ঠাকুরদা ওস্তাদ আবদুল লতিফ খান ছিলেন পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত সুরকার। বাবা ওস্তাদ ওয়াজিদ খান বিখ্যাত তবলাশিল্পী। পারিবারিক সুরের ধারার ব্যাটন তুলে নিয়েছিলেন দুই ভাই, সাজিদ ও ওয়াজিদ খান। তাঁদের মধ্যে জুটি ভেঙে বিদায় নিলেন ওয়াজিদ, মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই।
ওয়াজিদের জন্ম উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে। ১৯৭৭ সালের ১০ জুলাই। ছোট থেকেই শুরু হয় দুই ভাইয়ের গানবাজনার তালিম। নব্বইয়ের দশকের শেষে তাঁদের হাতেখড়ি হয় বলিউডে।
সুরকার হিসেবে প্রথম কাজ ১৯৯৮ সালে। সলমন খান-কাজল-আরবাজ খানের সিনেমা ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’-তে। প্রথম কাজেই বাজিমাত। জনপ্রিয় হয় ছবির গান। এর পর আর এই জুটিকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
পরের বছরই ফের সাফল্যের জোয়ার। এ বার আর ছবি নয়। সোনু নিগমের ভিডিয়ো অ্যালবাম ‘দিওয়ানা’। অ্যালবামের প্রতিটি গান জনপ্রিয় হয়।
এর পর তাঁদের সুরে অলকা যাজ্ঞিক-বাবুল সুপ্রিয়র ‘খোয়া খোয়া চাঁদ’ এবং রাহুল বৈদ্যর ‘তেরা ইন্তেজার’ মিউজিক অ্যালবামও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।
ছবি এবং ছবির বাইরে, দুই ধরনের গানেই সাফল্য পান সাজিদ-ওয়াজিদ জুটি। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তাঁদের নামের পাশে রয়েছে ‘হেলো ব্রাদার’, ‘মা তুঝে সালাম’, ‘ক্যায়া ইয়েহি প্যায়ার হ্যায়’, ‘তেরে নাম’, ‘মুঝসে শাদি করোগি’, ‘পার্টনার’, ‘গড তু সি গ্রেট হো’, ‘ওয়ান্টেড’, ‘দবাং’, ‘রাউডি রাঠৌর’, ‘তেরি মেরি কহানি’, ‘বুলেট রাজা’, ‘দবাং থ্রি’, ‘ড্যাডি’-সহ বহু ছবির নাম।
গীতিকার হিসেবেও ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিয়েছিলেন তাঁরা। ‘দবাং টু’-এর ‘ফেভিকল সে’, ‘ড্যাডি কুল’ ছবির ‘লাইফ লাইফ’, ‘নিঃশব্দ’ ছবির ‘টেক লাইট’ গানগুলি লিখে জনপ্রিয়তা পান দুই ভাই।
সুর দেওয়া, গান লেখার পাশাপাশি ওয়াজিদ গান গেয়েওছেন। ‘পার্টনার’ ছবির ‘সোনি দে নাখরে’, ‘হেলো’ ছবিতে ‘মিতওয়া রে’, ‘ওয়ান্টেড’-এর ‘জলওয়া’, ‘লভ মা’, ‘তো সে প্যায়ার করতে হ্যায়’, ‘দবাং’ ছবির ‘হুড় হুড় দবাং’, ‘এক থা টাইগার’-এ ‘মাশাল্লাহ’, ‘বুলেট রাজা’ ছবির টাইটেল সং এবং অন্যান্য গান, ‘জয় হো’ ছবির টাইটেল সং গেয়ে জনপ্রিয়তা পান ওয়াজিদ।
‘বিগ বস’-এর দু’টি সংস্করণের পাশাপাশি সাজিদ-ওয়াজিদকে টেলিভিশনের বিভিন্ন রিয়েলিটি শো-এর মেন্টর হিসেবেও দেখা গিয়েছে।
আইপিএল ফোর-এর টাইটেল সং-এর সুরও দিয়েছিলেন সাজিদ-ওয়াজিদ। ‘ধুম ধুম ধুম ধড়াকা’ সেই গানেও গলা মিলিয়েছিলেন ওয়াজিদ। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এই জুটির কাছে এসেছে অসংখ্য পুরস্কার।
২০০৩ সালে ইয়াসমিনকে বিয়ে করেছিলেন ওয়াজিদ। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসারের ঘেরাটোপে তিনি উপভোগ করতেন ভরপুর ঘরোয়া জীবন। সেলেব্রিটি জীবনের ব্যস্ততা ঢুকতে পারত না সেখানে।
কিন্তু জীবনে ঢুকে পড়েছিল কিডনির অসুখ। অসুস্থতার মাঝেও চালিয়ে যাচ্ছিলেন কাজ। শেষ দিকে তিনি কোভিড পজিটিভ বলেও ধরা পড়েছিল পরীক্ষায়। জীবনযুদ্ধে ওয়াজিদ হার মানলেন রবিবার। চিরতরে কেটে গেল জীবনের সুর। পরিজন, পুরস্কার, গুণমুগ্ধদের রেখে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে অনন্ত সুরলোকে পা রাখলেন ওয়াজিদ খান।