পোষ্যর সঙ্গে মিমি। নিজস্ব চিত্র।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কোভিড যুদ্ধে সক্রিয় মিমি চক্রবর্তী হঠাৎ চুপ কেন?
৬২ দিন ধরে এই কোভিড যুদ্ধে লড়াই করছি আমি, আমার অফিস। রোজ নিজেকে মোটিভেট করেছি। আজ মনে হচ্ছে আমাকে এ বার কেউ মোটিভেট করুক। আজ সকালে উঠেই মনে হল, আর কত দিন?
সকালে উঠে আর কী ভাবলেন?
(একটু ভেবে) দেখুন, মিমি চক্রবর্তী শুধু অভিনেতা, সাংসদ নয়। তার হৃদয় আছে, সে আগে রক্তমাংসের মানুষ তো!
সেই রক্তমাংসের মানুষ আজ সকালে কী ভাবছিল?
আজ মনে হল, আমার মাথার ওপর ছাদ আছে। গায়ের চাদর আছে। দু’বেলা খাবার আছে। আমার সঙ্গে সঙ্গে আমি আরও কিছু মানুষের খাওয়ার ব্যাবস্থা করতে পারছি। আর সব ভুলে এর জন্য আমার ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। বাকি আর কিছুই ভাবতে পারছি না।
মনে হচ্ছে না, এ বার শুটিং শুরু হোক?
সত্যি কথা বলতে কি, আমার একেবারেই মনে হচ্ছে না শুট শুরু হোক। কারণ, এখন যা পরিস্থিতি তাতে শুট আরম্ভ করলে জমায়েত বাড়বে, করোনা আতঙ্কে এতে মারাত্মক ফল হবে। আমি জানি শুট মানে শুধু অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক নয়। স্পটবয় থেকে মেকঅ্যাপ ম্যান, হেয়ার ড্রেসার, কাউকে বাদ দিয়ে শুট হবে না।
অফিসের কাজে ব্যস্ত সাংসদ মিমি
তাহলে এই যে মেকঅ্যাপ ম্যান, হেয়ার ড্রেসার ছাড়া শট হচ্ছে, এগুলোকে কী বলবেন?
এটা তো সাময়িক। আমার ইন্ডাস্ট্রি মানে যেমন অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজক, ঠিক তেমনই টেকনিশিয়ানরাও। আমি ওঁদের ছাড়া শুট করতে পারবই না।
অর্থাৎ আপনি চতুর্থ দফার লকডাউনে শুটের কথা ভাবছেন না?
আমি একজন অভিনেতা। ধরে নিলাম, সরকারি নির্দেশিকা মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শুট শুরু হল। কিন্তু আমি? বা আমার মতো অভিনেতা? তারা তো আর পিপিই কিট পরে শুট করবে না। তাহলে সারাক্ষণ মনের মধ্যে করোনার ভয় নিয়ে কাজ করতে হবে। আরে, এক গ্লাস জল খেতে চাইলেও তো যে জল আনছে সে করোনা নিয়ে আসছে কি না, এই প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরবে। তাহলে অভিনয়টা করব কখন?
কিন্তু এটাও তো মানবেন মানুষ ভাবছে, করোনায় নয়, কাজ না পেয়েই টিকে থাকতে পারবে না
অতিমারিতে সারা বিশ্বের মানুষ বিপর্যস্ত! সমস্ত ক্ষেত্র থেকে মানুষের চাকরি চলে যাচ্ছে।আপনি আমাদের কথা ভাবুন, কাজ থাকলে পয়সা আছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে, নয়তো নেই। আমরা তো সেই কবে থেকে বসে পড়েছি। আর আমার কাছেও যে কোটি কোটি টাকা আছে তা-ও তো না। চেষ্টা করেছি বিভিন্ন তহবিলে আর্থিক সাহায্য করার। কিন্তু কত পারব? আমার নিজস্ব মেডিক্যাল টিম আছে যারা লকডাউনে বাড়ি বাড়ি ওষুধ পৌঁছে দেয়। তাদেরকে দেখতে হয় আমায়। আমার অ্যাম্বুল্যান্স আছে। তার খরচ চালাতে হয়। কোনওভাবেই তো আর নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে না। সামনেটা পুরো ব্ল্যাঙ্ক!
আপনি এত পজিটিভ, দায়িত্বশীল হয়ে এ কথা বলছেন!
