল ছবিগুলোর মধ্যে আছে ‘ফর্জ অউর কানুন’, ‘কুলি’, ‘আপ কে সাথ’ এবং ‘হুকুমৎ’।
কেরিয়ারের মধ্যগগনে থাকতে থাকতেই বিয়ে। ১৯৮৫ সালে রতি বিয়ে করলেন ব্যবসায়ী ও ইঞ্জিনিয়ার অনিল ভিরওয়ানিকে। নতুন জীবনে পা রাখার পরেই আবার ব্যক্তিগত জীবনে আঘাত রতির। প্রয়াত হন তাঁর বাবা।
এই দুই ঘটনার অভিঘাতে আটের দশকের শেষে রতি অভিনয় থেকে সরে যান। ১৯৮৬ সালে জন্ম হয় রতির একমাত্র ছেলে তনুজের। বর্তমানে তনুজ বলিউডের মডেল ও অভিনেতা।
স্বামীর বিরুদ্ধে গার্হ্যস্থ হিংসার অভিনয় এনেছিলেন রতি। ২০১৫ সালে ভেঙে যায় অনিল-রতির কুড়ি বছরের দাম্পত্য। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন অনিল ভিরওয়ানি।
প্রায় দু’ দশকের বিচ্ছেদের পরে রতি আবার ইন্ডাস্ট্রিতে ফেরেন ২০০১ সালে। ‘কুছ খাট্টি কুছ মিঠি’ ছবিতে তিনি কাজলের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। পাশাপাশি আরও কিছু হিন্দি, তামিল, মালয়ালম এবং একটি বাংলা ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। সম্প্রতি আবার তিনি অভিনয়ের বাইরে। ২০০৮-এর পরে তাঁকে অনেকদিন কাজ করতে দেখা যায়নি কোনও মাধ্যমেই।