সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
এই করোনা-আতঙ্কের দিনে কী করছেন দাদা?
এখন তো টোটাল লকডাউন, ছুটিতে আছি। আর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করলাম। দেড় লক্ষ কিলো চাল দিয়েছি যাঁদের প্রয়োজন সে রকম মানুষদের। খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। এর পাশাপাশি দশ হাজার পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট) কিট দেব। বেলুড় মঠে দু’হাজার কিলো চাল দিলাম। ওঁরা প্রচুর গরিব মানুষকে খাওয়ান। ওঁদের মাধ্যমে ঠিক জায়গায় পৌঁছনো যায়। আমি তো নিজে পৌঁছতে পারি না সব জায়গায়, সে জন্য ‘ইস্কন’-এর সঙ্গে টাই আপ করেছি। আমার আর আমার ফাউন্ডেশনের (সৌরভ গাঙ্গুলি ফাউন্ডেশন) তরফ থেকে প্রতি দিন পাঁচ হাজার মানুষকে খাওয়াই। এই সবই করছি এখন, যতটা আমাদের পক্ষে সম্ভব। এ ভাবেই মানুষের পাশে আছি। সবাইকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। না হলে সিচুয়েশন থেকে বেরনো যাবে না। খুব টাফ সিচুয়েশন। আমি জীবনে কখনও এ রকম দেখিনি।
বাড়ির কাজও করছেন?
কিছুই করি না। ফ্যামিলির মানুষদের সঙ্গে প্রচুর গল্প করছি। আর অনলাইনে বসে বিসিসিআই-এর কাজ করছি। অনেক ইমেল করতে হয়, অনেক কন্ট্যাক্ট করতে হয়।
আপনার স্ত্রী ডোনা এবং কন্যা সানা বাড়ি সামলাচ্ছেন?
না, সানাকে কিছু করতে হয় না। ডোনা আছে, মা আছেন, বাড়িতে আরও মানুষরা আছেন, তাঁরাই বাড়ি সামলাচ্ছেন।
সারা দিন কী করছেন?
বাড়িতেই থাকি বাড়ির মানুষদের সঙ্গে। আর সুইমিং করি, এক্সারসাইজ করি যাতে শরীরটাকে রেজিস্ট্যান্ট করে তুলতে পারি। এক্সারসাইজ ইজ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। ডায়েট মেনটেন করি। গরম জল, মধু খাই। প্যারাসিটামল খেতে থাকি যাতে টেম্পারেচার না আসে। করোনার তো কোনও ওষুধ নেই, আপাতত সে ভাবে কোনও চিকিৎসা নেই। তাই যতটা ঠিক থাকা যায়।
বাইরে গেলে কী ভাবে সংস্পর্শ এড়ানোর চেষ্টা করছেন?
বেলুড় মঠ ছাড়া আর কোথাও যাইনি।
‘খেলাটেলা এখন মাথায় নেই কিছু ম্যাডাম, আগে সব কিছু ঠিক হোক’
‘দাদাগিরি’ প্রায় শেষ...
হ্যাঁ। শুধু ফাইনাল শুটিং বাকি। লকডাউনের জন্য আটকে আছে। কবে শুটিং করা সম্ভব হবে এখনও কেউ জানে না। ‘দাদাগিরি’ নিয়ে কথা বলার টাইম এখন নয়। পরে হবে। এখন লকডাউনে সোশ্যাল হেল্প ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট।
আপনি এক জন দুঃস্থকেও সাহায্য করেছেন?
হ্যাঁ। সংবাদপত্রে দেখলাম, উনি চা খেতে গিয়েছিলেন। ওঁর খুব অসুবিধা হচ্ছে। ওঁকে খাবার পাঠিয়েছি।
আর খেলা?
খেলাটেলা এখন মাথায় নেই কিছু ম্যাডাম (বিষণ্ণ হাসি)। আগে সব কিছু ঠিক হোক। আমি দেখছি না পৃথিবীর কোথাও কোনও খেলা হবে। সবই তো ক্যানসেল হয়ে গেল। উইম্বল্ডন ক্যানসেল, ইউরো ক্যানসেল... আমাদের আইপিএল... সবই তো বন্ধ হয়ে গেল (কণ্ঠে খানিক হতাশা)। ফুটবলও বন্ধ... ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ, ফ্রেঞ্চ ওপেন বন্ধ। কিচ্ছু হবে না এখন। ইউরোপের অবস্থা খুব খারাপ। ইংল্যান্ড-টিংল্যান্ড দেখছেন তো... রোজ পাঁচশো করে লোক মরছে। মানে চারপাশে আতঙ্ক।
লকডাউন যদি আরও দীর্ঘায়িত হয়...
এ ভাবেই গৃহবন্দি থাকতে হবে। আর তো কিছু করার নেই। কিন্তু একটু ভয় লাগে... পৃথিবীতে কোনও সময় দেখিনি যে ফ্লাইট নেই, ট্রেন নেই, কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না... প্রচণ্ড স্কেয়ারি। আশা করি বেশি দিন চলবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে।
কথা বলতে বলতে রাত গড়ালো প্রায় মধ্যরাতের দিকে। ফোন ছাড়ার আগে সৌরভ একাধিক বার বললেন, ‘সাবধানে থাকবেন।’ এই অসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সদিচ্ছা তাঁর কণ্ঠ থেকে চুঁইয়ে এল। শুরু হল শুভরাত। যেন তার ও পারেই অপেক্ষায় রয়েছে করোনা-বিহীন দিনগুলি।