বললাম যে, আমি তো মানুষ! একদম একাই থাকি। আমার সঙ্গী বলতে চিকু আর ম্যাক্স। ভাগ্যিস ওরা ছিল! ওদের সঙ্গে এখন অনেকটা সময় কাটে। বাবা আছে, কিন্তু বাবা চুপচাপ। কাগজ, খবর নিয়ে থাকে। এখন মনে হয় যদি মা থাকত, উফ! গল্প করতে পারতাম অন্তত! বড্ড একা লাগছে...কেউ নেই। খুব জলপাইগুড়ির কথা মনে পড়ছে। ওখানে অনেকে আছে আমার। খুব মন কেমন করলে আমার দিদির ছোট্ট ন’মাসের ছানার সঙ্গে কথা বলি, ওকে দেখি। বাচ্চারা মন হাল্কা করে দেয়।
শুভশ্রীর বাচ্চা হবে। আপনার কেমন লাগছে?
দারুণ! আমি তো উইশ করেছি ওকে। শুভ বরাবর সংসার, সন্তান চেয়েছিল। ওর জীবনে এখন এটা সবচেয়ে ভাল মুহূর্ত। কোয়েলদির জন্য খুব আনন্দ হচ্ছে। কি সুন্দর! ইন্ডাস্ট্রির এই অভিনেতারা নিজেদের কেরিয়ার সামলে এখন মাতৃত্ব উপভোগ করছে। গর্ব হয় ওদের জন্য।
আপনি বলছেন মাঝে মাঝে একা লাগছে! এই লকডাউনে একটা প্রেম হতে পারত না?
(প্রচণ্ড হেসে) প্রেমের জন্য লকডাউন লাগে নাকি? এমনি সময়েই প্রেম হল না! তো লকডাউন! এ রকম পরিস্থিতিতে মানসিক ভাবে কোনও সম্মতি পাইনি।
প্রসঙ্গ বদলাই। বলিউড কিন্তু গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলেছে। এখন বড় স্টারদের ছবিও তো অনলাইনে মুক্তি পাবে। আপনার কী মত?
দেখুন, বলিউডের বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা। ছবি করার জন্য আমাদের মতো ওদের বাজেট নিয়ে এত ভাবতে হয় না। এ বার অমিতাভ বচ্চন বা বিদ্যা বালনের মতো স্টারদের ছবি যদি অনলাইনে রিলিজ হয় লোকে সেটা পয়সা দিয়ে দেখবে। এখন যেমন দেখছি সকলের মুখে ‘পাতাল লোক’-এর নাম। আমি অঙ্কুশ আর পরমের একটা সিরিজটার কথা শুনেছি। এই আইডিয়াটা বেশ ভাল লাগল। তবে বলিউডের সঙ্গে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির তুলনা করার কোনও মানে হয় না।
খেলায় মেতেছেন
এই লকডাউনের সময় আপনাকে কোনও সিরিজ বা শর্টে দেখা যাচ্ছে না?
দেখুন বাড়িতে বসে নিজে ক্যামেরা করে শুট আমার দ্বারা হবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনায় অরিন্দম শীলের পরিচালনায় করোনা সতর্কতা নিয়ে যে শর্টফিল্মটি হয়েছিল সেই একটা কাজ করতে গিয়েই অরিন্দমদাকে প্রচুর বিরক্ত করেছিলাম।
এখন কী করছেন তাহলে?
অপেক্ষা! বন্ধুদের সঙ্গে গল্প। বাবার সঙ্গে বিকেলে চা খাওয়া...
কোন বন্ধু?
নুসরতের সঙ্গে যেমন রোজ কথা হয়। কী রাঁধছে ও? কী করছে? কতক্ষণ ওয়ার্ক আউট করছে...এই সব। আবিরদা, পার্নোর সঙ্গেও কথা হয়।
লকডাউন কী শেখাল?
জলপাইগুড়ির সেই সাধারণ মেয়েকে শক্ত হতে শেখাল। ধৈর্য শেখাল। বলল, ‘তুমি বরাবর একা থাকতে চেয়েছিলে, নিজের কাজ করে বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলে নিজের সঙ্গে! এখন সেই সময়! এ ভাবেই থাকো!’
একটানা ঘুমোচ্ছেন?
দেরিতে ঘুম আসছে।
স্বপ্ন?
এলোমেলো। মাঝে একদিন দেখলাম একটা বিচে বসে আছি একা! আমার সমস্ত শরীরে সূর্যের তীব্র আলো ঝরে পড়ছে.