মলিন পোশাক, মুখে হাসি, গলায় ঝুলছে মাস্ক— মহানন্দে গেয়ে চলেছেন যন্ত্রণার গান।
ভরা পেটে গান আর খালি পেটে গানে অনেক ফারাক। এই প্রবল সঙ্কটদিনে সেই ফারাকটাই যেন আমাদের কানে নতুন করে বিঁধিয়ে দিলেন নাম না জানা গায়ক। মলিন পোশাক, মুখে হাসি, গলায় ঝুলছে মাস্ক— মহানন্দে গেয়ে চলেছেন যন্ত্রণার গান। তাঁর বা তাঁদের জীবনের কঠিন বাস্তবতার গান। করোনা নয়, এই লকডাউনে পেটে দানা না পড়ার ভয়টাই যাঁদের বেশি। হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে গানটি। শুরু হয়েছে এই ভাবে—
“হরি বলো মন রসনা
দেশে আইল করোনা
তাই নে সবার ভাবনা
করি কী উপায়!
কাজ না করলে পরে
সংসার চলা দায়...”
ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে সব্জি-তরিতরকারি বেচেন কোনও এক বাজারে। নামধাম পাওয়া যায়নি এখনও। কিন্তু সে সব ছাড়াও যেন, ঠিক এই মুহূর্তের এক বড় জনসংখ্যার প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন মানুষটি। দেশে করোনা আতঙ্কের জেরে চলছে দীর্ঘ লকডাউন। এ ছাড়া আমাদের বাঁচার উপায় নেই। করোনাকে আটকাতে গেলে ঘরে আটকে থাকতেই হবে। কিন্তু ঘর থেকে একদিন কাজে না বেরোলে যাঁদের সংসার চলে না, যাঁদের বাজারে নিয়ে যাওয়া মাল বিক্রি না হলে ঘরে চাল ঢুকবে না— সে মানুষদের জীবন এখন আরও কঠিনতর পরিস্থিতিতে।
শুনে নিন গান
“আবার সরকার দেছে ঘোষণা
ঘরের বাইর কেউ হবেন না
পেট তো আর শোনে না
বিপদ পায়ে পায়ে!
কাজ না করলে পরে
সংসার চলা দায়...”
এমন মানুষদের গান আমাদের বাংলায় একেবারেই অপরিচিত নয়। বহু নিরক্ষর মানুষের গান এই বাংলায় কালোত্তীর্ণ হয়ে রয়েছে। পেশায় কৃষিজীবী, শ্রমজীবীরাও রয়েছেন এই তালিকায়। মাঠ থেকে সারাদিনের চাষবাস সেরে সন্ধেয় সরল-দক্ষ-সাবলীল-সুরেলা কণ্ঠে আসর মাতানো মানুষের সংখ্যা এখনও এই বাংলায় কম নয়। করোনা নিয়ে গান গেয়ে ওঠা আমাদের এই অচেনা শিল্পীও যে সুকণ্ঠী এ নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা, সময়ের যন্ত্রণার একজন প্রতিনিধি তিনি। এ তো তাঁর নিজের কথাই। বাইরে থেকে যন্ত্রণা দেখে গেয়ে ফেলা গান নয় তাঁর...
“আর গরিবেরই যত মরণ
তাদের জন্য আইন কানুন
দীন হীন সদানন্দের মরণ
বাড়িতেও ভাই!
কাজ না করলে পরে
সংসার চলা দায়...”
সদানন্দ কি এ গানের ভনিতা? জানি না আমরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই মানুষটির পরিচয় খোঁজার চেষ্টা করছেন। আমরাও করছি। কেউ খবর পেলে অবশ্যই জানাবেন...