মঙ্গলবার লতা মঙ্গেশকারের একটি অপ্রকাশিত গান প্রকাশ পেল তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে, সৌজন্যে চলচ্চিত্র পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ।
কেমন হবে যদি হঠাৎ জানতে পারা যায় যে ফেলুদার একটি অপ্রকাশিত গল্প বা উপন্যাস এত দিন পরে প্রকাশিত হয়েছে? অথবা প্রকাশ পেতে চলেছে অমিতাভ বচ্চনের যৌবনের বিখ্যাত ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ অবতারের কোনও ছবি? সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে বিশ্বসাহিত্যের জগতে। প্রকাশ পেয়েছে বিখ্যাত ফরাসী লেখিকা ও দার্শনিক সিমন দি ব্যুভয়ারের অপ্রকাশিত লেখা ‘দ্য ইনসেপারেবল্স।’ অনেকটা একই রকম ঘটনা ঘটল ভারতের মাটিতেও। মঙ্গলবার লতা মঙ্গেশকারের একটি অপ্রকাশিত গান প্রকাশ পেল তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে। ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি ৯২ বছর বয়সে পা দিলেন। অজানা এই গান প্রকাশের সৌজন্যে চলচ্চিত্র পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ।
গানটি বিশালেরই একটি ছবির জন্য রেকর্ড হয়েছিল ৯০-এর দশকে। কিন্তু ছবিটি পরে মুক্তি পায়নি, সেই সঙ্গে গানটিও। গুলজারের লেখা ‘ঠিক নেহি লগতা’ গানটি এত দিন পরে অবশেষে মুক্তি পেল বিশালের সঙ্গীত সংস্থা ‘ভি বি মিউজিক’ ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিয়ো অ্যাপ ‘মোজ’-এর যৌথ প্রযোজনায়। গানটির ভিডিয়ো পরিচালনার দায়িত্বে স্বয়ং বিশাল নিজে। ৪ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের এই ভিডিয়োটি বিশাল সাজিয়েছেন কালজয়ী এই গায়িকারই যৌবনকালের বেশ কিছু ছবির কোলাজ দিয়ে। তার সঙ্গে আছে লতার জীবন সম্পর্কে অজানা তথ্যের খোঁজও— যেমন জন্মের পরে তাঁর নাম ছিল হেমা। পরে পিতা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকারের একটি নাটকের চরিত্র লতিকার নাম থেকে নতুন নাম হয় লতা। এমন সব তথ্য ও ছবি জুড়ে জুড়ে বিশাল তৈরি করেছেন গায়িকার জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
গুলজারের সঙ্গে বিশালের জুটি এত দিনে বেশ জনপ্রিয়। এই জুটির যাত্রা শুরু ১৯৯৬ সালে ‘মাচিস’ ছবি দিয়ে। তার পর থেকে ৯টি ছবিতে তাঁরা কাজ করেছেন এক সঙ্গে। একটি সাংবাদিক বৈঠক করে বিশাল জানিয়েছেন এই গানটি রেকর্ড করা হয় ‘মাচিস’-এরও আগে। তা হলে এত দিন কেন লাগল মুক্তি পেতে? একটি সংবাদ-সংস্থাকে ‘মকবুল’ ও ‘কামিনে’-র পরিচালক জানিয়েছেন, ‘মাচিস’ ছবির কাজের সময়েই তিনি অন্য একটি ছবির কাজে এই গানটি রেকর্ড করেন। কিন্তু সেই ছবিটি আর মুক্তি না পাওয়ায় গানটিও হারিয়ে যায়। বিশালের কথায়, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে আমরা ভেবেছিলাম যে ছবিটির কাজ আবার শুরু হবে, কিন্তু ১০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে ছবিটি আর তৈরি হবে না।’’
বাকি গল্প অনেকটা রূপকথার মতো। তখন ছিল টেপের যুগ। যে অডিয়ো টেপে লতার গান রেকর্ড করা হয়, সেটি যত্ন ও তত্ত্বাবধানের অভাবে কোনও ভাবে স্থানচ্যূত হয়ে যায়। ১০-১২ বছর আগেও এক বার বিশাল আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন গানটি পুনরুদ্ধার করার, কিন্তু সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত শিকে ছেঁড়ে ২-৩ বছর আগে। যে স্টুডিয়োয় গানটি রেকর্ড করা সেটি, বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে সেখান থেকে পরিচালক তথা সুরকার দৈবাৎ একটি ফোন পান। ভরদ্বাজ জানিয়েছেন, স্টুডিয়ো থেকে হঠাৎ এক দিন ফোন করে তাঁকে বলা হয়, ‘আপনার নামের একটি টেপ পাওয়া গিয়েছে। যদি আপনি নিতে চান, তা হলে নিয়ে নিন, না হলে আমরা ফেলে দেব।’
বেশ কিছু গানের মধ্যে সেই টেপে ছিল ‘ঠিক নেহি লগতা’ গানটি। এই গানটি থেকে লতার গলাটুকু নিয়ে যন্ত্রানুষঙ্গ ও বাকি সঙ্গীত-সজ্জার অদল-বদল ঘটিয়ে, সমসাময়িক একটি রূপ দিয়েছেন সুরকার। গীতিকার গুলজার অবশ্য বলছেন গানটির কথার আবেদন এখনও যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক, কারণ এটি সম্পর্কের টানাপো়ড়েন নিয়ে লেখা।