লকডাউনে বেশ অসহায় হয়ে পড়েছে পাড়ার চারপেয়েরা। বাড়ির পোষ্যর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতেও নাজেহাল অনেকে।
‘‘মাছ ছাড়া আর তেমন কিছুই খেতে শেখেনি আমার বিড়াল। কতদিন আমি ওর জন্য মাছের জোগান দিতে পারব, জানি না,’’ দুশ্চিন্তা স্পষ্ট সোহিনী সরকারের কণ্ঠে। আবার নিজের বিড়ালের জন্য মজুত করা খাবার থেকে পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে রাস্তার বিড়ালদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত। ‘‘পাড়ার যত বিড়াল-কুকুর আছে, পাপা (অনুপ সেনগুপ্ত) তাদের জন্য খাবারের বন্দোবস্ত করছেন। আমার পুচাইকে (বিড়ালের নাম) চারটে বিস্কুট দিতাম। এখন থেকে দুটো করে বিস্কুট দিচ্ছি।’’ এমন ভাবেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সেলেবকুল। বনির বাড়ির সামনে প্রায় ১৩টি কুকুর ও ২১টি বিড়াল খেতে আসে রোজ। তবে কতদিন খাবারের বন্দোবস্ত করা যাবে, তা অনিশ্চিত।
পাড়ার বিড়াল-কুকুরের খাওয়ার ব্যবস্থা না হয় হল। কিন্তু অফিসপাড়া বা বন্ধ হোটেলের আশপাশের কুকুর-বিড়ালরা কী খাবে? এমন ভাবনা থেকেই এগিয়ে এসেছেন দেবশ্রী রায়। কিছু দিন আগে তাঁর তত্ত্বাবধানে কয়েকজন পশুপ্রেমী বড়বাজার, ডালহৌসি ও শিয়ালদহ চত্বরে রেকি করে এসেছেন। সেখানে কুকুর, বিড়ালের সংখ্যা জেনে তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানালেন তাঁরা। লকডাউনের মেয়াদ শেষ না হওয়া অবধি তাঁরা এই লড়াই চালিয়ে যাবেন। পাশে পেয়েছেন দেবলীনা দত্ত ও তথাগত মুখোপাধ্যায়কে। তাঁদের বাড়িতেও রয়েছে তিনটি কুকুর। তাঁদের আবেদন, কিছু নিরীহ প্রাণীর মুখে খাবার তুলে দিতে সকলেই এগিয়ে আসতে পারেন। বাড়ির বাড়তি খাবারই পাড়ার কুকুর বা বিড়ালদের দেওয়া যায়। প্রতিটি বাড়ি থেকে যদি একবেলা করেও খাবার দেওয়া হয়, তা হলে প্রাণীগুলি বাঁচে।
দেশপ্রিয় পার্ক অঞ্চলে দেবশ্রী রায়ের বাড়ি। পাড়ার প্রায় ৮৫টি বিড়াল-কুকুরের খাবারের দায়িত্ব অনেক দিন ধরেই সামলাচ্ছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে যদিও খাদ্যসম্ভারে টান পড়তে শুরু করেছে, কিন্তু দেবশ্রী থেমে যাননি। তাঁর আবেদন, ‘‘সপ্তাহে অন্তত দু’দিন দু’ঘণ্টা করে পেট শপ খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক পোষ্যই এই ধরনের খাবার খেতে অভ্যস্ত। এই খাবার না পেলে ওরা বাঁচবে না।’’
এ দিকে আবার রাস্তার কুকুর-বিড়ালকে খাওয়াতে গিয়ে হেনস্থা হয়েছেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। সে কথার রেশ টেনে দেবশ্রী রায় বললেন, ‘‘এখনও ভুল ধারণা রয়েছে, কুকুর-বিড়াল থেকে করোনা ছড়াতে পারে। এই ভুল না ভাঙলে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। ’’
খাওয়ার সমস্যা ছাড়াও রয়েছে অন্য সমস্যাও। যেমন অভিনেতা গৌরব চট্টোপাধ্যায়ের আদরের পোষ্য পোকুর সমস্যাটি একটু অন্য ধরনের। পোকু ও গৌরব একই বিছানায় ঘুমোয়। কিন্তু এখন ঘুমের বারোটা বেজে গিয়েছে। গৌরবের কথায় ‘‘বিভিন্ন কারণে কুকুরের কানে সমস্যা হতে পারে। ওদের কান নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। এটা আমরা করতে পারি না। কিন্তু যিনি পরিষ্কার করেন, তিনি এখন আসতে পারছেন না।’’ তাই নিজেকেই সে দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করছেন গৌরব। এ প্রসঙ্গে দেবলীনার মত, ‘‘এখন যদি ওদের কোনও অসুখও করে, সেটা নিয়েও চিন্তা। কোথায় দেখাব, কী করব... সে সব ব্যবস্থা আগেভাগে করে রাখতে হবে।’’
নিজের পোষ্যর সঙ্গে রাস্তার চারপেয়েদের যত্ন নিতে অনেক তারকাই এগিয়ে এসেছেন। আবেদন জানিয়েছেন অন্যরাও যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)